ভোট শিয়রে, নব্য উদারনীতিবাদী চিদম্বরমের বাজেট তাই জনমুখী
তেলেঙ্গানা ইস্যু নিয়ে শোরগোল চলছিলই। তা পাত্তা না দিয়ে ৪০ মিনিটে নিজের বাজেট বক্তৃতা শেষ করেছেন চিদম্বরম। অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ চিদম্বরম জানেন, এখন দেশে ক্রমশ মধ্যবিত্তরা কলেবরে বাড়ছে। তাই তাদের খুশি করতে কমিয়ে দিয়েছেন ভোগ্যপণ্যের দাম। রেফ্রিজারেটর, রঙিন টিভি, মিউজিক সিস্টেম, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মোবাইল ফোন সস্তা হয়েছে। মধ্যবিত্তের মন ভেজাতে ছোটো গাড়ি, মোটর সাইকেলের ওপর উৎপাদন শুল্ক হ্রাস করেছেন। এর অর্থ এবার এগুলির দাম কমবে। যে মধ্যবিত্তরা এসইউভি গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁরা এবার খুশি হবেন। কারণ, এসইউভি-র ওপর শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে করেছেন ২৪ শতাংশ।
সস্তা টিভি,ছোটো গাড়ি, মোটর সাইকেল
চাকরিজীবীদেরও এই বাজেটে খুব একটা দুঃখিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ আয়কর কাঠামো অপরিবর্তিত রেখেছেন। বলেছেন, "আমাদের আধুনিক কর আইন দরকার। প্রত্যক্ষ কর বিধি (ডিটিসি) এখনও চালু না হওয়াটা দুঃখজনক।" এটা সর্বজনবিদিত যে, ডিটিসি চালু হলে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা তিন লক্ষ টাকা হয়ে যাবে। ফলে চাকরিজীবীরা আশায় বুক বাঁধতে পারেন এই ভেবে যে, পরবর্তী সরকার এসে ডিটিসি চালু করে দেবে!
গরিবদের কথা কীভাবে ভেবেছেন চিদম্বরম? গ্রামে পরিকাঠামোর উন্নয়নে পঞ্চায়েতিরাজ মন্ত্রককে দিয়েছেন সাত হাজার কোটি টাকা। সামাজিক ক্ষমতায়ন মন্ত্রক পেয়েছে ৬৭৩০ কোটি টাকা। ইন্দিরা আবাস যোজনায় গরিব মানুষের বাড়ি নির্মাণ, শহরের বস্তি এলাকায় জীবনযাত্রায় মানোন্নয়নে বরাদ্দ হয়েছে ছ'হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে গরিবদের কথা ভেবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণে বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৩৩,৭২৫ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী নিজে স্বীকার করেছেন যে, সংখ্যালঘুরা পিছিয়ে আছে। তাই তাদের উন্নয়নেও বরাদ্দ হয়েছে ৩৭১১ কোটি টাকা।
সম্প্রতি দিল্লিতে নিডো টানিয়ামের মৃত্যুর পর রব উঠেছিল, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি পিছিয়ে রয়েছে বলেই সেখানকার ছেলেমেয়েদের অন্য শহরে গিয়ে পড়াশুনো, চাকরি-বাকরি করতে হয়। সেই 'বদনাম' ঘুচিয়ে ভোটব্যাঙ্ক শক্ত করতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে দেওয়া হচ্ছে ১২০০ কোটি টাকার প্যাকেজ। তা দিয়ে পরিকাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি কাজ হবে।
ভোটের কথা মাথায় রেখে প্রতিরক্ষাবাহিনীকেও চাঙ্গা করেছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ফৌজিরা 'এক পদ এক পেনশন' নীতি চালুর দাবি জানাচ্ছিলেন। হয়নি। কিন্তু এবার সেই নীতি চালু করার ঘোষণা করলেন অর্থমন্ত্রী। বললেন, এই উদ্দেশ্যে তিনি চলতি অর্থবর্ষেই আলাদাভাবে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করছেন। বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী বারবার অভিযোগ করেছেন, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে মাথাব্যথা নেই ইউপিএ সরকারের। সেই অভিযোগ উড়িয়ে তাঁকে বার্তা দিতে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ২.০৪ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তা হয়েছে ২.২৪ লক্ষ কোটি টাকা।
চিদম্বরমের এদিনের বাজেটে সার্বিকভাবে খুশি নয় শিল্পমহল। তাতে কী? শিল্পপতিরা তো আর ভোটারদের মুখোমুখি হবেন না!