‘ট্যাবুতেই’ আটকে টিকাকরণ প্রক্রিয়া, অবশেষে নতুন আশার আলো দেখছে ভারতের বিখ্যাত ‘গাঁজার’ গ্রাম
‘ট্যাবুতেই’ আটকে টিকাকরণ প্রক্রিয়া, অবশেষে নতুন আশার আলো দেখছে ভারতের বিখ্যাত ‘গাঁজার’ গ্রাম
হিমাচলপ্রদেশে কুলু ভ্যালির পার্শ্ববর্তী পাহাড় ঘেরা মালানা গ্রামের কথা তো অনেকেরই জানা। রতবর্ষের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম হিসাবে খ্যাতি রয়েছে এই গ্রামের। গ্রামের মানুষদের বিশ্বাস তারা মূলত গ্রীক বীর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের বংশধর। যদিও তার পিছনেও রয়েছে একাদিক ঐতিহাসিক কারণ। অন্যদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮৮৫৯ ফুট উঁচুতে এই গ্রামে উৎপাদিত গাঁজা থেকে তৈরি করা চরস আবার পৃথিবী বিখ্যাত। কিন্তু দেশের মধ্যে প্রথম রাজ্যে হিসাবে টিকাকরণে হিমাচল প্রদেশ বড় সাফল্য পেলেও এই গ্রামে এসেই থমকায় গোটা প্রক্রিয়া।
কী বলছে ধর্মীয় বিশ্বাস
সামাজিক 'ট্যাবুর' কারনে শুরু টিকা নিতে অস্বীকার করে গোটা গ্রাম। বর্তমানে গ্রামবাসীদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপআলোচনার পর তাদের টিকা দিতে সমর্থ হয়েছে কুল্লু প্রশাসন। এদিকে মালানাবাসীদের ধর্মবিশ্বাস নিয়েও আছে অনেক গল্প। প্রচলিত কোনো ধর্ম বিশ্বাসে তারা বিশ্বাসী নয়। তাদের একমাত্র দেবতার নাম 'জমলু ঋষি'। হিন্দু পুরানগুলোতে এই ঋষির নাম পাওয়া যায়। তাদের বিশ্বাস যে কোনও বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করবে 'জমলু ঋষিই'। তাই তাদের করোনাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
দীর্ঘদিন থেকেই আলোচনা চালাচ্ছিল হিমাচল প্রশাসন
এমনকী অনেক গ্রামবাসী এও বলেন টিকা নিলে রুষ্ট হতে পারেন তাদের আরাধ্যা দেবতা। এদিকেগোটা গ্রাম ঘুরে জমলু ঋষির কোনো বিগ্রহ বা মন্দির খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু প্রায় প্রত্যেকের ঘরেই রয়েছে জমলু ঋষি প্রণীত কোনো বাণী বা মুর্তি রয়েছে। এমনকী জমলু ঋষির বেশ কিছু সেবায়েতও রয়েছে গোটা গ্রামে। তাদের নির্দেশেই নেওয়া হয়স কোনও বড় সিদ্ধান্ত। বর্তমানে করোনা টিকাকরণের জন্য তাদের সাথেই বেশ কয়েক দফায় আলোচনা সাড়ে হিমাচল প্রশাসন।
ঠিক কী কারণে ট্যাবু রয়েছে মালানাবাসীদের
সহজ কথায় এখানকার মানুষ জমলু দেবতাকে ভীষণ মানে৷ তাদের ধারণা, তাদের জীবন-যাপন থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয় এই দেবতাই নির্ধারণ করেন৷ এখানকার মানুষ নিজেরাই পঞ্চায়েতের সদস্য নির্বাচন করে এবং পঞ্চায়েতই সব সমস্যার বিধান দেয়৷ গরমের সময় বিদেশি পর্যটকদের ঢল নামে এই গ্রামে। যান বহু ভারতীয়ও। কিন্তু ছোঁয়া যায়না গ্রামের কোনো জিনিস। আর তা অমান্য করলই গুনতে হয় জরিমানা। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস বহিরাগত কেউ তাদের গ্রামের কোনও জিনিস ছুঁলে বা তাদের স্পর্শ করলে তারা অপবিত্র হয়ে যায়। আর ঠিক এই কারণেই করোনা টিকার প্রতি ছিল ছুতমার্গ।
অবশেষে মিলেছে সাফল্য
এদিকে রাজ্যের অন্যান্য এলাকার সমস্ত মানুষকে কমপক্ষে করোনা টিকার একটি ডোজ দেওয়া হয়ে গেলেও বাধ সাধছিল মালানা গ্রাম। আর সেই কারণেই তাদের সাথে দীর্ঘদিন থেকে আলোচনা চালাচ্ছিল হিমাচল প্রশাসন। অবশেষে মিলেছে সাফল্য। শুরু হয়েছএ টিকাকরণ। এই প্রসঙ্গে কুলু জেলার ডেপুটি কমিশনার আশুতোষ গর্গ বলে, "স্থানীয় ভগবান জামলু ঋষির প্রতিনিধিদের অনুমতি নিয়েই এখানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ যেমন স্কুল ভবন তৈরি, রাস্তা ইত্যাদির নির্মাণ শুরু করতে হয়। যাইহোক, করোনা ভ্যাকসিন শট নিতে তাদের বোঝানো একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ভ্যাকসিন সম্পর্কে তাদের ট্যাবুর কারণে আমাদের কাজেও গতি আসছিল না।"