বিজেপির রোষ সত্ত্বেও ১১৪ ফিটের যিশুর
বিজেপির রোষ সত্ত্বেও ১১৪ ফিটের যিশুর
কপালা বেট্টা সংলগ্ন গ্রামে ১১৪ ফিটের যিশুখ্রিস্টের মূর্তি বসানো নিয়ে বিজেপি–আরএসএসের বিক্ষোভ সত্ত্বেও এই মূর্তির খরচের জন্য গ্রামবাসীরা একলক্ষ টাকা করে দান করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রসের ক্ষমতাশালী নেতা শিবকুমার এই মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
প্রতিটি খ্রিস্টান পরিবার দেবে এক লক্ষ করে
অ্যান্থোনিয়াম্মা মেরি তাঁর কাছে থাকা একশো বছরেরও পুরনো বাইবেল বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টে বলেন, ‘তিনি (যিশু) আমাদের সবকিছু দিয়েছেন। এখন আমাদের সময় এসেছে সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার। এটা বাইবেলে উল্লেখ রয়েছে। আমাদের রবিবারের প্রার্থনা চলাকালীনই বলা হয়েছে যে লম্বা যিশুখ্রিস্টের মূর্তি নির্মাণের জন্য ১ লক্ষ টাকা দান করতে হবে। আমি খুব খুশি হব এই পবিত্র কাজে কিছু অনুদান দিতে পারলে।' একদিকে যখন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি এই মূর্তি নির্মাণের বিরোধিতা করছে, সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা এই মূর্তি নির্মাণের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
কপালা বেট্টা সংলগ্ন গ্রামে ৮০০ বাড়ি রয়েছে। অধিকাংশই খ্রিস্টান। প্রত্যেকটি বাড়ি থেকে ১ লক্ষ টাকা করে দান করা হবে এই ১১৪ ফুট লম্বা মূর্তি নির্মাণের জন্য। রেশম গুটির চাষের ওপরই নির্ভরশীল এখানকার খ্রিস্টান পরিবারগুলি। অ্যান্থোনিয়াম্মা এবং তাঁর স্বামী জ্যোতিনগরে থাকেন, এই এলাকাটি কপালা বেট্টার কাছে। তাঁরা রেশম গুটি ফার্মে কুলির কাজ করেন শুধুমাত্র তাঁদের অন্ন সংস্থানের জন্য। তাঁদের নিজস্ব পোষা একজোড়া ভেড়াও রয়েছে। অ্যান্থোনিয়াম্মা বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে এক লক্ষ টাকা করে দিতে। প্রত্যেক মাসে আমরা কিছু কিছু করে টাকা জমাই এবং চার্চে দান করি। একমাস যদি অর্থের অভাব হয়, তখন আমরা আমাদের ছাগলকে ৬ হাজার টায় নিলাম করি। এই টাকাটা আমাদের পক্ষ থেকে চার্চে দান করি।'
গ্রামবাসীরা এই মূর্তির জন্য নিজেদের সঞ্চয় দিতেও রাজি
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, পাহাড়ের উঁচুতে একটা ক্রসের সামনে তাঁরা প্রার্থনা করেন। এখন, তাঁরা সেখানে একটি মঞ্চ তৈরি করি প্রতীকি ভাবে যিশুখ্রিষ্টের পাঁচ ফুট লম্বা মূর্তি স্থাপন করেছেন। গত মাসেই কংগ্রেস নেতা ডিকে শিবকুমার লম্বা যিশুর মূর্তি নির্মানের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। রেশম গুটি কর্মী লিউইস এবং মেরি তাঁদের চার সন্তান। তাঁরাও এই মূর্তির জন্য অর্থ দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন করা হয় যে কিভাবে তাঁরা এই বড় অঙ্কের টাকার বন্দোবস্ত করবেন? মেরি বলেন, ‘সন্তানদের পড়াশোনা বা বিয়ের জন্য আমার যদি অর্থের দরকার হয়, আমি ঋণ নিয়ে নেব। একলক্ষ টাকা চার্চে দেওয়া আমার দায়িত্ব এবং সেটা আমি পালন করব ঋণ নিয়েই।' লিলি মেরি, যিনি কৃষককে বিয়ে করে সিপাই দোদ্দিতে বাস করেন। কপালা বেট্টার সঙ্গে তাঁর বিশেষ সংযোগ রয়েছে। লিলি বলেন, ‘আমার মেয়ের সন্তান প্রসবের সময় বেঙ্গালুরুর চিকিৎসকরা জানিয়ে ছিলেন মা ও শিশুর মধ্যে যে কোনও একজনকে তাঁরা বাঁচাতে পারবেন। আমরা পাহাড়ে গিয়ে প্রার্থনা করি। এখন আমার নাতনি পাঁচ বছরের। মা ও মেয়ে উভয়ই সুস্থ। আমি প্রত্যেক মাসে এই মূর্তির জন্য টাকা বাঁচিয়ে রাখি। আমরা খুব খুশি যে এই মূর্তি আমাদের জায়গায় হচ্ছে।'
গ্রামের হিন্দুদের যিশুর মূর্তি নিয়ে আপত্তি নেই
এই গ্রামে খুব কম সংখ্যক হিন্দুর বসবাস। তাঁরাও কপালা বেট্টাতে প্রার্থনা জানাতে যান। রামু এবং তাঁর জামাই কৃষ্ণ ডিকে নগরের বাসিন্দা, তাঁরাও যান পাহাড়ে প্রার্থনা জানাতে। কৃষ্ণ বলেন, ‘যিশুর মূর্তি নির্মাণ নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। আমাদের ধর্ম বদল করতেও বলা হয়নি বা দান করতেও কেউ বলেনি।'
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে আমন্ত্রণ জানাতে চলেছে ভারত! জানেন কেন