মুম্বইয়ে গাড়িতে 'ব্রেস্টফিড'-এ ব্যস্ত মা ও শিশু-র উপরে নির্মম আচরণ পুলিশের, ভাইরাল হল ভিডিও
গাড়িতে ব্রেস্টফিডিং করানো অবস্থাতেই তা টেনে নিয়ে গেল ট্র্যাফিক পুলিশের টোয়িং ভ্যান। ফেসবুকে আপলোড হওয়া এই ভিডিও এখন ভাইরাল। যদিও, মুম্বই পুলিশের দাবি, নো-পার্কিং জোনে গাড়ি রাখা থেকেই ঘটনা।
গাড়িতে বসে রয়েছেন এক মা এবং তাঁর কোলে সাত মাসের সন্তান। আর সেই অবস্থায় গাড়ির সামনে হুক লাগিয়ে তা টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে ট্র্যাফিক পুলিশের গাড়ি। মুম্বইয়ে শুক্রবার তোলা এই ভিডিও এখন ভাইরাল হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
এই ভিডিও রীতিমতো চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে। ভাইরাল ভিডিও পোস্ট হওয়ার পরে বহু মানুষ মুম্বই পুলিশকে ধিক্কার জানিয়েছে। জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় মুম্বইয়ের মালাড পশ্চিমের ব্যস্ত এস ভি রোডে নো-পার্কিং জোনে গাড়ি দাঁড় করান যুবরাজ মালি ও তাঁর স্ত্রী রাখি মালি। মুম্বই ট্র্যাফিক পুলিশের নজরে তা আসে। এস ভি রোডে সে সময় কর্তব্যরত ট্র্যাফিক কনস্টেবল শশাঙ্ক রানে এরপর গাড়িটিকে আটক করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী আটক গাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য 'টোয়িং ভ্যান' নিয়ে আসেন।
রাখি মালির অভিযোগ, গাড়ি টানার সময় তিনি পিছনের সিটে বসে সাত মাসের শিশু সন্তানকে ব্রেস্টফিড করাচ্ছিলেন। শিশুটির শরীর ভালো না থাকায় তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন বলেও দাবি করেন রাখি। তাঁর আরও দাবি, মাঝ রাস্তায় শিশুটি সুস্থ বোধ না করায় গাড়ি থামিয়ে তাকে ব্রেস্টফিড করানোর সিদ্ধান্ত নেন। আর সেই সময়ই তাঁদের গাড়ি টেনে নিয়ে যেতে থাকে মুম্বই ট্র্যাফিক পুলিশের 'টোয়িং ভ্যান'।
রাখি মালির স্বামী যুবরাজ বারবার শশাঙ্ক রানেকে অনুরোধ করেন, যাতে ফাইন নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কারণ, তাঁর সাত মাসের শিশু সন্তান অসুস্থ। তাকে জলদি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি। কিন্তু, শশাঙ্ক কোনও কথা না শুনেই টোয়িং ভ্যান দিয়ে রাখি মালির গাড়িকে টানতে থাকেন। এই সমস্ত বিষয়টি মোবাইলের ক্যামেরা বন্দি করেন নাম না জানা এক ব্যক্তি। এই ভাইরাল হওয়া মোবাইল ভিডিওতেই দেখা যায় একটি পুরুষ কন্ঠ বারবার ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মী শশাঙ্ক রানেকে টোয়িং ভ্যান টানা বন্ধ করতে আর্জি করছেন।
ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় মালাড পশ্চিম থানার পুলিশ। শশাঙ্ক আগেই ফোন করে থানায় জানিয়েছিলেন, রাখি এবং তাঁর স্বামী সরকারি কর্মীকে তাঁর কাজে বাধা দিচ্ছেন। শেষমেশ মালাড পশ্চিম থানার পুলিশের মধ্যস্থতায় ফাইন নিয়েই রাখি ও যুবরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা গোটা ঘটনায় ট্র্যাফিক পুলিশ কনস্টেবল শশাঙ্ক পাটিলকে দায়ী করেছেন। যদিও, শশাঙ্কের দাবি, নো-পার্কিং জোনে গাড়ি রেখেই অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন রাখি ও যুবরাজ। ফাঁকা গাড়ি দেখে তিনি যখন টোয়িং ভ্যান আনার জন্য ফোন করেন সে সময় সেখানে পৌঁছন রাখি ও যুবরাজ। কিন্তু ফাইন না দিয়েই যুবরাজ ও রাখি তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে শশাঙ্কের অভিযোগ।
মুম্বই ট্র্যাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার অমিতেশ কুমার জানিয়েছেন, ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছেন পশ্চিম শহরতলীর ডিসিপি ট্র্যাফিক। রিপোর্ট পাওয়ার পরই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা সম্ভব বলে জানান তিনি।
মালাড ট্র্যাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর বিশ্বনাথ শিলার জানিয়েছেন, টোয়িং ভ্যান দিয়ে গাড়িটিকে টানা শুরু হতেই তাতে সন্তানকে নিয়ে রাখি উঠে বসেছিলেন। এরপরই শশাঙ্ক রানে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে সাহায্য চান।