কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২১ : কোভিড গহ্বর থেকে সাধারণ মানুষকে তুলে আনতে কী করতে পারে কেন্দ্র?
কোভিড পরিস্থিতির আবহে প্রথম এবং সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল আয় বৈষম্য। যা কোভিড-১৯ দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর আরও গভীর হয়েছে ও আরও বিস্তার লাভ করেছে। আর এর কারণ হল, প্যানডেমিকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং সমাজের ভিন্ন ভিন্ন স্তরে রোজগার কমেছে। যখন শ্রমজীবী শ্রেণি চাকরি হারিয়েছে এবং তাদের সঞ্চয় ক্রমশ কমে গিয়েছে, তখন একই সঙ্গে অন্য একটি শ্রেণির উন্নতি হয়েছে।
আয়ের বৈষম্য
কয়েক দিন আগেই প্রকাশিত হওয়া অক্সফামের রিপোর্ট থেকে সেটা স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে গত ১০ মাসে ভারতীয় ধনকুবেরদের সম্পদের পরিমাণ ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রিপোর্ট অনুসারে, এই সময়কালে শীর্ষস্তরের ১০০ জন কোটিপতির সম্পদ যে পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা দিয়ে দশ বছর ধরে মনরেগা প্রকল্প চালু রাখা যায়।
কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়নি
অন্যদিকে কর্পোরেটদের সম্পদের এই বৃদ্ধি পাওয়া আবার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনাকে একই ভাবে উজ্জ্বল করতে পারেনি। এই সব কারণের জন্যই এখনও চাকরিতে নতুন নিয়োগের বিষয়টি গতি পায়নি। আর অনেক জায়গায় যাঁরা কাজ করছেন, সেই কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এটি সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য এবং তা বজায় রাখার উপর ক্ষতিকারক হবে।
গ্রামীণ মজুরির সমস্যা
দ্বিতীয় সমস্যাটি হল গ্রামীণ মজুরির বিষয়টি একেবারে থেমে যাওয়া। কম পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত এটা চলছে। দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যত লোক কাজ করে, তার প্রায় ৪৩ শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে রয়েছে। ভারতে গ্রামীণ অংশের এই কাজে মজুরি না বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সামগ্রিক ভাবে চাহিদাও হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে শিল্প সামগ্রীর চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এই শিল্প সামগ্রী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে উৎপাদিত হয় এবং এমএসএমই গুলি উৎপাদন করে।
উৎপাদন কমে গিয়েছে ও ছাঁটাই হয়েছে
এর ফলে ভারতের শহরাঞ্চলে ও এমএসএমই-গুলিতে উৎপাদন কমে গিয়েছে ও ছাঁটাই হয়েছে। এর ফলে আয় কমে গিয়েছে। যার জেরে চাহিদা আরও হ্রাস পেয়েছে এবং মন্দার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিয়েছে। সুতরাং কৃষি এবং এমএসএমই - কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন করে গড়ে তোলার কাজ অবিলম্বে শুরু করা প্রয়োজন। কারণ, এই দু'টি ক্ষেত্র যৌথভাবে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান তৈরি করে।
আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা খুব প্রয়োজন
আয়ের বৈষম্য সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলায় আরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করা খুব প্রয়োজন। আর এই ভাবেই মানুষের আয় বৃদ্ধি করা যাবে। এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে বেকারত্বের যে সমস্যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তা শুধুমাত্র কোভিড-১৯ এর জন্য হয়নি। বাস্তব পরিস্থিতি হল এর জেরে সংকটজনক অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সুতরাং এই সমস্যা অনেক বেশি পরিকাঠামোগত।
চাকরি হারানোর ঘটনাকে কমাতে হবে
এই পরিস্থিতিতে বর্তমান কর্মচারী ও যাঁরা নতুন নিযুক্ত হচ্ছেন, সেই সব কর্মচারীদের জন্য নিয়োগকারী সংস্থাকে মজুরির কিছুটা ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্তত কিছু সময়ের জন্য এটা করা যেতে পারে। এই ধরনের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হলে, তা চাকরি হারানোর ঘটনাকে কমাতে পারবে। আর এই প্যানডেমিকের সময় কর্মীদের কাজের স্থিতিশীলতা তৈরি করবে এবং আয় সুনিশ্চিত করবে।
শ্রমিকদের দুর্দশার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে
অন্যদিকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের যে দুর্দশার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই বিষয়টিও জরুরি ভিত্তিতে মোকাবিলা করা দরকার। কারণ, তাঁরা মোট শ্রমশক্তির মধ্যে ৯৭ শতাংশ। তাঁদের সম্পর্কে তথ্য ভান্ডার তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে। একই ভাবে তাঁদের হাতে যেন খুব দ্রুত নগদ টাকা পৌঁছায়, সেই বিষয়টিও সুনিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে যে শুধু তাঁদের জীবন জীবন স্থিতিশীল হবে তা নয়, আগামী দিনের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে।
মনরেগা এবং কৃষিক্ষেত্রের জন্য অনেক বেশি পরিমাণে বরাদ্দ থাকা দরকার
দ্বিতীয়ত, মনরেগা এবং কৃষিক্ষেত্রের জন্য অনেক বেশি পরিমাণে বরাদ্দ থাকা দরকার। যা গ্রামে থাকা মানুষদের চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে। যার ফলস্বরূপ চাহিদার বৃদ্ধি আরও বেড়ে যাবে। যা এই সময়ে অত্যন্ত প্রয়োজন। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ ৬.২ থেকে ৬.৫ এর মধ্যে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এর জন্য সরকারকে আরও খরচ করার বিষয় থেকে পিছিয়ে এলে হবে না। এটা মনে রাখতে হবে যে আমরা অভূতপূর্ব একটি সংকটের মধ্যে পড়েছি। আর এর জন্য আমাদের অসাধারণ নীতির রূপয়াণের প্রয়োজন।