১৫ই অগাস্টেই কেন স্বাধীনতা পেল ভারত? ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে চলুন চোখ রাখি ইতিহাসের পাতায়
১৫ই অগাস্টেই কেন স্বাধীনতা পেল ভারত? ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসে চলুন চোখ রাখি ইতিহাসের পাতায়
৭৪তম স্বাধীনতা দিবস পালন ভারতের। ১৫ই অগাস্টের ঘন নীল আকাশে ফের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে স্বাধীনতা আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের তেরঙা নিশান। গেরুয়া, সাদা আর সবুজের এক চাঁদোয়ায় ঢাকবে প্রায় ১৩৫ কোটি মানুষের মন। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য কেন ১৫ই অগাস্টকে বাছা হয়েছিল। আজ তা নিয়েই খানিক আলোচনা করা যাক।
১৯৪৭ সালের ১৬ই অগাস্ট লালকেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করেন নেহেরু
এদিকে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের দিন ভারতের যিনি প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তিনি দিল্লির লাল কেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু সূত্রের খবর, ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট কিন্তু এই পতাকা তোলা হয়নি। লোকসভা সচিবালয়ের একটি গবেষণা পত্র অনুসারে, নেহেরু ১৯৪৭ সালের ১৬ই অগাস্ট লালকেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক দিনেও কেন এই বদল ?
পূর্ণ স্বরাজের দাবির সঙ্গেই ২৬শে জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবসের ডাক কংগ্রেসের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভারত-পাকিস্তানের সীমানাও ওই সালের ১৫ অগাস্ট স্থির হয়নি। পরবর্তীতে ১৭ আগস্ট র্যাডক্লিফ লাইনের ঘোষণার সঙ্গে এটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এদিকে এর আগে ১৯২৯ সালে জওহরলাল নেহরু কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর আহ্বানে ২৬ জানুয়ারিকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণার কথা ছিল। ১৯৩০ সাল থেকে এ দিনটিকেই কংগ্রেস স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করত যতদিন না ভারত স্বাধীনতা পায়। কিন্তু তাহলে ১৫ই অগাস্ট কীভাবে ভারতের স্বাধীনতা দিবস হল?
হস্তান্তরের বিষয়ে কি বলা হয়েছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ক্ষমতা হস্তান্তরের যে আদেশপত্র দিয়েছিল তাতে বলা ছিল এই কাজ শেষ করতে হবে ৩০ জুন, ১৯৪৮-এর মধ্যে। কিন্তু পরবর্তীতে মুসলিম লিগ এই আদেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় এবং সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা দেশের দাবিও করে। যদিও এই ক্ষেত্রে অনেক ইতিহাসবিদই বলেন ইংরেজরা যদি ১৯৪৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করত, তাহলে হস্তান্তর করার মত কোনও ক্ষমতাই তাদের হাতে থাকত না। ফলে মাউন্টব্যাটেন সে কাজ এগিয়ে এনেছিলেন ১৯৪৭ সালের অগাস্টে।
১৪ই অগাস্ট ব্রিটিশদের হাতে দেশভাগের সাক্ষী থাকে অবিভক্ত ভারতের মানুষ
পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালের ৪ঠা জুলাই ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্সে ভারতীয় স্বাধীনতা বিল পেশ করা হয়। এই বিলেই ভারত ভাগ ও পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন। বিলটি ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই গৃহীত হয় এবং ১৪ই অগাস্ট দেশ ভাগের পর ১৪-১৫ অগাস্ট মধ্যরাতে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে পাকাপাকি স্বাধীনতা পায় ভারত। সেই অনুসারে প্রতিবছর ১৪ই অগাস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। আর ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ই অগাস্ট।
উঠে আসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পেনর প্রসঙ্গও
যদিও এই প্রসঙ্গে অন্য আর একটি যুক্তিও বারংবার উঠে আসে। অনেকে বলেন এতদিন থাকতে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৫ই অগস্টকে ভারতের স্বাধীনতার দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন কারণ, ওই দিনই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জাপান আত্মসমর্পণ করেছিল। সেই সালটা ছিল ১৯৪৫। ইতিহাস বলছে, লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে যখন ভারতের স্বাধীনতার দিন ঠিক করতে বলা হয় তখন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের ঘরে বসে রেডিও মারফৎ শোনা জাপানের আত্মসমর্পণের দিনটার কথাই নাকি সবার প্রথম তাঁর মাথায় আসে। এরপর ১৯৪৭ সালের ৪ঠা জুলাই, মাউন্টব্যাটেন ১৫ই অগস্ট দিনটির কথা ব্রিটিশ হাউস অব কমন্সে পেশ করেন।
স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লায় উড়বে তেরঙ্গা, জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আগে জেনে নিন কিছু অজানা তথ্য