ঠিক কী কারণে মসজিদের জন্য বিকল্প পাঁচ একর জমি, কী বলছে সুপ্রিমকোর্ট?
আদালতের ১০৪৫ পাতার রায়তে বলা হয়, "১৯৪৯ সালের ২২ বা ২৩ ডিসেম্বর মুসলমানদের মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা না করতে পারার কারণে বিতারিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরে সমজিদটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়।"
শনিবার রায় ঘোষণা করা হয় শতাব্দী প্রাচীণ অযোধ্যা বিবাদের। সুপ্রিমকোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ে বিবাদের মূলে থাকা ২.৭৭ একর জমিটি হিন্দুদের দেওয়ার কথা বলা হয়। এবং তা তৈরির জন্য তিনমাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারকে ট্রাস্ট গঠন করতে হবে বলেও জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ এও জানিয়ে দেয় যে, মসজিদ নির্মাণের জন্য অযোধ্যাতেই বিকল্প ৫ একর জমি দিতে হবে মুসলিমদের।
কিন্তু আদালতের রায়তে মুসলিমদের বিকল্প জায়গা দেওয়ার কথা কেন বলা হল? আদালতের ১০৪৫ পাতার রায়তে বলা হয়, "১৯৪৯ সালের ২২ বা ২৩ ডিসেম্বর মুসলমানদের মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা না করতে পারার কারণে বিতারিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরে সমজিদটি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। যদি এক্ষেত্রে মুসলিমদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে তা অনুচিত হবে।"
পাশপাশি আদালত জানিয়ে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট যেভাবে তিনটি ভাগে ওই জমি ভাগ করেছিল তা অনৈতিক ছিল। সেই বিষয়ে শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়, "জনসাধারণের মধ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যে সমাধান করেছিল হাইকোর্টে তা বাস্তবে সম্ভব নয়। ওইভাবে জমি ভাগ করলে কখনই তা সব পক্ষের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না বা স্থায়ীভাবে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব হবে না।"
এছাড়া খুব উল্লেখযোগ্য ভাবে সুপ্রিমকোর্ট শনিবার জানিয়ে দেয় যে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা গুরুতর আইন লঙ্ঘন ছিল। আদালতের রায়ে বলা বয়, ৪৫০ বছর আগে নির্মিত মসজিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল মুসলিম সম্প্রদায়কে। সর্বসাধারণের ওই জায়গায় ওই ভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়াটা বেআইনি ছিল।
তবে মসজিদ ভাঙা বেআইনি বললেও সুপ্রিমকোর্ট জানায়, জমির উপর মালিকানার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিমদের দেওয়া প্রমাণের চেয়ে আরও ভালো প্রমাণ দিয়েছিল হিন্দু পক্ষ। জমির মালিকানা কখনও বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে দেওয়া যায় না। মালিকানা স্থির করতে দরকার প্রমাণ। তাই বিতর্কিত জমি মন্দিরের জন্য হস্তান্তর করা হচ্ছে।
এদিকে আদালত ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বললেও, মসজিদের জন্য বিকল্প পাঁচ একর জমির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ওয়াকফ বোর্ড পক্ষের আইনজীবী জাফারিয়াব জিলানি ও হায়দ্রাবাদের সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। শীর্ষ আদালতের এই রায়ের প্রেক্ষিতে ওয়াইসি বলেন, "সুপ্রিমকোর্ট নিঃসন্দেহে সবার উপরে তবে শীর্ষ আদালত অকাট্য নয়।"