টানা ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত মুম্বই, ভেঙে যাবে রেকর্ড, আশঙ্কা আবহাওয়াবিদদের
সপ্তাহান্তে মুম্বইতে আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা এভাবে ভারী বৃষ্টিপাত চলতে থাকলে সিক্ততম জুলাই মাস দেখবে মুম্বই।
পরপর ৪ দিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টিপাত ও সেই সঙ্গে তীব্র জলোচ্ছাসে বিপর্যস্ত মুম্বই শহর । কালিনা. চেম্বুর, মানখুর্দের মতো শহরের নিচু এলাকাগুলিতে প্রায় কোমর অবধি জল জমে রয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জুটেছে দুর্ঘটনা, ট্রেন বাতিল, উড়ান বাতিলের মতো বিপত্তিও। আবহাওয়াবিদরা বলছেন এই হারে বৃষ্টি চলতে থাকলে জুলাই মাসে মুম্বইয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড ভেঙে যাবে।
জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনেই মুম্বই শহরে মোট ৮৬৪.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই মাসে মুম্বইয়ের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮৪০ মিলিমিটার। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে মুম্বই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি পেয়েছিল। চলতি বছরে এখনই এত বৃষ্টি হওয়ায় আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা সেই রেকর্ড এবার ভেঙে যেতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই এই বিপুল বৃষ্টিপাতের প্রভাব পড়েছে রোজকার জীবনযাত্রায়। ভারতের বানিজ্য়িক রাজধানীর ব্যস্ততা আপাতত প্রকৃতির সামনে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছে। পশ্চিম ও মধ্য মুম্বই শহরের দুটি শাখারই ট্রেন চলাচল ব্যহত হয়েছে। জায়গায় জায়গায় লাইনের ওপর জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। মঙ্গলবার অতিবৃষ্টির জেরে পশ্চিম শাখার ১৫০ টি ও মধ্য শাখার ১২৭ টি ট্রেন বাতিল করতে হয়। বাকি ট্রেনগুলিও চলেছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। এমনকী পশ্চিম শাখায় ভায়ান্দের স্টেশনের পরে আর ট্রেন চালানই যায়নি।
তথৈবচ অবস্থা সড়ক যোগাযোগেরও। বেশিরভাগ রাস্তাই জলের তলায়। নিচু এলাকাগুলিতেতো য়ানবাহন চালানই যাচ্ছে না। অন্যান্য জায়গায় গাড়ি-ঘোড়া চললেও, একেবারে শম্বুকগতি ছিল। কারণ একটু গতি বাড়ালেই দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবানা। নিয়ন্ত্রণ রাখা যাচ্ছে না। মঙ্গলবারও পালঘরের কাছে কাসা এলাকায় চারোতি ব্রিজের কাছে হাইওয়ের উপর দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ৩ জন আহত হন ওই ঘটনায়। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভারী বৃষ্টির জন্য কোনও উড়ান বাতিল করতে না হলেও প্রায় ৩০ টির মতো উড়ানের সময় পিছিয়ে দেওয়া হয়। আগে-ভাগে বিমানবন্দরে পৌঁছে বিপদে পড়েন অনেক যাত্রী। তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেশক্ষা করতে হয়েছে। শহরের অনেক এলাকায় বিদ্যুত পরিষেবাও ব্যহত হয়েছে। মাহিমে ১২ ঘন্টা বিদ্যুত ছিল না। মানখুর্দের কিছু এলাকাতেও ৪-৫ ঘন্টা করে বিদ্যুত পরিষেবা ব্যহত হয়।
আবহাওয়া দপ্তর বলছে এরকম অবস্থা চলবে আগামী শনিবার পর্যন্ত। তাদের দাবি একের পর এক ঘুর্ণাবর্তের জেরেই মুম্বইয়ে লাগাতার ভারী বর্ষণ চলছে। আবহাওয়াবিদ অজয় কুমার জানিয়েছেন, 'দক্ষিণ গুজরাত ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা, ছত্তিশগড় এবং ওড়িশা এই তিন জায়গার আকাশেই তিনটি পৃথক ঘুর্ণাবর্ত রয়েছে। এই তিনটির প্রভাবেই মুম্বই শহরের এপর একের পর এক নিম্নচাপ সৃষ্টি হচ্ছে।' শুক্রবার শহরের উপর আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।