বৃন্দাবনের বিধবাদের ফিকে জীবনে হোলির রং, এই প্রথম
ওঁরা বৃন্দাবনের কয়েক হাজার বিধবা। সমাজের মূল স্রোত থেকে দূরে। মানুষ হয়েও মানবেতর জীবন। এটা খাবে না, ওটা করবে না, ওখানে যাবে না। এতদিন সেই না-না তালিকায় হোলিও ছিল নিষিদ্ধ। 'সাদা থান পরা মেয়েমানুষগুলো' আবার হোলি খেলবে কী! এই ছিল মন্দিরনগরীর দৃষ্টিভঙ্গি। দিনের পর দিন নিরানন্দ থেকে অবশেষে এবার রুখে দাঁড়ালেন ওঁরাই। খেলব হোলি, রং-ও দেব! নিজেরাই পিচকিরি, আবির নিয়ে নেমে পড়লেন। রং মাখালেন একে অপরকে। ব্যতিক্রমী দৃশ্য হাঁ করে দেখলে গোটা বৃন্দাবন।
পরিবার কর্তৃক পরিত্যাজ্য বিধবাদের শেষ ঠাঁই বৃন্দাবন। ভগবানের ধামে নরক গুলজারে থাকতে হত তাঁদের। যে হোমগুলি আছে, সেখানে খাবারও ঠিকঠাক জুটত না বলে অভিযোগ। রোগভোগে পাওয়া যেত না ডাক্তার, ওষুধ। অনেকে আবার নিয়মিত যৌন নির্যাতনের শিকার হতেন। এই অবস্থা কিছুটা বদলায় ২০১২ সালের আগস্ট মাসের পর থেকে। প্রশাসনিক উদাসীনতাকে তুলোধোন করে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট। সুলভ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি এনজিও-কে শীর্ষ আদালত দায়িত্ব দেয় বৃন্দাবনের বিধবাদের দেখভালের। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে ৭০০ বিধবার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল। এঁদের দু'বেলা ভরপেট খাবার জুটছে। দু'জন ডাক্তারকে নিয়োগ করা হয়েছে এঁদের চিকিৎসার জন্য। শেখানো হচ্ছে নানা হাতের কাজ। মাসে দু'হাজার টাকা করে হাত খরচও পাচ্ছেন। এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বৃন্দেশ্বরী পাঠক জানালেন, বৃন্দাবনের বাকি বিধবাদের কাছেও খুব শীঘ্র তাঁরা পৌঁছবেন।
তিনি জানালেন, বিধবাদের হোলি খেলতে সব রকম সাহায্য করেছে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল। রং, আবির, পিচকিরি কিনে দেওয়া হয়েছে। বিধবাদের সিংহভাগই বাঙালি। হোলিতে তাই গাওয়া হয়েছে বাংলা গানও।