নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অসম চুক্তি বিরোধী বলে কেন বিক্ষোভ অসমে? কী এই চুক্তির ৬ নম্বর ধারাটি?
নিজেদের জাতিগত ভাবে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তীব্র ভাবে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় নেমেছে অসম সহ উত্তরপূর্ব বাসী। তাদের আশঙ্কা, এই আইনের ফলে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু জনগোষ্ঠী লোকেদের ভিড়ে অসমের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাবে। ২০১৬ তেও এই বিল আনা হয়েছিল। কিন্তু তখন তা সংখ্যার অভাবে পাস করাতে পারেনি সরকার। তবে ২০১৯-এ সরকারের সামনে কোনও বাধা ছিল না। তারা এই বিল অনায়াসে পাশ করায়।
প্রধানমন্ত্রীর টুইট
এদিকে এর আগে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি টুইটে অসম সহ উত্তরপূর্ব ভারতকে আশ্বস্ত করেন যাতে সেখানে কোনও মতেই আতঙ্ক না ছড়ায়। মোদী লেখেন,'আমি অসমের ভাই ও বোনদের আশ্বস্ত করতে চাই য়ে ক্যাব নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আমি জানাতে চাই, তাঁদের অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। কেউ ছিনিয়ে নেবেনা তাঁদের পরিচিতি, সুন্দর সংস্কৃতিকে। এটা দিনে দিনে আরও বাড়বে। লাগু করা হবে অসম অ্যাকর্ডের ৬ নম্বর ধারা।'
কিন্তু কী এই ৬ নম্বর ধারা?
অসম অ্যাকর্ডের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী আসামের মানুষের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ভাষাগত পরিচয় এবং ঐতিহ্য সুনিশ্চিত করার জন্য সাংবিধানিক, আইনগত এবং প্রশাসনিক নিরাপত্তা দিতে হবে। সেই ভিত্তিতেই সিএএ-র বিরুদ্ধে জনরোষ অসমে। তবে অসমের ৬ বছরের আন্দোলন শেষে অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হয় অসম অ্যাকর্ড। সেই চুক্তির ৬ নম্বর ধারা বাস্তবায়িত করতে এত বছরে কোনও কমিটি গঠন না হলেও বিজেপি আমলে গঠন হয় কমিটি। তবে ২০১৬ সালের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় সেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন তিনজন।
কেন সিএএ অসম চুক্তি বিরোধী?
এই বিলের বিরোধিতা করে অসমের বিজেপি সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল অসম গণ পরিষদ। কারণ তাদের বক্তব্য ছিল, এই বিল আইনে রূপান্তরিত হলে বাংলাদেশি হিন্দুতে ভরে যাবে আসাম। আর এ জন্যই তারা এই বিলের বিরোধিতা করছে। উল্লেখ্য, গত বছর অক্টোবর মাসে অসম গণ পরিষদ এই নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে মিছিল করেছিল সে রাজ্যে। অসম অ্যাকর্ডের ৬-নম্বর ধারা অনুযায়ী অসমে নাগরিকত্ব পাওয়ার কাট-অফ তারিখ হচ্ছে ২১ মার্চ ১৯৭১, আর নাগরিকত্ব বিল বলছে তারিখটি হবে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪। অসমবাসীর দাবি ছিল যে আগে ৬ নম্বর ধারা বাস্তবায়িত হোক। তারপর সিএবি। তবে সেটা না হওয়ায় এখন অসমকে শান্ত করতে বিজেপি সরকারের যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়িত করতে হবে অসম অ্যাকর্ডের ৬ নম্বর ধারা।
ধারা বাস্তবায়নের বাধা
তবে এই ধারা বাস্তবায়নে রয়েছে প্রচুর বাধা। কাদেরকে বলা হবে আসল অহমিয়া। তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে সকলেই। কোন ভিত্তিতে রাজনৈতিক সংরক্ষণ বা চাকরির সংরক্ষণ, তাও স্পষ্ট নয়। এখনও পর্যন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টও জমা দিতে পারেনি। তবে এটা যত দেরি হবে তত পুড়বে অসম।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯
২০১৬ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের থেকে সামান্য বদল রয়েছে ২০১৯-এর সংসদে গৃহীত আইনে। নতুন আইনে শর্ত দেওয়া হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে সমস্ত অমুসলিম শরণার্থীরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ, হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি বা জৈন ধর্মের যেই লোকেরা ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে থেকে ভারতে বসবাস করেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন।
৫ বছর থাকলেই নাগরিকত্ব অমুসলিমদের
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেই এই নতুন সংশোধনী আনা হয়েছে। আগে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে কোনও শরণার্থীকে অন্তত ১১ বছর এদেশে থাকতে হত। সেই সময়সীমা কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছিল। এবছর তা আরও কমানো হবে। নতুন বিল বলছে মাত্র ৫ বছর ভারতে থাকলেই নিঃশর্তে নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে অমুসলিমরা। এক্ষেত্রে, শুধুমাত্র নিজেকে অমুসলিম বলে হলফনামা জমা দিলেই কাজ মিটে যাবে।
সিএএ থেকে সায়ত্বশাসিত জেলাগুলিকে বাদ দেওয়া হলেও উত্তাল উত্তর-পূর্ব
সিএএ ও এনআরসির বিরোধিতায় উত্তাল হয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। তাদের দাবি, এই আইনের কারণে সেখান জনজাতির অবলুপ্তি ঘটতে পারে। সম্প্রতি উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ ও নাগাল্যান্ডের বিস্তৃর্ণ অংশে আপাতত এনআরসি হবে না। অসম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় ষষ্ঠ তপশিলের অন্তর্ভূক্ত স্বশাসিত এলাকাগুলিতে এনআরসি লাগু করা হবে না।