হার স্বীকার করেও ফের ক্ষমতায় নীতীশ, রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে এনডিএ-র জয়ের নেপথ্যে কোন কোন কারণ?
ফের বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলাফল। বিরোধী মহাজোট নিয়ে প্রত্যাশার পারদ চড়লেও শেষ মুহূর্তে ১২৫ টি আসন পেয়ে বিহারে ফের ক্ষমতায় আসতে চলছে নীতীশের নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার। কিন্তু এনডিএ শিবিরের জয় এলেও নীতীশের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বিহারে সাংগঠিনক শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি করল বিজেপি। কিন্তু বিহারের সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে আরজেডি বৃহত্তম হল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেও ঠিক কোন কোন কারণে ফের ছুটল নীতীশের বিজয়রথ ?

পরাজয় স্বীকার করেও কামব্যাক নীতীশের
এদিকে মঙ্গলবারের সকালে গণনা পর্বের শুরুতে অনেকটাই মিলতেও শুরু করে বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল। এনডিএ প্রার্থীদের পিছনে ফেলে অনেকটাই এগিয়ে যায় বিরোধী মহাজোট। আর ঠিক তখনই জেডিইউ-র বরিষ্ঠ নেতা তথা দলের মুখপাত্র কেসি ত্যাগীর গলায় শোনা যায় হতাশার সুর। এমনকী কার্যত হারও স্বীকার করে নেন তিনি। কিন্তু বেলা গড়াতেই বদলাতে থাকে চিত্র। ক্রমেই স্বমহিমায় ফিরে আসে গেরুয়া শিবির।

কংগ্রেসের কারণেই ভরাডুবি আরজেডি-র
অবশেষে দিনভর ভোট গণনার টানটান উত্তেজনা শেষে এনডিএ শিবিরের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে ম্যাজিক ফিগার থেকে সামান্য দূরে থমকে যায় বিরোধী মহাজোটের তরী। এনডিএ পায় ১২৫টি আসন। কংগ্রেস-আরজেডি-বামেদের দখলে আসে ১১০টি আসন। এদিকে ভোটের আগে পাটনার প্রায় সমস্ত রাস্তা ‘সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী' হিসাবে তেজস্বীর ছবিতে ছয়লাপ হয়ে গেলেও সাধাৎম মানুষের সমর্থন আরজেডির পক্ষে গেলেও জনমানসে বিশেষ দাগ কাটতে পারেনি কংগ্রেস। তার ফলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে বিরোধী মহাজোট।

চিরাগের কৌশলেই এলজেপিকে পাল্টা আঘাত
অন্যদিকে ভোটের আগে জোটের ক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক কৌশলেও অনেকটাই বাজিমাত হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেকেরা। চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপির ভোট আটকাতে জিতন রাম মাঝির হিন্দুস্তান আওয়ামী মোর্চার হাম ও মুকেশ সাহানির বিকাশশীল ইনসান পার্টি বা ভিআইপিকে জোটে টেনে যে ভাবে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন মোদী তাতে অনেকটাই ঘর গোছাতে পেরেছে এনডিএ জোট।

এনডিএ জোটে বিশেষ ছাপ ফেলেছে হাম-ভিআইপির ভূমিকাও
এমনকী ভোট প্রচারে এসেও জেডিইউ বিজেপির পাশাপাশি হাম ও ভিআইপি প্রার্থীর জন্যও ভোট চাইতে দেখা যায় মোদীকে। যাতে ছোট দল হয়েও আঞ্চলিক স্তরে ভাবমূর্তি ধরে রাখতে অনেকটাই সাহায্য করেছে হাম ও ভিআইপিকে। অন্যদিকে নীতীশ কুমারের ‘ধর্মনিরেপক্ষ' ভাবমূর্তিও বিহারে ভোটের ময়দানে এনডিএ জোটকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

নীতীশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিতেই বাজিমাত
চলতি নির্বাচনে বিহারের ১১৫ জন প্রার্থীর মধ্যে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ শতাংশের কাছাকাছি। এমনকী গত অগাস্টে জেডিইউ-তে যোগদানকারী ফারাজ ফাতমিকে ভোটের টিকিন দেন নীতীশ। শেষ মহূর্তের নির্বাচনী ফলে এলজেপির ভোট কাটাকাটির জেরে তিনি জিততে না পারলেও মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক গোছাতে নীতীশের এই সিদ্ধান্ত বিশেষ সহায়ক হয়।

কাজে এসেছে মোদীর জঙ্গলরাজ প্রত্যাবর্তনের তত্ত্বও
অন্যদিকে এবারের নির্বাচনে মহিলা ভোটারাও মুক্ত হস্তে জেডিইউ শিবিরকেই সমর্থন করেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। সেই ক্ষেত্রে মহিলাদের উদ্দেশ্যে নীতীশের ভোট পূর্ব প্রচার বড় সহায়কের ভূমিকা নিয়েছে। একই সাথে বিপির দেওয়া আরজেডি-বামেদের হাত ধরে নকশাল জাগরণের তত্ত্বও সাধারণ মানুষ ভালোই খেয়েছে বলে মত ওয়াকবিহাল মহলের। এমনকী আরজেডি সরকার এলে জঙ্গলরাজের প্রত্যাবর্তনের কথাও জনমানসে বিশেষ ছাপ ফেলেছে।

২০ শতাংশেরও কম ভোট পেয়ে বিহারে বাজিমাত বিজেপির! নেপথ্যে কোন সমীকরণ?