নির্বাচনী বন্ড কী, যা নিয়ে বারবার সরগরম হয়েছে সংসদ
নির্বাচনী বন্ড বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলেছে কংগ্রেস। শীতকালীন অধিবেশন শুরু থেকেই এই বিষয়ে আপত্তি তুলে সংসদ অচল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে কংগ্রেস। নির্বাচনী বন্ডকে মস্ত কেলেঙ্কারি বলেও আখ্যা দিয়েছে কংগ্রেস। বিষয়টিকে রাজনৈতিক ঘুষের সঙ্গে তুলনা টেনে কংগ্রেস মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে সংসদে। তবে যেই বিষয়ে এত শোরগোল, কী সেই নির্বাচনী বন্ড?

২০১৭ সালে বন্ড চালুর ঘোষণা
দুই বছর আগের বাজেটে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এই নির্বাচনী বন্ড চালু করেছিলেন। প্রতি আর্থিক ত্রৈমাসিকে ১০ দিন সময়কালের মধ্যে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে কেনা যাবে এই নির্বাচনী বন্ড। লোকসভা ভোটের বছরে বন্ড কেনার জন্য অতিরিক্ত ৩০ দিন সময় থাকবে। শেষ লোকসভা বা বিধানসভা ভোটে যে সমস্ত দল অন্তত ১ শতাংশ ভোট পেয়েছে, তারাই এই সুযোগ পাবে।

কী ভাবে এই বন্ডের মাধ্যমে লেনদেন?
সুদ বিহীন এই বন্ডগুলি প্রকৃত পক্ষে প্রমিসরি নোটের মতই। এই বন্ডগুলি বিভিন্ন মূল্যে পাওয়া যাবে, যেমন, ১০০০, ১০০০০, ১ লাখ, ১০ লাখ বা এক কোটি। এগুলি যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কিনতে পারবে। এই বন্ড কিনতে ব্যাঙ্কের কাছে তাদের কেওয়াইসি তথ্য জমা দিতে হবে। পরে সেই বন্ড যেকোনও রাজনৈতিক দলকে দিতে পারবে সেই ব্যক্তি বা সংস্থা। সেই বন্ড তখন সে রাজনৈতিক দল ব্যঙ্ক থেকে ভাঙিয়ে নিয়ে তাদের নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে জমা করতে পারবে। তবে সেই সময় রাজনৈতিক দলকে এটা প্রকাশ করতে হবে না যে কার থেকে সেই বন্ড তারা পেয়েছে।

বন্ডের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে গিয়েছিল বিরোধীরা
২০১৭ সালের বাজেট পেশ করার সময় যখন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী নির্বাচনী বন্ডের কথা বলেন, তখনই সেটি নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তখন সিপিআই(এম)-এর তরফে একটি পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছিল সুপ্রিমকোর্টে। সেই পিটিশনের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালত কেন্দ্রের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের তরফে জবাবে দাবি করা হয়েছিল, এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির অনুদান নেওয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা আসবে।

বন্ড নিয়ে আশ্ঙ্কা প্রকাশ করেছিল নির্বাচন কমিশনের
এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছেও জানতে চেয়েছিল শীর্ষ আদালত। সেই সময় এই ব্যবস্থার উপর প্রশ্নচিহ্ন দাঁড় খাড়া করেছইল কমিশনও। তাদের বক্তব্য ছিল, ভারতীয় রাজনৈতিক দলদের বিদেশি কোনও সংস্থা থেকে টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু এই বন্ডের মাধ্যমে এই বিষয়গুলি নজরে রাখতে ব্যর্থ হবে কমিশন। এর জেরে ভারতীয় নির্বাচন ও রাজনীতির উপর পড়তে পারে বিদেশি প্রভাব।

সদ্য প্রকাশিত কিছু রিপোর্টের ভিত্তিতে ফএর শুরু বিতর্ক
এমন কী সদ্য প্রকাশিত কয়েকটি মিডিয়া রিপোর্টে জানা গিয়েছে, এই ব্যবস্থার বিষয়ে মত ছিল না আরবিআই-এরও। বিরোধীদের অভিযোগ ২০১৮ সালের এক আরটিআই থেকে জানা যাচ্ছে, মোদী সরকার নির্বাচনী বন্ড নিয়ে আরবিআইকে অমান্য করেছে। ২০১৭ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন গভর্নর উর্জিত প্যাটেল তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে তিনটি চিঠি লিখেছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্য কেউ যাতে এই নির্বাচনী বন্ড ইস্যু না করে, তার জন্য তিনি সতর্ক করেছিলেন অর্থন্ত্রীকে।