টাকার দাবি, বৃদ্ধকে কুকুরের শেকল দিয়ে বেঁধে রাখল দুই ইঞ্জিনিয়ার ছেলে
পুলিশে চাকরি করতেন ভি বেঙ্কটেশ। কে জি নগর থানায় অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন তিনি। কিছুদিন আগে অবসর নেন। পিএফ, গ্র্যাচুইটি ও অন্যান্য বাবদ ২০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। অভিযোগ, অবসরের পর থেকেই স্ত্রী নাগরত্না এবং দুই ছেলে চেতন ও রঞ্জন অত্যাচার শুরু করে। তারা ২০ লক্ষ টাকা চায়। কিন্তু বৃদ্ধের যুক্তি ছিল, ওই টাকাটা তাঁর শেষ বয়সের সম্বল। ছেলেরা দু'জনই মাসে মোটা টাকা পায়। ঘরভাড়া বাবদ টাকাটা স্ত্রী কেড়ে নেয়। তাই অবসরকালে প্রাপ্ত টাকা তিনি হাতছাড়া করতে চাননি।
গত ১১ অগস্ট রাতে খাওয়াদাওয়ার পর উক্ত ইস্যুতে আর এক দফা বচসা বেধে যায়। অভিযোগ, দুই ছেলে মায়ের কথায় প্রথমে বৃদ্ধ বাবাকে মারধর করে। তাঁকে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি মারা হয়। যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকলেও রেহাই মেলেনি। বাড়িতে যে শেকল দিয়ে কুকুর বেঁধে রাখা হয়, সেটা দিয়ে বৃদ্ধকে খাটের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। ২৮ অগস্ট পর্যন্ত এ ভাবে ফেলে রাখা হয় তাঁকে। একবেলা খাবার দেওয়া হত। তাও অল্প। একটি বেডপ্যান দেওয়া হয়েছিল। সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ করতেন। জল চাইলে জলও মিলত না। জুটত গালাগাল। নিজের স্ত্রী, ছেলেদের আচরণে দু'চোখ বেয়ে নেমে আসত জলের ধারা।
"যখন ঘরে ঢুকি, গন্ধে নাড়ি উল্টে আসছিল। কীভাবে বেঁচে রইলেন, সেটাই আশ্চর্য"
এদিকে, দাদাকে দেখতে না পেয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে বাড়িতে আসে ভাই ভি রামচন্দ্র। বউদি, দুই ভাইপোর কথায় অসঙ্গতি থাকায় তিনি বাড়ির ভিতরে ঢুকতে যান। তখন তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে সটান হাজির হন গিরিনগর থানায়। দাদা এক সময় পুলিশে কাজ করায় থানার পুলিশকর্মীরা তাঁকে চিনতেন। সব শুনে পুলিশ আসে বাড়িতে। তল্লাশি চালিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ মেঝেতে শেকল বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করার পাশাপাশি তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা হয় স্ত্রী নাগরত্না ও ছেলে চেতনকে। আর এক 'গুণধর' ছেলে রঞ্জন পালিয়ে গিয়েছে। তার খোঁজ চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বড় ছেলে চেতন এইচপি কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার। মহীশূর রোডে অফিস। এম টেক পাশ চেতন ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কানাডায় ছিল। বিপুল অর্থের মালিক। ছোটো ছেলে রঞ্জন ইনফোসিসে সফটঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। লাখ খানেক টাকা বেতন পায় মাসে। তবুও বাবার শেষ বয়সের সম্বলটুকু কেড়ে নিতে অমানুষ হয়ে উঠেছিল দু'জন।
গিরিনগর থানার এক অফিসার জানান, "আমরা যখন ঘরে ঢুকি, গন্ধে যেন নাড়ি উল্টে আসছিল। অমন পরিবেশে কীভাবে উনি ১৭ দিন বেঁচে রইলেন, এটাই আশ্চর্যের ব্যাপার।"