২০১৯-এ মিলেছিল 'অশনি সঙ্কেত', কেন আট বছর পুরোনো আতঙ্ক ফিরল উত্তরাখণ্ডে?
২০১৯ সালের একটি গবেষণামূলক সমীক্ষাতেই মিলেছিল অশনি সঙ্কেত। তবে তাতেও ঘুম ভাঙেনি কর্তৃপক্ষের। যার জেরে রবিবারে উত্তরাখণ্ডে ফিরে এল আট বছর পুরোনো সেই আতঙ্ক। বিগত ৪০ বছরের তথ্যের সাহায্যে হিমালয়ের উপর সমীক্ষা চালানো হয়েছিল সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালের দ্বারা, যার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালে। নেপাল, ভুটান, চিন, ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকার উপর চলা এই গবেষণায় দেখা গিয়েছিল যে নন্দাদেবীর সেই হিমবাহ ভাঙার মুখে।
বরফ গলার হার দ্বিগুণ হয়েছে
প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছেল যে ১৯৭৫ সাল থেকে ২০০০ পর্যন্ত নন্দাদেবী হিমবাহে যত বরফ বার্ষিক ভাবে গলত, তার থেকে দুই গুণ দ্রুত হারে বরফ গলতে শুরু করেছিল বিগত দুই দশক ধরে। ২০০০ সাল থেকে নন্দাদেবী হিমবাহে দেড় ভার্টিকাল ফুট বরফ গলতে থাকে। যা থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল যে নন্দাদেবী হিমবাহে ভাঙন সময়ের অপেক্ষা। এই গবেষণায় মোট ৬৫০টি হিমবাহের উপর সমীক্ষা চালানো হয়। মার্কিন গুপ্তচর স্যাটেলাইটের তোলা যেসব ছবি ২০০০ সালে যখন ডিক্লাসিফাই করা হয়, তার সাহায্যেই চালানো হয়েছিল এই সমীক্ষা।
পাহাড়ি এলাকায় লাগাতার বিস্ফোরণ
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা সত্ত্বেও হৃষিগঙ্গা এবং ধৌলিগঙ্গা নদীর উপর দুটি পরপর বাঁধের কারণে সংবেদনশীল পাহাড়ি এলাকায় লাগাতার বিস্ফোরণ এবং সুড়ঙ্গ খননের ফলে প্রকৃতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। হিমালয়ের হিমবাহ নিয়ে ইসরোর রিসোর্স সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি শতকের প্রথম ২০ বছরে মধ্য হিমালয়ের এলাকাভুক্ত চামোলিতে বরফ গলে যাওয়ার মাত্রা বেড়েছে। সেই অঞ্চলে বরফগলা নিয়ে বারবার সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
৮ মাস আগেও সতর্ক করেছিলেন বহু বিজ্ঞানী
এছাড়াও বহু বিজ্ঞানী ৮ মাস আগেও সতর্ক করেছিলেন উত্তরাখণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীরের এমন সব হিমবাহ রয়েছে তা যে কোনও সময় ফেটে যেতে পারে। এদিকে জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশের পার্বত্য এলাকায প্রায় ২০০টিরও বেশি হিমবাহ রয়েছে। যার মধ্যেই বেশিরভাগই জলবায়ু পরবির্তনের কারণে এখন দ্বিগুণ হারে গলছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা
এদিকে উত্তরাখণ্ডের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ১৪টি দেহ উদ্ধার হয়েছে৷ এখনও নিখোঁজ ১৭০ জন৷ অপরদিকে, তপোবনের টানেলে আটকে থাকা ১৬ জনের মধ্যে ১২ জনকে উদ্ধার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী৷ উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারকাজ৷ উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে সেনা।
উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে সেনার চারটি বাহিনী
জোশিমঠের কাছে রিঙ্গি এলাকায় সেনার চারটি বাহিনী রয়েছে। আরও দুই বাহিনী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুটি জেসিবি মেশিন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্সের কর্মীদের পাঠানো হয়েছে রিঙ্গি এলাকায়। আকাশপথে উদ্ধারের জন্য পাঠানো হয়েছে সেনার চিতা হেলিকপ্টার। প্রস্তুত রাখা হয়েছে, মার্কোস কমান্ডোদেরও।
মৃতদের পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণের ঘোষণা
জানা গিয়েছে, দিল্লি থেকে ১৬ জন মার্কোস কমান্ডো ও মুম্বই থেকে ৪০ জন কমান্ডোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে উত্তরাখণ্ডের ধসে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুরুতর আহতদের পরিবারপিছু দেওয়া হবে ৫০ হাজার টাকা। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিবেন্দ্র সিং রাওয়াত মৃতদের পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।