সংসদে ধর্মীয় স্লোগান কেন? আগামী দিনের পক্ষে এ এক বড় বিপদের সঙ্কেত
সপ্তদশ লোকসভার শুরুতেই সংসদে দেখা দিল স্লোগান-যুদ্ধ। শপথ পাঠের সময়ে বিজেপি এবং অন্যান্য দলের সাংসদরা "জয় শ্রীরাম", "জয় বাংলা", "জয় কালী" ইত্যাদি নানা স্লোগানে ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদকে মুখরিত
সপ্তদশ লোকসভার শুরুতেই সংসদে দেখা দিল স্লোগান-যুদ্ধ। শপথ পাঠের সময়ে বিজেপি এবং অন্যান্য দলের সাংসদরা "জয় শ্রীরাম", "জয় বাংলা", "জয় কালী" ইত্যাদি নানা স্লোগানে ভারতীয় গণতন্ত্রের পীঠস্থান সংসদকে মুখরিত করে তুললেন। অথচ শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আহ্বান করেছিলেন সমস্ত দলগুলিকে যাতে তারা সংখ্যার বিচারে ব্যবধান না বাড়ায় এবং সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের হিতে কাজ করে। কিন্তু খোদ প্রধানমন্ত্রীর দলের নবনির্বাচিত সাংসদরা বুঝিয়ে দিলেন শুরুতেই যে তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের মোহ ত্যাগ করতে রাজি নন। তাই বিরোধী সাংসদরা শপথ নিতে এলেই তাঁদের প্রতি উড়ে আসতে থাকে নানা হিন্দুত্ববাদী স্লোগান। এমনকি "মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে" স্লোগানও শোনা যায়।
বিরোধীরা মুখ বুঝে থাকবেন না, স্বভাবতই। তৃণমূল কংগ্রেসের নানা সাংসদও পাল্টা "কালী","জয় বাংলা" ইত্যাদি বলতে শুরু করলেন। সমাজবাদী পার্টির এক মুসলমান সাংসদ তো বন্দে মাতরম বলতেও গররাজি ছিলেন; বলেন তা ইসলামবিরোধী। হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়েসিও "আল্লাহু আকবর" স্তুতি দেন।
সাংসদরা শুধু ধর্মীয় স্লোগানেই মাতলেন; কোনও ইতিবাচক কথাই বললেন না
ভারতের বহুত্ববাদ নতুন কথা নয়। কিন্তু সেই ব্যাপারটি লোকসভার শুরুতেই সংসদে যেভাবে প্রতিফলিত হল, তা মোটেই কাম্য নয়। সাংসদদের যদি দেখা যেত কোনও আশু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে বার্তালাপ করতে (বিহারের শিশুমৃত্যু নিয়ে কি তারা কিছু বলেছেন) তাহলেও একটি ইতিবাচক বার্তা যেত। কিন্তু নব্যনির্বাচিত সাংসদরা যেভাবে ধর্মীয় স্লোগান নিয়ে মাতলেন সংসদে তাতে মনে উদ্বেগের বাতাবরণের ব্যতীত আর কিছু তৈরী হয় না। বহুত্ববাদের প্রতি এমন অনীহা এক বিরাট বড় বিপদ। সংখ্যাগরিষ্ঠ যখন ক্ষমতার নেশায় বুঁদ হয়ে সংখ্যালঘুর প্রতি বিন্দুমাত্র কার্পণ্য দেখাতে পারে না, তখন তা গণতন্ত্রের পক্ষে এক অশনি সঙ্কেত বয়ে আনে।