ঘুরে গিয়েছে চাকা! একদিনের মাথায় ফের গতি পেতে শুরু করল কৃষক আন্দোলন
ট্রাক্টর ব়্যালি ঘিরে হিংসা কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতি বদলে দিয়েছিল। তিনটি কৃষক সংগঠন আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়। সীমান্ত থেকে অনেক কৃষকই ফিরে যেতে শুরু করেন। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠেন অনেকেই। সেই সময় একটা দৃশ্য আবার বদলে দিল ছবিটা। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইতের কান্নাই হয়ে উঠল টার্নিং পয়েন্ট। ফের গাজিয়াবাদ সীমান্তে ভিড় করতে শুরু করেন কৃষকরা। এদিকে এই আবহে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ফোন করেন টিকাইতকে। তিনি সব ধরণের সমর্থন জানানোর কথা জানান টিকাইতকে।
নিজেদের মিছিলের রুট ভেঙে ট্রাক্টর মিছিল?
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ২৬ জানুয়ারি বিক্ষোভকারী কৃষকরা নিজেদের মিছিলের রুট ভেঙে ট্রাক্টর নিয়ে ও হেঁটে দিল্লিতে ঢুকে পড়ে। সেখানে তাঁদের বাধা দেয় পুলিশ। তখনই পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে। আইটিও এলাকায় ধুন্ধুমার বাঁধার পর লালকেল্লায় ঢুকে পড়েন বিক্ষোভরত কৃষকরা। সেখানে নিজেদের পতাকাও তুলে দেন তাঁরা। যদিও হিংসার ঘটনায় তাঁদের কোনও হাত নেই বলে দাবি করেন কৃষক নেতারা। সে দিনের ঘটনায় ৩০০-র বেশি পুলিশকর্মী জখম হন।
ব্যাকফুটে রয়েছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা
এদিকে ওই ঘটনার পর থেকেই অনেকটা ব্যাকফুটে রয়েছেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্তে যাতে আর কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় তার জন্য গতকাল বিকেল থেকেই বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি খারাপ হতে দেখে আন্দোলন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একাধিক কৃষক। এমনকী আন্দোলন স্থান ছেড়ে ফিরে যান অনেকেই।
ফিরে যাওয়া কৃষকদের ফের আন্দোলনমুখী করতে বাধ্য করে রাকেশের কান্না
আর ঠিক সেই সময় ফিরে যাওয়া কৃষকদের ফের আন্দোলনমুখী করতে বাধ্য করে রাকেশের কান্না। গতকাল সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, 'আমি আত্মসমর্পণ করব না। প্রয়োজনে গ্রাম থেকে প্রতিবাদস্থলে আরও কৃষকদের যোগ দিতে বলব। আমি অনশনে বসব। যতক্ষণ না আইন প্রত্যাহার হচ্ছে ততক্ষণ কোথাও যাব না। দরকারে আত্মহত্যা করব। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ করব না। কৃষকদের মারার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপির লোকেরা।' এই কথা বলার সময় ধরে আসে তাঁর গলা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আর সেই ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
টিকাইতের এই কান্নাই বদলে দেয় গোটা পরিস্থিতি
টিকাইতের এই কান্নাই বদলে দেয় গোটা পরিস্থিতি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রায় শ'খানেক মানুষ তাঁর সমর্থনে তাঁর উত্তরপ্রদেশের বাড়ির বাইরে স্লোগান দিতে শুরু করেন। এমনকী, এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তাঁর ভাই নরেশ টিকাইতের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল। পুলিশের লাঠি খাওয়ার থেকে বিক্ষোভস্থান খালি করে দেওয়াই ভালো বলে জানিয়েছিলেন নরেশ।
কৃষকদের মহাপঞ্চায়েত
পাশাপাশি আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া একাধিক কৃষককে ফের গতরাতে গাজিপুর সীমান্তে জমায়েত করতে দেখা যায়। রাত ১১টা নাগাদ মেরঠ, ভাগপত, মুরাদনগরসহ একাধিক জায়গা থেকে কয়েকশো কৃষক গাজিপুরের দিকে রওনা দেন। এছাড়া রাকেশের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর নেটিজ়েনদের একাংশের সমালোচনার মুখে পড়েন আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া কৃষকরা। নেতাকে একা ছেড়ে তাঁদের আন্দোলন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ঠিক হয়নি বলে জানান অনেকেই। আজ কৃষকদের 'মহাপঞ্চায়েত' বা বড়সড় একটি বৈঠকও হয়। সেখান থেকেই আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির হয়।