বিলেতে বিজয় মালিয়ার সাম্রাজ্যে সার্জিকাল স্ট্রাইক! সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি
চোরের মতো বিলেতে পালিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হল না বিজয় মালিয়ার । এ যেন ধর্মের কল বাতাসে নড়ার মতো বিষয়। কারণ, গতকাল বিজয় মালিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট।
চোরের মতো বিলেতে পালিয়ে গিয়েও শেষরক্ষা হল না বিজয় মালিয়ার । এ যেন ধর্মের কল বাতাসে নড়ার মতো বিষয়। কারণ, গতকাল বিজয় মালিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট। ২৬ জুন -ই এই মর্মে রায় বেরিয়ে গিয়েছিল। এবার অপেক্ষা ছিল আদালতে কবে হাইকোর্টের এনফোর্সমেন্ট অফিসারকে সমপত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেয় তা জানার। গতকাল ভারতীয় সময় রাত ৯টা নাগাদ সেই রায় বেরিয়েছে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টে।
১৩টি ভারতীয় ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৬,২০৩কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন বিজয় মালিয়া। সুদাসলে সেই অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯,৮৬৩ কোটি টাকা। এই ব্যাঙ্কগুলির কনসোরটিয়াম-এর পক্ষে বেঙ্গালুরু ডেবট ট্রাইব্রুনাল বিজয় মালিয়ার সমপ্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ জারি করে। বেঙ্গালুরু ডেবট ট্রাইবুনালের এই রায়কে যুক্তরাজ্যের আদালতে রেজিস্ট্রি করানো হয়েছে বিজয় মালিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য। বিজয় মালিয়া এর বিরোধিতা করে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু, ২৬ জুন হাইকোর্ট জানিয়েই দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট অফিসার বিজয় মালিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করবেন। এখন অপেক্ষা ছিল কবে এই সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি মেলে তার। সেই রায়ই গতকাল বের করেছে হাইকোর্ট।
যুক্তরাজ্য হাইকোর্টের বিচারপতি ব্রায়ান তাঁর দেওয়া রায়ে জানিয়েছেন, হাইকোর্টের এনফোর্সমেন্ট অফিসার বিজয় মালিয়ার যাবতীয় সম্পত্তির চৌহদ্দিতে ঢুকতে পারবেন এবং ১০,০০০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ভ্যালুযুক্ত সম্পত্তি তিনি বাজেয়াপ্ত করবেন। তবে, বিজয় মালিয়ার মালিকানাধীন সম্পত্তি তিনি বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন। বিজয় মালিয়ার পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে থাকা কোনও সম্পত্তি বা মূল্যবান প্রজেশনে হাত দেওয়া যাবে না। এই এনফোর্সমেন্ট অফিসার তাঁর সহকারী হিসাবে একজন অর্ধস্তনকে নিতে পারবেন। এই সহকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই এনফোর্সমেন্ট স্থায়ী বা অস্থায়ী প্রতিনিধি হতে হবে বলেও রায় দিয়েছে যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট। প্রয়োজনে পুলিশ বাহিনীর সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে বলে এই রায়ে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি।
লন্ডন এবং তার আশপাশে বিজয় মালিয়ার যে সব সম্পত্তিতে তল্লাশি এবং বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে- লেডিওয়াক, কুইন হো লেন, টেউইন, ওয়েলউইন এবং ব্রাম্বল লজ। তবে, লন্ডনের রিজেন্ট পার্কে বিজয় মালিয়ার আর এক বিলাস বহুল ভিলা করনওয়াল টেরেস-এ ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ইউ কে হাইকোর্ট আদৌ এই সম্পত্তিতে বিজয় মালিয়ার সত্ত্বাধীন প্রজেশনস বাজেয়াপ্ত করতে অনুমতি দেয় কি না তার দিকেও তাকিয়ে রয়েছে ১৩ ব্যাঙ্কের কনসোরটিয়াম।
দেশ ছেড়ে পালানোর পর লন্ডনের কাছে উচ্চবিত্তদের গ্রাম টেউন-এ এক বিশাল ফার্ম-হাউসে ডেরা বেঁধেছেন বিজয় মালিয়া। যেখানে তিনি তাঁর সঙ্গিনী পিঙ্কি লালওয়ানির সঙ্গে বাস করছেন গত দু'বছর ধরে। ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর ইউকে হাইকোর্ট বেঙ্গালুরু ডেবট ট্রাইবুনালের রায়কে ইংলিশ কোর্টে নথিভুক্ত করায়। এই নথিভুক্তকরণে উল্লেখ করা হয়েছিল ১০,৪২১ কোটি টাকা পর্যন্ত বিলেতে মালিয়ার থাকা সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এরপরই এই রায়ের বিরোধিতা করে চলতি বছরের মে মাসে যুক্তরাজ্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় মালিয়া। বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াকে বন্ধ রাখার আবেদন জানায় সে। কিন্তু, ২৬ জুন যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টের বের হওয়া রায়ে বিলেতে বিজয় মালিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার রাস্তা খুলে গিয়েছিল।
এই মাসের ৩১ জুলাই বিজয় মালিয়ার প্রত্যর্পণ মামলার শুনানি রয়েছে। ওই মামলাতে আদালতে হাজির হতে হবে মালিয়াকে। তার আগে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার বিষয়টি মালিয়ার পক্ষে একটা বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে।