নিপার আতঙ্ক! এখনও কেরলের বাইরে সংক্রমণ না ছড়ালেও তৈরি থাকছে ভারতের অন্যান্য রাজ্য
ভারতের বিভিন্ন রাজ্য নিপা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে।
কেরলে নিপা মহামারিতে এর মধ্যেই ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। কেরলের অবস্থা দেখে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে চাইছে না দেশের অন্যান্য রাজ্যও। দেশ জুড়েই আতঙ্ক বাড়ছে। বিভিন্ন রাজ্যে নিপা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। এখনও সেসব গুজব বলেই প্রমাণিত হয়েছে। কেরলের বাইরে আর কোনও রাজ্যে এখনও নিপা সংক্রমণ দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারও সাফ জানিয়েছে কেরলের এক এলাকাতেই আটকানো সম্ভব হয়েছে সংক্রমণ। কিন্তু একবার রোগ ছড়াতে শুরু করলে তাকে সামাল দেওয়া অত্যন্ত সমস্যার। তাই সংক্রমন ছড়ানোর আগে থেকেই বিভিন্ন রাজ্য সতর্ক থাকতে চাইছে। গত দুসপ্তাহে নিপা সংক্রমণ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধি প্রকাশ করেছে। এই রোগের বিপদ ও লক্ষণ নিয়ে রাজ্যবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি সংক্রম ঠেকাতে কি করা উচিত, না করা উচিত সেসব নির্দেশও রয়েছে সেই স্বাস্থ্যবিধিতে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক নিপা আতঙ্কে কোন রাজ্যে কি অবস্থা। কি কি ব্য়বস্থাই বা নেওয়া হচ্ছে রাজ্যগুলির তরফে।
কেরল - কেরলে নিপা সংক্রমণে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে রাজ্য জুড়ে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, বড় প্রভাব পড়ছে রাজ্যের অর্থনীতিতেও। রাজ্যের অন্যতম আয়ের উৎস পর্যটন। কিন্তু নিপার দাপটে এখন এ রাজ্যে আর কেউ বেড়াতে আসতে চাইছেন না। এর মধ্যেও যারা আসছেন দক্ষিণের এই রাজ্যটিতে, তাঁদের জন্য বিশেষ নির্দেশ জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বলা হয়েছে, নিপা আক্রান্ত কোঝিকোর, মলপ্পুরম, ওয়ালাড় ও কান্নুর জেলায় না যাওয়াই ভাল। গেলে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। আরব আমিরশাহির মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশে সব্জি-ফল রপ্তানী করেও ভাল লাভ করে রাজ্যটি। আপাতত বন্ধ তাও। গত মঙ্গলবারই আমিরশাহি কেরল থেকে কাঁচা সব্জি ফল আমদানির এপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কেরল থেকে তাজা কোনও পন্যই সেদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।
দিল্লি - এরাজ্যে এখনও কোনও নিপা সংক্রমনের ঘটনা না ঘটলেও গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে খেজপরের রস পান করতে নিষেধ করার পাশাপাশি গাছ থেকে পেরে বা গাছের নিচে পড়া থাকা আম খাওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে।
উত্তর পূর্বের রাজ্য - মেঘালয়তে নিপা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বলে খবর রটেছিল সোশাল মিডিয়ায়। কিনেতু রাজ্যের হেল্থ সাপর্ভিস ডিরেক্টর কে রাজো গত মঙ্গলবার জানিয়ে দেন, সেগুলি নেহাত রটনাই। তবে উত্তর পূর্বের রাজ্য গুলিতে যে কোনও সময় এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সাবধানও করেছেন রাজো। তাঁর মতে, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে পর্যটনের টানে সারা দেশ থেকে লোক আসেন। কেরল থেকেও অনেকেই বেড়াতে আসেন এসব এলাকায়। কাজেই নিপা ছড়িয়ে পড়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তাই আগে থেকে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। ফল খাওয়ার আগে ভালকরে ধুয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে ভিন রাজ্য থেকে ফেরা ব্যক্তিদের মধ্যে লো গ্রেড' জ্বর দেখা গেলেই হাসপাতালে খবর দিতে হবে। সেইসঙঅগে হাসপাতালগুলিকেও তারি রাখা হচ্ছে সংক্রমণের মোকাবিলা করার জন্য। মনিপুরের রাজধানী ইম্ফলের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব মেডিকাল সায়েন্সেস ও জে এন ইনস্টিটিউট অব মেডিকাল সায়েন্সেসে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরী রাখা হচ্ছে।
হিমাচল প্রদেশ - গত ২৫ মে নিপা সতর্কতা জারি করে হিমাচল। অন্যান্য স্বাস্থ্য নিরদেশিকার মতোই তাতেও বাদড়ে আধখাওয়া ফল, শূয়োর ইত্যাদি থেকে এই ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে বলে সতর্ক করা হয়েছে। কাজেই সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে শূয়োর ও শূয়োর পালকদের সান্নিধ্য এড়িয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে এসময় কাঁচা ফলও না খেলেই ভাল। এ রাজ্যের সিরমাউর জেলায় কয়েকটি বাদুড়ের মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন নিপা সংক্রমণেই মৃত্যু হয়েছে ওই বাদুড়দের। কিন্তু পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি শনিবারই জানিয়েছে ওই বাদুড়দের মৃত্যুর জন্য নিপা দায়ী নয়।
বিহার - গত শনিবার বিহারে নিপা নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য সরকার। তবে এটা শুধুমাত্র কেরলের উজ্ভূত পরস্থিতির জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা বলে জানায় সরকার। এখানেও বাদুড় ও শূয়োর থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। না ধুয়ে ফল খেতে বারণ করা হয়েছে। নিপা নিয়ে ফদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও। শুধু নিপা নয়, সাম্প্রতিক কালে অনেক বাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগই মারাত্মক আকার ধারণ করছে। সেসব নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বিহার সরকার পঞ্চায়েত স্তরে স্বাস্থ্যমেলা করার কথা ভাবছে।