মুম্বই আবাসনে ভ্যাকসিন দুর্নীতি, টিকাকরণের পর নেই কোনও উপসর্গ, আতঙ্কে বাসিন্দারা
মুম্বই আবাসনে ভ্যাকসিন দুর্নীতি, টিকাকরণের পর নেই কোনও উপসর্গ, আতঙ্কে বাসিন্দারা
দেশে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন ঘাটতির মাঝেই প্রকাশ্যে এল ভ্যাকসিন দুর্নীতির ঘটনা। মুম্বইয়ের কান্দিভালি এলাকার এক আবাসনের বাসিন্দাদের অভিযোগ তাঁরা ভ্যাকসিন দুর্নীতির শিকার হয়েছেন এবং তাঁদের ভুয়ো কোভিড–১৯ ভ্যাকসিনের ডোজ দেওয়া হয়েছে।
টিকাকরণ শিবির হিরানন্দানি আবাসনে
গত ৩০ মে হিরানন্দানি এস্টেট সোসাইটিতে ভ্যাকসিনেশন শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। আবাসন চত্ত্বরের মধ্যেই প্রায় ৩৯০ জন মানুষ কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। আবাসনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে এক সুবিধাবাদী ব্যক্তি রাজেশ পাণ্ডে নিজেকে কোকিলাবেন হাসপাতালের প্রতিনিধি দাবি করে সোসাইটির কমিটির সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এই টিকাকরণ কর্মসূচির সমন্বয়ে ছিলেন সঞ্জয় গুপ্তা বলে এক ব্যক্তি এবং তৃতীয় জন হলেন মহেন্দ্র সিং, যিনি সোসাইটির সদস্যদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন।
আবাসনের এক বাসিন্দা হিতেশ প্যাটেল বলেন, 'আমার ছেলে টিকা নেয়। প্রত্যেক ডোজের জন্য আমাদের ১২৬০ টাকা করে দিতে হয়েছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর আমাদের কাছে কোনও মেসেজ আসেনি। আমি এটাও বলতে চাই যে ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় আমাদের কোনও ছবি তোলার বা সেলফি নেওয়ার অনুমতি ছিল না।' ৩৯০ জন বাসিন্দা ১২৬০ টাকা করে ভ্যাকসিনের জন্য দিয়েছিলেন, এই হিসাব করলে সোসাইটির পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ওই ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
টিকা নেওয়ার পর উপসর্গ দেখা যায়নি
সন্দেহ আরও জোরদার হয় যখন টিকা নেওয়া আবাসিকের বাসিন্দাদের মধ্যে টিকাকরণের পরের কোনও উপসর্গ দেখা যায়নি। প্রসঙ্গত, কোভিশিল্ড বা কোভ্যাকসিন টিকা নেওয়ার পর মাথাব্যাথা, হাল্কা জ্বর হওয়ার উপসর্গ লক্ষ্য করা গিয়েছে, যা খুবই সাধারণ বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের কোনও উপসর্গ দেখা দেয়নি।
শংসাপত্রে বিভিন্ন হাসপাতালের নাম
আবাসনের আর এক বাসিন্দা ঋষভ কামদার বলেন, 'আমরা খুব অবাক হয়েছি যে কোনও উপসর্গ বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। আমরা আরও অবাক হই এটা দেখে যে আমরা টিকাকরণের কোনও শংসাপত্র পায়নি। ১০-১৫ দিন পর আমরা শংসাপত্র পাই।' শুধু তাই নয়, টিকাকরণের শংসাপত্রে নানাবতী, লাইফলাইন, নেসকো বিএমসি টিকাকরণ কেন্দ্র সহ ভিন্ন ভিন্ন হাসপাতালের নাম দেওয়া রয়েছে। যা দেখার পর বাসিন্দাদের সন্দেহ আরও জোরালো হয়। যখন এইসব হাসপাতালগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় তখন তারা কোনও আবাসন চত্ত্বরে টিকাকরণ কর্মসূচি করার বিষয়টি অস্বীকার করে।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি
নানাবতী হাসপাতালের পক্ষ থেকে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, 'সম্প্রতি একটি ঘটনা আমাদের নজরে এসেছে যে কান্দিভালির এক আবাসনের বাসিন্দারা যে কোভিড-১৯-এর শংসাপত্র পেয়েছেন সেখানে নানাবতী ম্যাকঞস সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের নাম রয়েছে। আমরা এটা বলতে চাই যে এ ধরনের কোনও আবাসন চত্ত্বরে আমরা টিকাকরণ শিবিরের আয়োজন করিনি। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছি।' অন্যদিকে কোকিলাবেন আম্বানি হাসপাতালও একই কথা জানিয়েছে যে তারা আবাসনের সদস্যদের জন্য কোনও টিকাকরণ কর্মসূচির আয়োজন করেনি।
আতঙ্কিত আবাসনের বাসিন্দারা
এই বিবৃতি প্রকাশ্যে আসার পরই হিরানন্দানি আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়, তাঁদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে তাঁদের যে ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হল তা আদৌও প্রকৃত ভ্যাকসিন বা অন্য কিছু। আবাসনের বাসিন্দা ধারা মদানি বলেন, 'আমি শুধু ভ্যাকসিনটি আসল কিনা তা জানতে চাই। ৩৯০ জনের বেশি বাসিন্দা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাই আমরা জানতে চাই আমাদের শরীরে কি প্রবেশ করানো হল। আমরা এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চাইছি। আমাদের মনে হচ্ছে এটা বড় কোনও দুর্নীতি যা বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে।'
মুম্বই পুলিশের তদন্ত
মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে যে তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে বিভিন্ন দিক থেকে এবং তারা আসল বিষয়টিকে সামনে আনবে। হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মীদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তিনজন অভিযুক্তের মধ্যে রাজেশ পাণ্ডে ও সঞ্জয় গুপ্তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে তবে মহেন্দ্র সিং কোথায় তা তারা জানে না।