মিশন দিল্লি, পিকের চাণক্যনীতি কতটা কাজ দিল মমতার, কী বলছে রাজনৈতিক মহল
তিন দিনের দিল্লি অভিযান শেষ, কতটা কাজ হাসিল করতে পারলেন মমতা?
২৭ তারিখ থেকে টান টান উত্তেজনায় ভরা ছিল রাজধানী দিল্লি। রাজধানীতে ২ বছর পর পা রেখেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি পা রাখতেই কেমন একটা হইহই কাণ্ড বেঁধে গিয়েছিল রাজধানীর বুকে। আপাত শান্ত স্থির জলে হঠাৎ ঢিল এসে পড়লে যেমন হয় ঠিক সেরকমই ঘটেছে গত কয়েক দিন ধরে জাতীয় রাজনীতিতে। যার কেন্দ্রে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক বৈঠক করেছেন তিনি। কিন্তু যে লক্ষ্যে তৃণমূল সুপ্রিমোর এই দিল্লি সফর তার কতটা হাসিল করতে পারলেন তিনি।
মোদীর সঙ্গে সাক্ষাত
দিল্লি সফরের প্রথম দিনের কর্মসূচিতেই ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাত। আগেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন। প্রথমে বুধবার বৈঠক করার কথা থাকলেও পরে সময় বদলে মঙ্গলবার বৈঠকের জন্য সময় দেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেল চারটেয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।একুশের ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয়ের পর এই প্রথম মোদীর মুখোমুখি হলেন মমতা। ভোটের প্রচার চলাকালীন একে অপরকে নানা ভাবে আক্রমণ করেছেন কটাক্ষ করেছেন কিন্তু মুখোমুখি সাক্ষাত হয়নি। নেতািজ জন্মজয়ন্তির পর এই প্রথম দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মুখোমুখি হলেন মমতা। প্রথম বৈঠকে রাজ্যের জন্য দাবিদাওয়া নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মমতা। তাঁর প্রথম দাবি ছিল পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে বাংলা করতে হবে। দ্বিতীয় দাবি ছিল করোনা ভ্যাকসিন রাজ্যবাসী ভ্যাকসিন সংকটে রয়েছে। সকলকে ভ্যাকসিন দিতে পর্যাপ্ত টিকার প্রয়োজন তাই রাজ্যের জন্য পর্যাপ্ত টিকার আবেদন করেছেন তিনি। বিরোধীরা অবশ্য এই নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে বলেছিলেন রাজ্যের যা ভাঁড়ে মা ভবানী দশা তা দিল্লিতে গিয়ে রাজ্যের জন্য ভিক্ষে চাইতে যাচ্ছেন মমতা।
সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
মমতার দিল্লি সফরের দ্বিতীয় দিন ছিল ঘটনা বহুল। একের পর এক বৈঠক। সকাল সকাল দলের সংসদীয়কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মমতার দিল্লিতে পা রাখার আগেই তাঁদে দলের সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করা হয়েছিল। ডেরেক ওব্রায়েন সাংবাদিক বৈঠক করে সেকথা ঘোষণা করেছিলেন। বুধবার সকালে সংসদীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা। সেসময় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বৈঠক করেন বিরোধী দলের সদস্যদের সঙ্গে। সেই বৈঠকে িছল না তৃণমূল কংগ্রেস। এই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। বিরোধী দলের ঐক্য নিয়ে কথা বলছেন অথচ রাহুল গান্ধীর বৈঠকে নেই তৃণমূল কংগ্রেস। এই নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক মহল। তবে পরে মমতা সাংবাদিকদের জানান তাঁর দল পেগাসাস ইস্যুতে প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তারপরেই বিকেেল সেই বহু প্রতিক্ষিত বৈঠক। প্রায় ২ বছর পর কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর মুখোমুখী হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধী ঐক্যের প্রসঙ্গ উঠে আসে। আলোচনা হলেও কংক্রিট কোনও আউটকাম আসেনি। বিরোধী দলেন নেতৃত্বে কে থাকবেন তা নিয়েও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
এখনও অনেক পথ বাকি
বৈঠক শেষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বার্তা দিয়েছেন তাতে স্পষ্ট সোনিয়া গান্ধী বা কেজরিওয়ালের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেও বিরোধী ঐক্য নিয়ে তেমন কোনও সিদ্ধান্তে কেউই আসতে পারেননি। ২০২৪-এ বিজেপিকে হারাতে বিরোধীদের একজোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন মমতা। কিন্তু কংগ্রেস নিজের অহংকারকে কতটা দূরে রাখতে পারবে তা সন্দেহ রয়েছে। কারন জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রের কথা উঠলেই কংগ্রেসকে নেতৃত্বের জন্য ছেড়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা আগেও ছিল এখনও রয়েছে। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেস প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে বলেছে। বাংলার ভোটে একটি আসনও পায়নি কংগ্রেস। কাজেই বিজেপির সঙ্গে লড়তে কংগ্রেসকে সামনে রাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মমতা অবশ্য বলেছেন এখনও অনেক আলোচনা বাকি। তারপরে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
জাভেদ আখতারের সঙ্গে বৈঠক
জাভেদ আখতার-শাবানা আজমির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে কট্টর মোদী বিরোধী বলিউজের বিখ্যাত সুরকার ও গীতিকার জাভেদ আখতার এবং অভিনেত্রী শাবানা আজমি দাবি করেছেন ২০২৪-এ পরিবর্তন আসবেই। েসই পরিবর্তন কার হাত ধরে আসবে সেটা তাঁরা স্পষ্ট করেননি। আর এই অস্পষ্টতা নিয়েই দিল্লি থেকে ফিরছেন মমতা। তবে জাতীয় রাজনীিতর মঞ্চে তিনি এক ধাপ যে এগিয়েছেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। বিশেষ করে বঙ্গে একুশের ভোটের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে একটা বিশেষ জায়গা দিয়েছে।
মোদী থেকে সোনিয়া-সাক্ষাতে স্পষ্ট তাঁর 'দ্বৈত-ভূমিকা'! দিল্লি সফরে কী পেলেন মমতা