পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন ডোজ পাচ্ছে না রাজ্য, কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল মহারাষ্ট্র সরকারের
পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন ডোজ পাচ্ছে না রাজ্য
দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভের মাঝেই কোভিড ভ্যাকসিন ডোজের ঘাটতি নিয়ে কেন্দ্র–মহারাষ্ট্র সরকারের সংঘাত তুঙ্গে। এরই মাঝে বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী রাজেশ টোপে কেন্দ্র সরকারের দিকে আঙুল তুলে অভিযোগ করেছেন যে রাজ্যে তারা কম ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করেছে।
কেন্দ্র বৈষম্য করছে মহারাষ্ট্রের সঙ্গে
দেশের মধ্যে যেখানে সর্বাধিক করোনা কেস দেখা দিয়েছে সেই রাজ্যের সঙ্গে বৈষম্য করার অভিযোগ তোলা হয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। রাজেশ টোপে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রে যেখানে ৫০ হাজারের বেশি সক্রিয় করোনা কেস রয়েছে, সেখানে কেন্দ্র মাত্র ৭.৫ লক্ষ ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহ করেছে। অথচ উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাত এর চেয়ে বেশি ডোজ পেয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, 'কেন্দ্রের সম্প্রতি প্রকাশিত ভ্যাকসিন সংক্রান্ত নির্দেশে মহারাষ্ট্রকে ৭.৫ লক্ষ ডোজ দেওয়া হযেছে। যেখানে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাত মহারাষ্ট্রের চেয়ে বেশি মাত্রায় ভ্যাকসিন ডোজ পেয়েছে। এটার পরই আমি তৎক্ষণাত ডঃ হর্ষ বর্ধনের সঙ্গে কথা বলি, এমনকী শরদ পাওয়ারও কথা বলেন। আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়েছে বলে আমি প্রশ্ন ওঠাই। আমাদের সর্বোচ্চ সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছে এবং পজিটিভ হারের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখি এবং ১২ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে করোনায় মৃত্যু হচ্ছে রোজ। কেন আমাদের এত কম ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হচ্ছে।'
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ
টোপে আরও জানিয়েছেন যে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্র যে শিথিলতার অভিযোগ করেছে তা অত্যন্ত অন্যায়। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্র ৭০ শতাংশ আরটি-পিসিআর টেস্ট এবং ৩০ শতাংশ অ্যান্টিজেন টেস্ট করাচ্ছে, যা উত্তরপ্রদেশের চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত বলে জানিয়েছেন তিনি। রাজেশ টোপে এও জানান যে রাজ্যে টেস্টিং ল্যাবের সংখ্যাও বৃদ্ধি হয়েছে। মহারাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ভ্যাকসিন ডোজ অন্য রাজ্যকে দেওয়ার অভিযোগ তুলে টোপে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে জানিয়েছেন, প্রত্যেক সপ্তাহে বাণিজ্য রাজধানীতে কমপক্ষে ৪০ লক্ষ করে ভ্যাকসিন ডোজের প্রয়োজন। তিনি বলেন, 'কেন্দ্রের যতটা সহায়তা করা প্রয়োজন ততটা সাহায্য করছে না কেন্দ্র। মহারাষ্ট্রের জনসংখ্যার চেয়ে অর্ধেক জনসংখ্যা গুজরাতে, কিন্তু তাও তারা এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ডোজ পেয়েছে এবং আমরা ১.০৪ লক্ষ ভ্যাকসিন ডোজ পেয়েছি।'
পর্যাপ্ত নয় ভ্যাকসিন ডোজ
রাজেশ টোপে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে বলেন, 'আমি শুধু এটুকু জানাতে চাই যে কেন্দ্র ভ্যাকসিন ডোজ বাড়িয়ে ৭ থেকে ১৭ লক্ষ করে দিয়েছে, কিন্তু এই পরিমাণটাও অনেক কম। আমাদের ৪০ লক্ষ করে ডোজ প্রয়োজন প্রত্যেক সপ্তাহে এবং ১৭ লক্ষ ডোজ পর্যাপ্ত নয়।' রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মুম্বইয়ের ২৬টির বেশি টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ থাকার কারণে কেন্দ্রকে দোষ দিয়েছেন কারণ তারা সরকারের কাছ থেকে আরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। রাজেশ টোপে বলেন, 'ভ্যাকসিন ডোজের ঘাটতির জন্য আমরা মানুষকে ফিরিয়ে দিয়েছি। আমি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবগত করেছি।' প্রসঙ্গত, বুধবার রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় কোভিড-১৯ টিকাকরণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। টোপে জানান যে ভ্যাকসিন ডোজ আর মাত্র তিনদিন স্থায়ী হবে।
হর্ষ বর্ধনের সঙ্গে কথা বলেছেন শরদ পাওয়ার
যদিও এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার জানিয়েছেন যে কেন্দ্র মহারাষ্ট্রকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছে, যেখানে কোভিড পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। পাওয়ার জানিয়েছেন যে তিনি বুধবারই হর্ষ বর্ধনের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য রাজ্য যাতে কোভিড মোকাবিলা করতে পারে তার জন্য সহায়তার করার আশ্বাস দিয়েছে।
বিজেপির প্রতিক্রিয়া
পাওয়ারের এই মন্তব্যের ওপর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রাজ্যের বিজেপি প্রধান চন্দ্রকান্ত পাটিল জানান এনসিপি সুপ্রিমোর বিবৃতিতে কোনও রাজনৈতিক অর্থ রয়েছে কিনা তিনি তা জানেন না তবে তাঁর বিবৃতিতে এটা স্পষ্ট যে কেন্দ্র সব ধরনের সম্ভাব্য সহায়তা করছে। পাটিল প্রশ্ন তুলেছেন যে সরকার এক কোটির ওপর ডোজ দিয়েছে রাজ্যকে কিন্তু বহু ডোজ নষ্ট হয়েছে কেন? যদিও মহারাষ্ট্রে ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে তা মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী।
বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন প্রথমেই মহারাষ্ট্র মতো রাজ্যে ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে এটা মানতে চাননি। বরং তিনি জানিয়েছেন কিছু কিছু রাজ্যের সরকার নিজেদের ব্যর্থতার ওপর থেকে নজর সরাতে এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এ ধরনের গুজব রটাচ্ছে।
কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাতের মাঝেই পাঁচ লক্ষ ভ্যাকসিন ডোজ নষ্টের অভিযোগ উঠল মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে