লাদাখ সংঘাতের মাঝেই চালু চিনের অন্য এক যুদ্ধ! কী এই হাইব্রিড ওয়ারফেয়ার?
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চলমান অশান্তির মাঝেই চিনা গুপ্ত অভিসন্ধি পর্দা ফাঁস হতেই গোটা বিশ্বে আলোড়ণ সৃষ্টি হয়েছে। হাইব্রিড যুদ্ধ কৌশলের অন্তর্গত ১০ হাজারেরও বেশি ভারতীয়র উপর চলছে চিনা নজরদারি। সেই তালিকায় রয়েছেন মোদী সরকারের ক্যাবিনেট সদস্য থেকে শুরু করে দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, বিরোধী দলনেতা সহ বহু ভিভিআইপি। তথ্যসংগ্রহের প্রধান উৎস হল বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও সোশাল নেটওয়ার্ক। পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও প্রতিবেদন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংস্থাটির একটি নিজস্ব মনিটরিং ম্যাপও রয়েছে। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু ভারতই নয়, অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর মতো দেশগুলির উপরেও নজর রাখছে ওই সংস্থা।

কী এই হাইব্রিড যুদ্ধকৌশল?
তবে কী এই হাইব্রিড যুদ্ধকৌশল? আক্ষরিক অর্থেই শব্দটির মানে বোঝা যাচ্ছে, অর্থাৎ, বহু-ক্ষেত্রে যুদ্ধ লড়ার পদ্ধতির অংশ হিসাবে অপ্রচলিত পদ্ধতিগুলির ব্যবহারকেই হাইব্রিড যুদ্ধকৌশল বলে। এই পদ্ধতিগুলির লক্ষ্য প্রকাশ্য শত্রুতাতে জড়িত না হয়ে প্রতিপক্ষের সব কাজকে আগে থেকেই ব্যাহত ও অক্ষম করা। সোজা কথায়, যুদ্ধের আগেই শত্রুকে পরাস্ত করা।

অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে যুদ্ধ
১৯৯৯ সালেই চিনের পিএলএ একটি পদ্ধতির বিষয় বস্তু নির্ণয় করেছিল। সেই পদ্ধতিটি হল আজকের এই হাইব্রিড যুদ্ধকৌশল। এই যুদ্ধকৌশলের মাধ্যমে হিংসার পরিধিতে বদল আসবে। হিংসা ছড়ানোর পদ্ধতিতে বদল আসবে। সেনার থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে হিংসা ছড়ানোর বিষয়টি হস্তান্তরিত হবে। অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে যুদ্ধ হবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে।

চিনের ধারের কাছে নেই কোনও দেশ
এই পদ্ধতিতেই রাশিয়া ২০১৪-১৫ সালে ক্রাইমিয়াতে জয়লাভ করেছিল। যার পর থেকে এই যুদ্ধকৌশলের দাম আরও বেড়ে যায় বাকি সুপারপাওয়ারগুলোর মাঝে। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে চিন যেভাবে হাইব্রিড যুদ্ধকৌশলে এগিয়েছে, তার ধারের কাছে যেতে পারেনি অন্য কোনও দেশ।

২ বছরেই ২০টি প্রোসেসিং সেন্টার তৈরি
রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১৮ সালেই তৈরি হয়েছে ঝেনহুয়া নামক এই সংস্থাটি। এর মধ্যেই চিনজুড়ে ২০টি প্রোসেসিং সেন্টার তৈরি করে ফেলেছে তারা। চিনা সেনা এবং চিনা সরকারকেও তারা নিজেদের ক্লায়েন্ট হিসাবে গণ্য করে। ঝেনহুয়া আদতে বিগ ডেটা-র মাধ্যমে এই সব তথ্য সংগ্রহ করছে। তারপর সেটিকে ওভারসিজ কি ইনফর্মেশন ডেটাবেসের অধীনে সংরক্ষণ করছে।

নজরদারি চলছে আমেরিকা-জাপানের মতো দেশের উপরও
অবশ্য শুধু যে ভারতের উপরই এই নজরদারি চলছে, তেমনটা নয়। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, গ্রেট ব্রিটেন, জার্মানি, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব চিনের এই নজরদারির শিকার। অ-সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেই অন্য দেশে আধিপত্য বিস্তার করা, বা সেদেশের ক্ষতি করা বা প্রভাব অর্জন করার লক্ষ্যেই এই তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ চলছে বলে সূত্রের দাবি।

ভারতের ক্ষতি করতে পারে এই তথ্য
যে পরিসীমায় এই সংস্থা তথ্য পেয়েছে এবং তা সংগ্রহ করেছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় যে তারা হাইব্রিড যুদ্ধের কৌশলগত দিক সম্পর্কে অত্যন্ত মনোযোগী। হাইপ্রোফাইল ব্য়ক্তিদের তথ্য সসম্পর্কে যেভাবে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে, তার পরিধিতে রয়েছে সেই ব্যক্তিদের কাজ, তাদের পরিবার, তাদের চলন, নেতৃত্বের ভূমিকা, তাদের সংস্থাগুলি অমূল্য ডেটা যা অগণিত উপায়ে পরবর্তীতে ভারতের ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা।

কীভাবে আইন ভেঙেছে এই তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি
এই তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০১১ এবং আইটি আইন, ২০০০-এর আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব সংগৃহীত তথ্যগুলিকে এমন কিছু কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ভারতের সার্বভৌমত্ব-অখণ্ডতা, প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা ও জনশৃঙ্খলার পক্ষে ক্ষতিকারক৷ জাতীয় সুরক্ষা ও ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্যেই এই তথ্য সংগ্রেহ বিষয়টি এতটা আশঙ্কাজনক বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

চিনা নজরদারি চলেছে মোদী-রাহুলের উপরও
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, অখিলেশ যাদব, লালু প্রসাদ যাবদ, সচিন তেন্ডুলকর, চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল, নীতি আয়োগের সিইও অভিনব কান্ত, ভারত সরকারের মুখ্য সচিব পদে থাকা ২৩ জনের তথ্য এভাবেইহাতিয়ে নিয়েছে চিনের এই সংস্থা। পরে এই সব তথ্যের কোনটাকে কাজে লাগিয়ে বেজিংয়ের সুবিধা হতে পারে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হয়।

চিনা টার্গেট লিস্ট
রাজনৈতিক আঙিনা ছাড়াও চিনের নজরদারিতে রয়েছেন ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার গণমান্য ব্যক্তিরা, রয়েছেন বিজ্ঞান জগতের প্রতিভাবান ব্যক্তিরাও। এই 'টার্গেট লিস্টে' যেমন রয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তেমনই রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান, অশোক গেহলট, অমরিন্দর সিং। ক্যাবিনেট মন্ত্রী রাজনাথ সিং থেকে পীযূষ গোয়েল।

ভারতের বিরুদ্ধে ডাহা ফেল জিনপিংয়ের রণকৌশল! লাদাখ সীমান্তে আরও অশান্তির আঁচ নয়া রিপোর্টে