সতিত্ব প্রমাণে অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিলেন সীতা, অভিনন্দনকে-ও পড়তে হল এক 'মহা-পরীক্ষা'-য়
সৈনিকের জীবন কতটা কঠিন? এই প্রশ্নটা অনায়সেই রাখা যেতে পারে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান-কে। এর উত্তর যে কারওর মন-মতো এমনটা ভাবার কারণ নেই।
সৈনিকের জীবন কতটা কঠিন? এই প্রশ্নটা অনায়সেই রাখা যেতে পারে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান-কে। এর উত্তর যে কারোর মন-মতো এমনটা ভাবার কারণ নেই। কারণ অভিনন্দনের মতো চূড়ান্ত ট্রেন্ড বায়ুসেনার দক্ষ পাইলট সহজেই বলে দিতে পারেন 'ইট ইজ আ লাইফ'। শুক্রবার ওয়াঘা সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে অভিনন্দন-কে যখন তুলে দেওয়া হয়েছিল তখন রাত অনেকটাই হয়েছে। এরপর কিছু পদ্ধতি থাকে যা পূরণ করে প্রিজনার অফ ওয়ার-কে তাঁর রেজিমেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অভিনন্দনের ক্ষেত্রেও তাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, অভিনন্দনের প্রত্যর্পণে অনেকটা রাত হয়ে যাওয়ায় তা আর হয়নি। মেডিক্যাল চেক-আপ-এর বিষয়টি বায়ুসেনা নিজের হাতে নিয়ে নেয়।
একজন সৈনিক জানেন শত্রু শিবির থেকে জীবীত অবস্থায় ফিরলে তার ঝক্কি কতটা। এই পদ্ধতির সঙ্গে সীতার সতীত্ব প্রমাণের তুলনা টানা যেতে পারে। পঞ্চবটি বন থেকে সীতাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রাবণ। সুন্দরী সীতাকে তাঁর কামনা-র নারী হিসাবেই দেখেছিলেন রাক্ষস রাজ। যার জন্য রাম সীতাকে নিয়ে অযোধ্যায় ফিরলেও প্রথমেই জীবনটা সহজ হয়নি। রাক্ষসরাজের আশ্রয়ে কাটানো সীতাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল সতীত্ব প্রমাণের জন্য। তেমনি শত্রু শিবিরে আটক সৈনিককেও দেশে ফিরলে পড়তে হয় নানা পরীক্ষার সম্মুখে, যার মুখোমুখি এদিন পড়তে হয়েছে অভিনন্দন বর্তমানকে।
[আরও পড়ুন: পাকিস্তানের 'চক্রব্যুহ' ভেদ করে ঘরে ফিরলেন অভিনন্দন, খুশির বাঁধ ভাঙল বায়ুসেনার]
শত্রু শিবিরে অভিনন্দন বন্দী ছিলেন ৪০ ঘণ্টারও বেশি সময়। বুধবার সকালে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের যুদ্ধ বিমান মিগ ২১-কে গুলি করে নামানো হয়। সেদিন সকালেই অভিনন্দন-কে পাক সেনা নিজেদের কব্জায় নেয় এবং এরপর থেকে মুক্তির আগে পর্যন্ত অভিনন্দন-এর শরীরের কোথাও কোনও ট্রান্সমিটার বসানো বা অন্য কোনও ধরনের স্পায়িং জিনিসপত্র রাখা হয়েছে কি না? বা তাঁকে স্লো পয়জনিং করা হয়েছে কি না? অথবা তাঁর শরীরে আঘাত রয়েছে কি না ? এমন নানা সম্ভাবনা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই পরীক্ষাগুলির একটা নির্দিষ্ট ধাপ আছে। যা শত্র্রুপক্ষের সামনেই করা হয়। জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধবন্দিদের কোনওভাবে শারীরিক নিগ্রহ করা যাবে না এবং তাঁদের শরীরকে কোনও ভাবেই কোনও থার্ড অবজেক্টের প্ল্যাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
[আরও পড়ুন:অভিনন্দনের বন্যায় ভেসে ওয়াঘার এপারে পা রাখলেন অভিনন্দন, কুর্নিশ বীর সেনাকে]
এই পরীক্ষায় প্রথমেই অভিনন্দনের ফিটনেস লেভেলের পরীক্ষা নেওয়ার কথা চিকিৎসকের। এতে নানা ধরনের পরীক্ষা হওয়ার কথা অভিনন্দনের। এরপর তাঁর গোটা শরীর স্ক্যান করা হবে। পাকিস্তান কোনও 'বাগ' তাঁর শরীরে প্রবেশ করিয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। এমনকী অভিনন্দনের সাইকোলিজক্যাল মাইন্ড স্টেট-ও পরীক্ষা করে দেখা হয়। কারণ পাকিস্তানের হেফাজতে থাকাকালীন কোনও অত্যাচারে মানসিকভাবে অভিনন্দন বিপর্যস্ত হয়েছেন কি না তা পরীক্ষা করে দেখবেন চিকিৎসকরা। এছাড়়াও আইবি এবং র'-এর অফিসারদের বেশকিছু প্রশ্নেরও উত্তর দেওয়ার কথা ছিল অভিনন্দনের। এই জিজ্ঞাসাবাদ বাহিনীর নিয়মের মধ্যেই পড়ে। বাহিনীর সদস্য যাতে এই ধরনের জিজ্ঞাসাবাদে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন তার জন্য প্রশিক্ষণকালে এতেও নজর দেওয়া হয়। তবে, অভিনন্দনকে এই ধরনের কোনও জিজ্ঞাসাবাদের সামনে পড়তে হয়েছে কি না তা নিশ্চিত নয়। কারণ, অভিনন্দন যেভাবে যুদ্ধবন্দি হয়েছেন তার সঙ্গে আইবি ও র-এর জিজ্ঞাসাবাদের প্রসঙ্গের তেমন কোনও মিল নেই। তবে, বায়ুসেনার নিজস্ব ইনটেলিজেন্স অফিসারদের মুখোমুখি বসতে হতে পারে অভিনন্দনকে। এগুলি সবই রুটিন নিয়ম।
[আরও পড়ুন: পাকিস্তানের চালিয়াতি! ওয়াঘাতেই ৫ ঘণ্টারও বেশি আটকে অভিনন্দন বর্তমান ]