বিশ্ব বাজারে তলানিতে ভারতীয় টাকার মূল্য, হুড়মুড়িয়ে দাম পড়ল কারেন্সির
বিশ্ব বাজারে তলানিতে ভারতীয় টাকার মূল্য, হুড়মুড়িয়ে দাম পড়ল কারেন্সির
রাশিয়া-ইউক্রেন এর বিবাদ যে বিশ্বযুদ্ধের চেহারা নিতে পারে তা আগেই জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এই যুদ্ধ ঠিক সামরিক আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের যুদ্ধ নয়, এ হল বিশ্ব বাজার এবং অর্থনৈতিক ধ্বসের যুদ্ধ। যার প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করে দিয়েছে দুনিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশেই। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও কড়া প্রভাব পড়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের। এরইমধ্যে রাশিয়াকে বয়কট করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। এই কঠিন পরিস্থিতির প্রভাব থেকে বাদ যায় ভারতও । গোটা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতীয় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে বিস্তর। লাহাতার দেশের শেয়ার বাজারে ধস ও টাকার মূল্য নিম্নমুখী হওয়ার ফলে চিন্তার ভাঁজ বিশেষজ্ঞদের কপালে।
রেকর্ড পতন টাকার দামে
সোমবার সপ্তাহের প্রথম করমদিবসেই রেকর্ড পরিমানে নেমে গেল টাকার দাম। খোলাবাজারে সোমবার টাকার দাম নামল অনেকটাই। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে গিয়েছে। ক্রমাগত বেড়ে চলেছে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য ঘাটতি সবকিছুই প্রভাব ফেলেছে ভারতীয় মুদ্রায়। যাচ্ছে সোমবার টাকার দাম এতটাই নেমে গিয়েছে যে এর আগে টাকার দাম এতটা কখনোই নামেনি। আর এতেই যথেষ্ট চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কপালে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন এইরকম চলতে থাকলে অচিরেই ধসে যাবে দেশের অর্থনৈতিক ইমারত, আর যার ফল সরাসরি পড়তে পারে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্র গুলিতে। ফলে ফের কয়েকশো মানুষের কাজ হারানোর আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে আবার প্রবল মন্দার কালো ছায়াও ঘনাতে পারে বলে আশঙ্কা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
অর্থের মূল্য
ভারত সহ গোটা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই পতন দেখা দিয়েছে কারেন্সির। বিশেষত চিন্তা বাড়ছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থান এবং সেই সেই দেশের প্রচলিত কারেন্সির মূল্য পতনের বিষয়টি। সোমবার ১ ডলারের দাম ভারতীয় মুদ্রায় গিয়ে ঠেকেছে ৭৬.৯২ টাকায়। যেখানে গত শুক্রবার যখন অর্থ বাজার বন্ধ হয় তখন টাকার মূল্য ছিল প্রতি ১ মার্কিন ডলার পিছু ৭৬.১৬ 'রুপি'। সোমবার বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা নেমে গিয়েছে টাকার দর। কিন্তু সেক্ষেত্রে সামান্য ভালো অবস্থায় আছে জাপানের কারেন্সি। মার্কিন ডলার এবং ইয়েন সোমবার সকালে এশিয়ার বাণিজ্যে শক্তিশালী পরিস্থিতিতে রয়েছে। এদিকে বাজার খোলার সময় আন্তঃব্যাঙ্ক বৈদেশিক মুদ্রায় ভারতীয় মুদ্রা অর্থাৎ 'রুপি' প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৭৬.৮৫টাকায় ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ৭৬.৯৮ টাকায় নেমে গিয়েছে যা মাত্র কয়েক ঘন্টায় ৮১ পয়সা হ্রাস পেয়েছে।
পরিত্রাতা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
রিলায়েন্স সিকিউরিটিজের সিনিয়র রিসার্চ বিশ্লেষক শ্রীরাম আইয়ার বলেছেন, সোমবার সকালে অপরিশোধিত তেলের সঙ্গে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় টাকা সোমবার সকালে অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই প্রসঙ্গে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন মার্কিন ডলারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় কখনও এতটা পিছিয়ে পড়েনি টাকা। পাশাপাশি তিনি আরও বলেছেন, দেশ আর্থিক মন্দার দিকে চলে যাওয়ার আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতে পারে।
সেনসেক্স-নিফটি
সোমবার বাজার খোলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেনসেক্স ১৬০১ পয়েন্ট কমে ৫২,৭৩২-এর স্তরে নেমে যায়। একই সময়ে নিফটি ৪৪৭ পয়েন্ট কমে ১৫৭৯৮-এ ট্রেড করছে। এত রেকর্ড শেয়ার বাজারে পতন দেশে ২০০৮ সালের পর হয়নি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব বাজারে তেলের মূল্য
প্রসঙ্গত, সোমবার বেঞ্চমার্ক গত ১০ বছরের বন্ডের ফলনে রেকর্ড গড়ে দিনে ৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে 6.86 শতাংশে ট্রেড করছে। এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলি রাশিয়ার তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার ব্যারেল প্রতি ৯.৩৮ শতাংশ লাফিয়ে ১২৯.১৯ মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এদিকে মধ্য এশিয়ার একাধিক তৈল ভাণ্ডার দেশের সঙ্গে বিশ্ব বাজারে ইরানের অপরিশোধিত তেল রপ্তানির সময় বেশি লাগতে পারে, যার জন্য জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।