রবিবাসরীয় ছুটিতে কতটা জমতে চলেছে 'ব্যাটল অফ ত্রিপুরা', জানুন ত্রিপুরা নির্বাচনের নাড়ি-নক্ষত্র
কবে ত্রিপুরার ভোট ঘিরে এমন রব দেখা গিয়েছে? কেই খেয়াল করতে পারছেন না। মনে হচ্ছিল ত্রিপুরার মাটিতে বামেরা অপরাজেয়। কিন্তু, এবার কিছুটা হলেও বিপাকে রয়েছে বামফ্রন্ট। দীর্ঘ ২০ বছরের শাসন এবার অস্তে যাচ্ছে বলেই দাবি বিরোধীদের। যদিও, এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন ত্রিপুরার বাম মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।
[আরও পড়ুন- Live- ত্রিপুরায় ক্ষমতায় কি থাকবে বামেরা, শুরু ভোটগ্রহণ, সকাল থেকে ভোট দিতে লাইন]
[আরও পড়ুন-এখন পর্যন্ত 'শূন্য অঙ্ক', তবু ত্রিপুরা জয়ের স্বপ্নে বিভোর বিজেপি]
অ্যান্টি ইনক্য়াম্বান্সি-কে বিরোধীরা হাতিয়ার করতে চাইলে তা ভোট যুদ্ধ জেতার পক্ষে যথেষ্ট নয় বলেই দাবি ত্রিপুরা বামফ্রন্টের। গরিবের উন্নয়নে তাঁদের সরকার কথা বলে, তাই বিজেপি-কংগ্রেসের ভেকধারী ভোট রাজনীতিতে ত্রিপুরার মানুষ ভরসা রাখে না বলেই দাবি সিপিএম নেতা-কর্মীদের।

কয় আসনে কার কত প্রার্থী?
ত্রিপুরা বিধানসভায় মোট আসন ৬০। এরমধ্যে ৩০টি অসংক্ষিত। বাকি ৩০টি আসনের মধ্যে ২০টি তপশীল উপজাতি এবং ১০টি আসন তপশীল জাতির জন্য সংরক্ষিত। বামফ্রন্ট ৬০টি আসনে প্রার্থী দিলেও কংগ্রেসের প্রার্থী সংখ্যা ৫৬। বিজেপি ৫১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বাকি ৯টি আসন ছেড়ে দিয়েছে তাদের জোটসঙ্গী আইপিএফটি-কে। তৃণমূল অবশ্য মাত্র ২৪টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।

২০১৩ সালের ফল
সেই বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় সিপিএম ৪৯টি আসনে জয়ী হয়। ১টি আসনে জয়ী হয় সিপিআই। কংগ্রেস পায় ১০টি আসন। কিন্তু, পরে তাদের মধ্যে ৭ জন বিধায়ক বিজেপি-তে যোগ দেয়। বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ সহ ৬ কংগ্রেস বিধায়ক প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। কিন্তু, পরে এই বিধায়করা তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বহিস্কৃত হন। তখন সুদীপ রায় বর্মণের নেতৃত্বে এই ৬ বিধায়ক বিজেপি-তে যোগ দেয়। পরে আরও এক কংগ্রেস বিধায়ক বিজেপি-তে যোগ দেয়। এর সুবাদে ত্রিপুরা বিধানসভায় বিরোধী দলের তকমা পেয়ে যায় বিজেপি।

ভোটদাতাদের সংখ্যাটা কেমন
ত্রিপুরায় মোট ভোটার প্রায় ২৫ লক্ষ। এরমধ্যে পুরুষ ভোটদাতার সংখ্যা ১৩ লক্ষ। মহিলা ভোটদাতার সংখ্যা ১২ লক্ষ। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে অন্তত ৪৭ হাজার ৮০৩ জন ভোটার প্রথমবার ভোট দেবেন।

বামেদের ট্র্যাম্পকার্ড এবার কি হাতছাড়া?
বামফ্রন্ট-এর ত্রিপুরা জয়ের অন্যতম হাতিয়ার ছিল উপজাতি এলার ভোট। কিন্তু, উপজাতি এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গরিবের সরকার বলে নিজেদের পরিচয় দিলেও তাঁদের কোনও উন্নতি হয়নি। এখনও উপজাতি এলাকার বহু মানুষকে নোংরা খালের জল খেয়ে জীবন-ধারণ করতে হচ্ছে। কোনও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও নেই।

সিপিএম ও বিজেপি-র জোর টক্কর
বামফ্রন্টকে এবার প্রবলভাবে বেগ দিচ্ছে বিজেপি ও আরএসএস-এর মিলিত আক্রমণ। গা-জোয়ারির রাজনীতিতে কোনওভাবেই সিপিএম-কে একচুল জায়গা ছাড়ছে না বিজেপি।

পঞ্চমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার লক্ষে মানিক সরকার
এবার বামফ্রন্ট ভোটে জিতলে টানা পষ্ণমবার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকবে মানিক সরকারে সামনে। ১৯৯৮ সালে প্রথমবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন মানিক।

সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মানিক
সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে দেশের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মানিক। তাঁর হাতে থাকা অর্থ এবং ব্যাঙ্কে থাকা অর্থ-এর পরিমাণ চমকে দেবে। বর্তমান সময়ে সত্যি সত্যি এমন মানুষ দেখা যায়! যদিও, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ এটা আসলে মানিক সরকারের ছদ্মবেশ। মানিক সরকার যে আদপে প্রচুর টাকার মালিক এমন তথ্য-প্রমাণ অবশ্য এখন পর্যন্ত কেউ দিতে পারেনি।

যা আয় করেন তা দলকেই দিয়ে দেন মানিক
একুশ শতকে দাঁড়িয়েও এখনও ডিজিটাল মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি মানিক। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর নিজস্ব কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। এমনকী যে গাড়িতে চড়েন সেটাও সরকারি। যা মাইনে পান তা দলের তহবিলে দিয়ে দেন। বিনিময়ে দল থেকে মাসিক ৯ হাজার টাকার ভাতাতেই দিন কাটান মানিক।

মানিককের প্রতিদ্বন্দ্বী
বিজেপি-র প্রতিমা ভৌমিক এবার টগবগ করে ফুটছেন মানিক সরকারকে হারাবেন বলে। এর আগে মানিক সরকারের কাছে ১৯৯৮ ও ২০০৩ সালে ভোট মাত খেয়েছেন প্রতিমা। তাই এবার হারের বদলা নিতে তিনি বদ্ধপরিকর।

মানিকের চিন্তা
স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী হলেও অ্যান্টি-ইনক্যাম্বান্সি নিয়ে তলে তলে চিন্তায় আছেন মানিক। বামেদের সংখ্য়ালঘু তোষামেদের সুযোগ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদেরকে দলে টেনে নিয়েছেন বিজেপি ও আরএসএস। এই বিষয়টিও মানিক সরকারকে চিন্তায় রেখেছে।