গণতন্ত্রের মন্দিরে জঙ্গি হামলার ২০ বছর, সেদিন ঠিক কী হয়েছিল সংসদে
গণতন্ত্রের মন্দিরে জঙ্গি হামলার ২০ বছর
সাল ২০০১, ১৩ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসে এমন এক কালো দিন যার স্মৃতি ২০ বছর পরেও তাজা গোটা দেশের কাছে। ভারতের গণতন্ত্রের মন্দির পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে অতর্কিতে হামলা চালিয়েছিল লস্কর-ই-তইবা ও জইশ জঙ্গিদল। এই নৃশংস ঘটনার ২০ বছর পূর্ণ করার দিন হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন দেশের বিশিষ্টরা।
কী হয়েছিল ওই দিন?
২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৫ লস্কর-ই-তইবা ও জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও সংসদের স্টিকার লাগানো গাড়িতে চড়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়ে। হামলার ঠিক চল্লিশ মিনিট আগে রাজ্যসভা ও লোকসভা উভয়ই মুলতুবি হয়ে গেছিল। তবে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হারীন পাঠক সংসদ ভবনের মধ্যেই ছিলেন। জঙ্গিরা গাড়ি নিয়ে সোজা তৎকালীন উপ রাষ্ট্রপতি কৃষণ কান্তের কনভয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে ও বেরিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। উপ-রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী ও নিরাপত্তাবাহিনীর জওয়ানরা জঙ্গিদের লক্ষ্য করে পালটা গুলি চালায়। জঙ্গিদের এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় সংসদ ভবনের গেট। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দিল্লি পুলিশের বিশেষ জঙ্গি-দমন শাখার অফিসাররা।
আতঙ্কের ৩০ মিনিট
প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে জঙ্গি তাণ্ডব। সেই মুহূর্তে সংসদে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানী আর বাজপেয়ী ক্যাবিনেটের দিগগজ মন্ত্রীরা। তাঁদের সুরক্ষিত রাখার জন্য সংসদের গোপন আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সংসদ ভবনের এলাকায় উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। চারিদিকে চলছিল গুলি আর গ্রেনেড। পরে কনস্টেবল কমলেশ কুমারী প্রথম জঙ্গি স্কয়্যাডের আত্মগোপনের স্থানটি চিহ্নিত করেন। সুইসাইড ভেস্ট পরিহিত জঙ্গিকে নিকেশ করার পর গুলি করে হত্যা করা হয় আরও ৪ জঙ্গিকে। পাল্টা জঙ্গিদের গুলিতে ৮ জন নিরাপত্তাকর্মী সহ ৯ জন নিহত হন। আহত হন মোট ১৮ জন।
হামলার ছক ও আফজল গুরু
তদন্তকারী অফিসাররা পরে এই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে গিয়ে বিবৃতিতে বলেন, লস্কর এ তইবা আর জইশ এ মোহম্মদ এর জঙ্গিরা সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত হয়েই সংসদে হামলা চালিয়েছিল। তাঁদের থেকে গোটা সংসদ ভবন উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিস্ফোটক উদ্ধার হয়েছিল। তাঁদের কাছে এত হাতিয়ার ছিল যে, সেনা ব্যাটালিয়ানের সাথে লড়তে পারত তারা। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এই জঙ্গি হামলার তুলনা আমেরিকায় হওয়া ৯/১১ এর হামলার সাথে করেছিলেন। সংসদ ভবনে হামলার মাথা আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
অমিত শাহের টুইট
২০২১-এর ১৩ ডিসেম্বর ২০ বছর পূর্ণ করল পার্লামেন্ট হামলা। এদিন টুইট করে হামলায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি লিখেছেন, ' ভারতীয় গণতন্ত্রের মন্দির সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলার দিন দেশের গৌরব রক্ষার জন্য জীবনের সর্বচ্চ বলিদান দিয়েছেন যে বীর সন্তানরা, তাঁদের প্রতি আমার শতকোটি প্রণাম' পার্লামেন্টের সামনে অবস্থিত শহীদ বেদিতে মাল্যদানও করেন তিনি।
রাজনাথ সিং-এর টুইট
এই বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করে টুইট করেছেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। টুইটে তিনি লেখেন, '২০২১ সালে সংসদ ভবনে হামলার সময় তাদের জীবন উৎসর্গকারী সাহসী নিরাপত্তা কর্মীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা।'
এছাড়াও দেশের প্রায় সব মহল থেকে বিশিষ্ট জনেরা এই দিনটিকে স্মরণ করেছেন।