শত্রুর-শত্রু মিত্র! মোদীকে গদি চূত্য করতে কি এই রণনীতিই নেবেন মমতা?
শত্রুর-শত্রু মিত্র! মোদীকে গদি চূত্য করতে কি এই রণনীতিই নেবেন মমতা?
একবার দিল্লি গিয়েই কী সব স্ট্রিমলাইন হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফায় দফায় একাধিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক ঘিরে নানা সমীকরণ ৈতরি করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী নিজে কী ভাবছেন। তিনি কোন কৌশলে এগোতে চাইছেন। কংগ্রেসকে ছাপিয়ে কী তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব দিতে পারবে বিরোধী ঐক্যের জোটে? সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।
দিল্লি সফরে মমতা
বঙ্গ জয়ের পর আরও বড় ক্ষেত্রে লড়াইয়ে নামতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভায় সদস্য সংখ্যা দেখলে তৃণমূলের আধিক্য কোনও অংশে কম। এবার তাই বঙ্গের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর ক্ষেত্রে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতে মরিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। বঙ্গে গেরুয়া ঝড় রুখে দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব বাড়িয়ে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রণকৌশলে বিজেপির ভাঁড়ে মা ভবানী দশা তৈরি হয়েছে বঙ্গে সেটায় বেশ উল্লসিত অবিজেপি দলগুলি। স্বাভাবিক ভাবেই তৃণমূল সুপ্রিমোর গুরুত্ব বেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে।
বিরোধী ঐক্যে জোর
গতকাল দিল্লিতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার বৈঠক ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বৈঠকের পর তেমন কংক্রিট কোনও ফলাফল সামনে এসেছে বলে মনে হয় না। তারপরেই তিনি বৈঠক করেন আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে। সেখানেও একই ইস্যুতে আলোচনা। মমতার জয়কে হঠাৎ করেই গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষ করে এনসিপি, কংগ্রেস,আপ, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি। লালু প্রসাদ যাদবের সঙ্গেও কথা বলেছেন মমতা।
কংগ্রেসকে ছাপিয়ে যেতে পারবেন কি মমতা
জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী ঐক্যের নেতৃত্বের প্রশ্ন উঠলেই কংগ্রেস লাভবান হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেসকেই সকলে নেতৃত্বের জায়গা ছেড়ে দিয়েছে। এবার কিন্তু বিষয়টি একটু অন্যরকম।২০১৯-র লোকসভা ভোটে প্রায় ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। নিজেদের একাধিক কেন্দ্রে হেরেছেন কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতারা। রাহুল গান্ধী দুটি জায়গায় না দাঁড়ালে হয়তো এবার সংসদে জায়গা পেতেন। এমনই দুর্দশা তৈরি হয়েছে। তার উপরে কংগ্রেসের একাধিক হেভিওয়েট নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। শচিন পাইলট ক্ষুব্ধ দলের প্রতি।। অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকট আকার নিয়েছে। পাঞ্জাবে সিধু বনাম অমরিন্দরের চাপা সংঘাত মাঝে মাঝেই প্রকাশ্যে এসে পড়ছে। সভাপতি নির্বাচনেও সংকট তৈরি হয়েেছ। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী ঐক্যের নেতৃত্বের হাল মমতা অনায়াসেই ধরতে পারেন। সেপথ সুগম হয়ে রয়েছে।
শত্রুর-শত্রু মিত্র
একাধিক অবিজেপি দল মমতার ডাকে সাড়া দিলেও বেশ কয়েকটি দল রয়েছে তাঁরা মধ্যপন্থা নিয়েছেন। অর্থাৎ মোদী-মমতা দুয়ের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। সেই তালিকায় রয়েছে নবীন পট্টনায়কের বিজেডি, বিহারের নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং জগন্মোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। এরা সকলেই মধ্যপন্থায় কাজ করছেন। অর্থাৎ ধরি মাছ না ছুঁই পানি-নীতিতে চলছেন। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী এদের একজোট করতে কীকরেন সেটা এখন বড় প্রশ্ন। মমতা নিজে বলেছেন তাঁর সঙ্গে নবীন পট্টনায়কের সুসম্পর্ক রয়েছে। সুসম্পর্ক রয়েছে জগন্মোহন রেড্ডিরও। তাঁরা সরাসরি বিজেপিকে সমর্থন না করলেও বিজেপির পাশে থেকেছে একাধিক ইস্যুতে। নীতীশ কুমার অবশ্য বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েই চলছেন। তাই নীতীশের বিষয়নি নিয়ে মমতা বলেছেন বিজেপির হাত যদি জেডিইউ ছাড়ে তবে তাঁর বিষয়টি েভবে দেখা হবে। তবে বাকি দুই জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আশাবাদী মমতা। তিনি বলেছেন আজ না হলে কাল তাঁরা বিরোধী ঐক্যে সামিল হবেন।
লক্ষ্য দিল্লি
দিল্লিই আসল টার্গেট। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন মমতা। বাংলার বাইরে একাধিক রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস খাতা খুললেও বিজেপির মতো সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে তেমন দাপট এখনও দেখাতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। কাজেই গোটা দেশে লড়তে হলে বিরোধী ঐক্যই ভরসা মমতার। সেকারণেই দিল্লি গিয়ে ২০২৪-র কাজ কিছুটা এগিয়ে রাখলেন তিনি। মমতা ইঙ্গিত দিয়েছেন সংসদ অধিবেশনের পর আরও বেশ কছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস প্রকাশ্যে আসবে। সেগুলি ধাপে ধাপে একসঙ্গে বলে ঠিক করবেন তিনি। তাঁর দাবি বিজেপি একক ভাবে সর্বহত দল হলেও বিরোধীরা একজোট হলে বিজেপিকে তুড়িতে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।