উচ্চবর্ণের রাস্তা ব্যবহার করা যাবে না, দলিতের দেহ নালা–নর্দমার ওপর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হল শ্মশানে
আবারও বর্ণবৈষম্যের দৃশ্য দেখা গেল এ দেশে। উচ্চবর্ণের মানুষের বসবাসের জায়গা ব্যবহার করা যাবে না, তাই দলিত সম্প্রদায়ের মৃতদেহকে পাথুরে রাস্তার ওপর দিয়ে জঞ্জাল ফেলার জায়গা ও নালার মধ্যে দিয়ে শেষকৃত্যে নিয়ে যাওয়া হল। এই ভিডিও সামনে আসতেই সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। সেখানে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একদল মানুষ মৃতদেহ নিয়ে আবর্জনা, নালার মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। তারপরে জানা যায় এই ঘটনা তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর জেলার বিধি গ্রামের। সেখানে প্রায় ১৫০০ ঘর দলিতের বাস। কিন্তু গ্রামবাসীদের সব জায়গা দিয়ে যাওয়ার অধিকার নেই। বিশেষ করে গ্রামের যে এলাকায় উঁচু জাতের মানুষ থাকেন সেখানে তাঁদের যাওয়া মানা। তাই কারও মৃত্যু হলেও সেই রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন না তাঁরা। ঘুরপথে শ্মশানে নিয়ে যেতে হয় তাঁদের। ৭৩ বছরের পাপ্পামালের দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় কঠিন রাস্তা পার হয়েই যেতে হয়েছে দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে।
সেই গ্রামেরই এক বাসিন্দা বিনোদ জানিয়েছেন, 'আমরা এর আগে অনেকবার সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি যাতে আমাদের একটা আলাদা রাস্তা করে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও ফল পাওয়া যায়নি। উঁচু জাতের লোকেরা যেখানে থাকেন সেখানে ভালো রাস্তাঘাট আছে। তাঁরা সহজেই শ্মশানে চলে যান। কিন্তু আমাদের কাছে সেটাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষাকালে তো আরও সমস্যা হয়। তখন আরও বেশি ঘুরতে হয় আমাদের। এমনকি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না আমাদের।’ রাজা নামের আর এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, 'আধ কিলোমিটারের পথ যেতে আমাদের আড়াই কিলোমিটার ঘুরতে হয়। আমরা শুধুমাত্র একটা ভালো রাস্তা ও শব দাহ করার জন্য বৈদ্যুতিক চুল্লি চাই।’ তাঁরা প্রশাসনের কাছে দাবি করেছেন যে নালার ওপর একটা ব্রিজ গড়ে দেওয়া হোক, যাতে সহজেই শ্মশানে পৌঁছে যাওয়া যায়। কিন্তু প্রশাসন আজও কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
তবে এই ঘটনাই প্রথম নয়। এ বছরই আগস্ট মাসে এরকম আরও একটি ঘটনা সামনে আসে। তামিলনাড়ুর ভেলোরে ৪৬ বছরের এক দলিতের মৃত্যু হলে উঁচু জাতের বাসিন্দারা তাঁদের জমির মধ্যে দিয়ে শবযাত্রা নিয়ে যেতে দেননি। ফলে বাধ্য হয়ে ২০ ফুট উঁচু একটি ব্রিজ থেকে মৃতদেহ জলে ফেলে দিতে বাধ্য হন তাঁরা।