ভোটের মধ্যেই এবার দাম বাড়ছে টিভির, এপ্রিল থেকে দিতে হবে বাড়তি কড়ি
ভোটের মধ্যেই এবার দাম বাড়ছে টিভির
বাড়তে চলেছে টিভির দাম। গত একমাসে বিশ্ব বাজারে ওপেন–সেল প্যানেলের দাম ৩৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার ফলে আগামী এপ্রিল মাস থেকেই এলইডি টিভির দাম বেড়ে যাবে। এ বছরের এপ্রিল থেকে প্যানাসোনিক, হায়ার এবং থমসনের মতো ব্র্যান্ডগুলি টিভির দাম বাড়াবে বলে জানিয়েছে, অন্যদিকে, এলজি ইতিমধ্যেই টিভির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এপ্রিল মাসের অপেক্ষা না করেই।
দাম বেড়ে চলেছে প্যানেলের
প্যানাসোনিক ইন্ডিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মণীশ শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, 'প্যানেলের মূল্য অনবরত বেড়ে চলেছে এবং সেই কারণে বাড়ছে টিভির দামও। মনে করা হচ্ছে এপ্রিলে এই মূল্য আরও বাড়তে পারে।' টিভির দাম ঠিক কত বাড়তে পারে, এ বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন যে বর্তমান প্রবণতা লক্ষ্য করে হয়ত এপ্রিল মাসে টিভির মূল্য ৫-৭ শতাংশ বাড়তে পারে।
টিভির দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই
একই সুর শোনা গেল হায়ার অ্যাপলায়েন্স ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট এরিক ব্রেগান্জার গলায়। তিনি জানিয়েছেন যে টিভির মূল্য বাড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তিনি বলেন, 'ওপেন-সেলের দাম সাংঘাতিকরকমভাবে বেড়ে গিয়েছে এবং এই প্রবণতা বলছে টিভির দাম না বাড়ালেই নয়। যদি এটা অনবরত হতে থাকে তবে আমাদেরকেও ক্রমাগত টিভির দাম বাড়িয়ে দিতে হবে।'
ওপেন–সেল কি
এই ওপেন-সেল প্যানেল টিভি প্রস্তুতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এই ইউনিটের ৬০ শতাংশ জুড়েই এটি থাকে। সংস্থাগুলি ওপেন-সেল অবস্থায় টিভির প্যানেলগুলি আমদানি করে, যা বিক্রির জন্য বাজারে পাঠানোর আগে তার মান সংযোজন করা প্রয়োজন।
বাজারে অভাব রয়েছে ওপেন–সেলের
সুপার প্লাসট্রোনিক্স প্রাইভেট লিমিটেড (এসপিপিএল), যা ফরাসি ইলেকট্রনিক্স ব্যান্ড থমাস ও মার্কিন সংস্থা কোডাকের ব্র্যান্ড লাইসেন্স, জানায়, বাজারে ওপেন-সেলের অভাব রয়েছে এবং গত আটমাসে এই ওপেন-সেলের দাম তিনগুণ বেড়েছে। এসপিপিএলের সিইও অভনীত সিং মারওয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, 'গত আটমাসে, মাসের পর মাস প্যানেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা লেড টিভি প্যানেলের দাম ৩৫০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি হোয়ার সাক্ষী থেকেছি। প্যানেলের বাজারেও মন্দা দেখা দিয়েছে। এটা ছাড়াও গত একমাসে ৩৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।' তিনি এর সঙ্গে আরও যোগ করে জানিয়েছেন যে প্রতি-ইউনিটে টিভির দাম এপ্রিল থেকে বাড়তে পারে কমপক্ষে ২০০০-৩০০০ টাকা। দাইওয়া ও শিনকো ব্র্যান্ডের মালিক ভিডিওটেক্স ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে যে ইন্ডাস্ট্রি কখনও দেখেনি বা আশাও করেনি এভাবে ওপেন-সেলের দাম বাড়তে পারে। এই গ্রুপের ডিরেক্টর অর্জুন বাজাজ বলেন, 'ভারতে সর্বাধিক বিক্রি হয় ৩২ ইঞ্চির টিভি, সেই ৩২ ইঞ্চি স্ক্রিনের দাম বাড়তে পারে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।'
এলজি আগেই বাড়িয়েছে দাম
তবে দক্ষিণ কোরিয়ার ব্র্যান্ড এলজি জানায় যে টিভি প্যানেলের জন্য দাম বাড়ায়নি তারা টিভির। এলজি ইলেকট্রনিক্স ইন্ডিয়ার ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিজয় বাবু বলেন, 'আণরা এখন কোনও টিভির দাম বাড়াচ্ছি না। আমরা ইতিমধ্যে জানুয়ারিতে ৭-৪ শতাংশ টিভির দাম বাড়িয়েছি এবং ফেব্রুয়ারিতে ৩ শতাংশ, তার কারণ প্যানেলের মূল বৃদ্ধি।'
চিন ছাড়া বিকল্প নেই
মারওয়া জানিয়েছেন যে ওপেন-সেল বাজার চিনা নির্মাতাদের দ্বারা প্রভাবিত এবং অভিযোগ করেন যে চিনের টিভি প্রস্তুতকারকরা তাদের থেকে আরও ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, 'বর্তমানে, চিন ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই, যেখানে বর্তমানে সমস্ত প্যানেল তৈরি হয়। খুব কাছ থেকে লক্ষ্য করে দেখা গিয়েছে যে কেবল চাইনিজ ব্র্যান্ডই ভাল সরবরাহ ও দাম পাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'মহামারির পর বিশেষ করে এটি লক্ষ্য করা গিয়েছে যে চিনের টিভি ব্র্যান্ডগুলি ভালো দাম ও সরবরাহে ভারতীয় বাজারে ছড়িয়ে পড়ে পাল্টা ভারতীয় উৎপাদনকে মার দিতে।' মারওয়া জানান, সরকারের উচিত টিভি উৎপাদনগুলিকে প্রোডাকশন-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) প্রকল্পের আওতায় আনা, এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা ভারতীয় টিভি শিল্পকে বিশ্ব মঞ্চে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।
সরকারের টিভি আমদানি–সেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা
গত বছর সরকার ওপেন সেলের আমদানি-শুল্ক বাড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ওপেন সেলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদনকে প্রচার করার জন্য সরকার টিভি আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এখন টিভি আমদানিকারকদের টিভি আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রকের ডিজিএফটি থেকে লাইসেন্স নিতে হবে।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পর পর চার দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ, সংকট বাড়বে গ্রাহকদের