বিহারে কোন সামাজিক সমীকরণকে টার্গেট করে ভোটের ময়দানে বিজেপি-জেডিইউ এনডিএ জোট?
বিহারে বিজেপি-ডেডিইউ এনডিএ জোটের সমীকরণ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই চলেছে বিশাল লুকোচুরি। তবে শেষ পর্যন্ত সেই গোপনীয় সংখ্যা প্রকাশও পেয়েছে। তবে তাতেও এখনও এই জোটের সামাজিক সমীকরণ স্পষ্ট নয়। অর্থাৎ কোন সামাজিক স্তরকে টার্গেট করে ভোটের লড়াইয়ে নামছে নীতীশের নেতৃত্বাধীন জোট?
বিজেপি-জেডিইউ আসন সমঝোতা
বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্যে ২৪৩টির মধ্যে ১২২ আসন পেয়েছে জনতা দল ইউনাইটেড। অন্যদিকে, বিজেপি পেয়েছে ১২১ আসনে। জেডিইউ তাদের কোটা থেকে ৭টি আসন দেবে এনডিএর নয়া শরিক হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চাকে। অন্যদিকে, বিজেপি তার কোটা থেকে ১১টি আসন দেবে বিকাশশীল ইনশান পার্টিকে।
নীতীশের মূল প্রতিপক্ষ কে ?
নীতীশের মূল প্রতিপক্ষ এবার লালু পুত্র তেজস্বী যাদব। তাই যাদব বিরোধী ভোট কেন্দ্রীভূত করতে বদ্ধপরিকর নীতীশ। লালু প্রসাদকে ছাড়াও আরজেডি বিগত দিনে বিহারের ২০ শতাংশ ভোট পেতে সক্ষম হয়েছে। তবে বিহারে অনেক ভোটার ছিলেন যাঁরা নীতীশকে ভোট দিয়েছেন লালুর ফিরে আসার ভয়ে। তবে সেই প্রজন্মের ভোটারের পাশাপাশি এবার নতুন প্রজন্মের ভোটাররা এসেছেন, যাঁরা লালু জমানার সঙ্গে কোনও যোগ খুঁজে পান না। তাঁরা বদল চাইছেন।
জাত-পাতের নিরিখে রাজনীতি
ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি বা জাত-পাতের নিরিখে রাজনীতি খাতায় কলমে 'উচিত' না হলেও ভারতের রাজনীতিতে এটা সব থেকে বড় ফ্যক্টর। হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলির মধ্যে বিহারে এই ইস্যুটি আরও বড় হয়ে দেখা দেয়। দলিত রাজনীতি বিহারে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি থেকে কোনও অংশে কম বড় ফ্যাক্টর।
বিজেপিকে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দল হিসাবে দেখা হয়
মূলত বিজেপিকে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের দল হিসাবে দেখা হয়। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই জিতেন রাম মাঁঝিকে এনডিএতে নিয়েছে। তবে এই ক্ষেত্রে আরজেডি-কংগ্রেসদের পাল্লা ভারী বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। যদিও জেডিইউ বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধায় তাদের ধর্মনিরপেক্ষতার তকমায় ফের দাগ লেগেছে।
হিন্দু ভোট এক করতে রামমন্দির ইস্যুর উপর জোর
হিন্দু ভোট এক করতে গিয়ে রামমন্দির ইস্যুকে যেভাবে বিজেপি কাজে লাগিয়েছে তাতে নীতীশ কুমারের দলের থেকে মুসলিম ভোটাররা মুখ ফিরিয়ে নিলে আশ্চর্য হয়ার কিছু নেই। শুধু তাই নয়, সিএএ-এনআরসি নিয়েও নীতীশের দল সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে বিরোধীদের পাল্লা ভারী হওয়ার কথা।
ভিআইপি এবং হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার সংযোজন
তবে ভিআইপি এবং হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার মতো ছোটো দলের সংযোজনে এনডিএ সব স্তরের মানুষকেই নিজেদের দিকে টানতে চাইছে। তাদের রাজনৈতিক সমীকরণে সব স্তরের ভোটারকে নজরে রেখে এগোচ্ছে বিজেপি। সাম্প্রতিককালে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির দলিত বিরোধী ভাবমূর্তি বাজে প্রভাব ফেলতে পারে বিহার নির্বাচনে। তবে মাঁঝি-ভিআইপি সংযোজনে সেই সমস্যাটা মেটাতে চাইছে বিজেপি।
২০১৯ সালের থেকে সমীকরণে বদল
এদিকে এলজেপির সঙ্গে জোট বেধে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪০টির মধ্য়ে ৩৯টি আসন জিতেছিল তবে এবার এলজেপি বিজেপি-জেডিইউ ভোট ব্যাঙ্কে চিড় ধরাতে চাইছে। বিহারের ৪২টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেন চিরাগ পাসোয়ান। বেশ কয়েকটি আশনেই বিজেপি এবং জেডিইউর বিক্ষুব্ধদের আসন দিয়েছেন চিরাগ পাসোয়ান। বিজেপি থেকে অন্তত পাঁচজন বিদ্রোহী চিরাগের শরণাপন্ন হয়েছেন।
জাতপাতের সমীকরণ যেখানে কাজ করবে না
এদিকে বর্ষার মরশুমে বিহারের ১৮টি জেলা বন্যা কবলিত। তাছাড়া করোনার আবহে সম্ভবত বিহারই প্রথম রাজ্যে হবে, যেখানে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজিত হতে চলেছে। এবারের নির্বাচনে আরও একটি বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে পরিযায়ী শ্রমিক। করোনা আবহে গত কয়েকমাসে রাজ্যে ফিরেছেন ৩০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। এই শ্রমিকদের নিজেদের দিকে টানতেও বদ্ধপরিকর সব শিবির।
যুব সমাজ যখন ভোটার
চাকরি বা কর্মসংস্থান চিরকালই বিহারের জন্য একটি মাথা ব্যথার কারণ ছিল। এর জেরেই এত সংখ্যক পরিযায়ীরা অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে চলে যেতেন। তাই স্বাভাবিকভাবে নির্বাচনের সময় কর্মসংস্থান একটি বড় ফ্যাক্টর হিসাবে দেখা দেয়। এবং এই নির্বাচনেও নীতীশ এবং বিজেপির বিরুদ্ধে বেকারত্বকে ইস্যু করে আক্রমণ শানাচ্ছেন বিরোধীরা। প্রসঙ্গত, চলতি বছরে বিহারে বেকারত্বের হার ৪৬.৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে, যা নীতীশ কুমারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলার জন্য যথেষ্ট। এই ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট জাতি বা ধর্মের লোক নীতীশকে বেনিফিট আউ ডাউট দেবে বলে মনে হয় না।
পেটের দায়ে উপেক্ষিত করোনার চোখ রাঙানি, উৎসবের মরশুমে 'ট্র্যাকে' ফিরছে অর্থনীতি