মধ্যমগ্রাম ধর্ষণকাণ্ডে কেন হস্তক্ষেপ উচিত হয়নি নীতীশ কুমারের?
ক্ষতিপূরণ নাকি ভোটের বালাই?
প্রশ্ন হল, নীতীশ কুমার কী উদাহরণ স্থাপন করলেন? নিশ্চিতভাবে ইতিবাচক নয়। প্রথমত, ওই নাবালিকার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলে 'সস্তা রাজনীতি' করছেন নীতীশ কুমার। যেহেতু এখন রাজনীতির জটিল আবর্তে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে তাঁর, সেহেতু এই চমক দরকার ছিল।
মেয়েটির শিকড় ছিল বিহারের সমস্তিপুরে। এই এলাকায় পিছড়ে বর্গ এবং মহাদলিতদের বাস। বোঝা যাচ্ছে, এখানে জাতপাতের রাজনীতির অঙ্কটা জটিল। লোকসভা ভোট যখন শিয়রে, তখন এই ধর্ষণের ইস্যু নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে থাকাটা অস্বাভাবিক। কিন্তু, ভেবে দেখতে হবে যে, এহেন পদক্ষেপ চিন্তিত নীতীশ কুমারের ভবিষ্যৎকে কতটা সুরক্ষিত করবে? 'বিহারের মেয়ে'-কে নিয়ে এই 'সহানুভূতি' কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমালোচিতই হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় অশনিসংকেত
নীতীশ কুমার মূর্খামির আরও একটা নজির স্থাপন করেছেন। তা হল, তদন্ত সহায়তা করার প্রস্তাব। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে তিনি যে শুধু খাটো করেছেন তা-ই নয়, বরং দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় একটা বাজে নজিরও স্থাপন করেছেন। কোনও রাজ্যে বসবাসকারীদের দায়িত্ব নেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার, তা তারা ভূমিপুত্র হোক বা বাইরের লোক।
কোনও রাজ্য যদি বহিরাগতদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিরুদ্ধে যথাযথ পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানাতে হবে। ওই রাজ্যে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে গণধর্ষণের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গে একজন তদন্তকারী অফিসার পাঠিয়ে বিহার সরকার বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ওই রাজ্যকে বিশ্বাস করে না। এটা খুব খারাপ নজির। এমনকী, যথাযথ পদ্ধতি ছাড়া কোনও রাজ্যের কাজে কেন্দ্রীয় সরকারও হস্তক্ষেপ করে না। কারণ, তা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের পরিপন্থী।
রাজ্যগুলি বর্তমানে প্রত্যয়ী, কিন্তু আগ্রাসী হওয়া উচিত কি?
আজকাল কিছু আঞ্চলিক নেতা পারস্পরিক শ্রদ্ধার আদর্শকে পাত্তা দেন না। তাঁরা অন্য রাজ্যের সরকার, এমনকী কেন্দ্রকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। ফলে ভারতীয় ঐক্যে বিপন্নতা দেখা দিচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাডু ও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীরা কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছেন। কখনও কখনও দেখা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীরা রাজনীতিক বিষয়কে ঘিরে চুলোচুলি করেছেন।
এটাই বোধ হয় রাজনীতিক ও আর্থনীতিকভাবে ভারতীয় গণতন্ত্রের শিকড় ছড়ানোর ফল। এখন রাজ্যগুলি অনেক প্রত্যয়ী। কী পদ্ধতিতে 'প্রত্যয়ী গণতন্ত্র' শিকড় ছড়িয়ে তৃণমূল স্তরে সেঁধিয়ে যাচ্ছে, সেটা চিন্তার আসল কারণ নয়। চিন্তার আসল কারণ হল, প্রত্যয়ী গণতন্ত্র আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের কাঠামোকে নড়বড়ে করে দেবে না তো!