কেসিআর আসলে খেলছেন জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করার লক্ষ্যে; কিন্তু তাঁকে বিশ্বাস করবে কতজন?
চলতি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর যে অনেক আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীই প্রধানমন্ত্রী হতে মরিয়া হবেন, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি যদি একক গরিষ্ঠতা না পায় -- সে বিষয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই।
চলতি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর যে অনেক আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীই প্রধানমন্ত্রী হতে মরিয়া হবেন, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি যদি একক গরিষ্ঠতা না পায় -- সে বিষয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই। কেউ পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছেন সেই দিশায়, কেউ বা অন্য নেতাদের প্রতি পরোক্ষে সমর্থন না দেওয়ার কথাও বলছেন। কিন্তু এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৌতূহল তৈরী হয়েছে তেলাঙ্গানা মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওকে নিয়ে। কেসিআর ঠিক কী চাইছেন আর তাঁর চাওয়া কতটাই বা নির্ভরযোগ্য, তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই।
কেসিআর নানা সময়ে নানা চাল চালছেন
কেসিআরকে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই দেখা যাচ্ছে নানারকম ফন্দিফিকির আঁটছেন। কখনও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে লোকসভা নির্বাচন-পরবর্তী জোটের কথা বলছেন; আবার কখনও বা কলকাতায় গিয়ে মোদীর অন্যতম বড় বৈরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে আসছেন। অবশ্য কলকাতায় মমতার দ্বারা আয়োজিত মহাজোটের ময়দানে যাচ্ছেন না। আবার এখন দক্ষিণী ভাবাবেগকে উস্কে দিয়ে অ-কংগ্রেসি এবং অ-বিজেপি সরকার তৈরির প্রচেষ্টায় রয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ফর্মুলা মাফিক ছোট ছোট দলগুলিকে একসঙ্গে নিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট তৈরির আশায় উদ্যোগী হচ্ছেন কেসিআর। তবে কেসিআর-এর এই উদ্যোগকে খুব গুরুত্ব দিতে রাজি নয় খোদ দক্ষিণ ভারতীয় দলগুলিই। ডিএমকে সুপ্রিমো স্ট্যালিন তো "নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত" বলে এড়িয়েই গিয়েছেন তেলাঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির প্রধানকে। কেসিআর অবশ্য তাতে নিরুৎসাহ হননি। চেষ্টা করে চলেছেন বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নির্বাচনের পরে এক কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করার লক্ষ্যে অবিচল তিনি।
কেসিআর-এর লক্ষ্য জাতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া
কেসিআর খুব সম্ভত দু'টি লক্ষ্যের দিকে নজর রেখে তাঁর ঘুটি সাজাচ্ছেন। পয়লা, পি ভি নরসিংহ রাও এবং পরে এইচ ডি দেবেগৌড়াদের উত্তরসূরি হিসেবে জাতীয় নেতা হিসেবে কেসিআর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। নিজের রাজ্যের ভোট ছয় মাস এগিয়ে করানোর পিছনেও কেসিআর-এর এই পরিকল্পনাই কাজ করেছে। রাজ্যের নির্বাচনের পালা চুকিয়ে কেসিআর জাতীয় রাজনীতিকে পাখির চোখ করছেন এবং যদি দরকার পড়ে, তিনি হায়দরাবাদে নিজের ছেলে কেটিআরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিল্লি রওয়ানা দিতে পারেন। যদি বিজেপির বা এনডিএ-র আসন সংখ্যা কম পড়ে ২৩ মে, তাহলে সুবিধা বুঝে কেসিআর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়ার লক্ষ্যে জোট করতেই পারেন মোদীর সঙ্গে।
সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুকে হারানোর চেষ্টাও করছেন
কেসিআর-এর দ্বিতীয় লক্ষ্যটি হচ্ছে দক্ষিণ ভারতের একচ্ছত্র রাজনৈতিক ব্যক্তি হয়ে ওঠা যাকে ঘিরে আগামী দিনে দক্ষিণ ভারতীয় খণ্ডজাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠে। আর এই প্রতিযোগিতায় কেসিআর-এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আরেক তেলুগু নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কম চেষ্টা করছেন না বিশাখাপত্তনমকে পাল্টা জাতীয় মঞ্চ হিসেবে তুলে ধরতে; এমনকী, তাঁর রাজ্যকে অবজ্ঞা করছেন মোদী, এই অভিযোগে এনডিএ থেকে গতবছর বেরিয়েও আসেন তিনি। তেলঙ্গানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে চন্দ্রবাবু কংগ্রেস ও আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট বাঁধেন কেসিআরকে হারাতে যদিও সেই প্রয়াস সফল হয়নি। বিভক্ত তেলুগু সত্ত্বার এই দুই নেতার মধ্যে লড়াই যে আগামী দিনে আরও জোরদার হয়ে উঠবে, সেই নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।
[আরও পড়ুন:এবার লড়াই রাজধানীর বুকে, রামলীলা ময়দানে মোদী, সঙ্গে টক্কর প্রিয়াঙ্কা-কেজরিরও]
তবে কেসিআর-এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা। তিনি এমন এক নেতা যিনি রাজনৈতিক স্বার্থসাধনে একদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী বিজেপি এবং অপরদিকে এমআইএএম-এর মতো সংখ্যালঘু দলের সঙ্গে সখ্য রেখে চলতে পারেন। লক্ষ্য, রাজ্যস্তরে এমআইএম-এর সঙ্গে মিত্রতার ফসল ঘরে তোলা আর কেন্দ্রে বিজেপির আশেপাশে থাকা যাতে অবস্থা বুঝে তার সাহায্যও নেওয়া যায়। কিন্তু এমনতরো নেতাকে কি খুব বেশি লোক বা দল বিশ্বাস করবে?
উত্তর সময়ই দেবে।
[আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষের কনভয়ে হামলা শুভেন্দু-গড়ে, রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল নির্বাচন কমিশন]