শ্লীলতাহানি এড়াতে যোগী রাজ্যে বাইক থেকে পড়ে মৃত্যু হল আমেরিকায় বৃত্তি পাওয়া কৃতী ছাত্রীর
শ্লীলতাহানি এড়াতে যোগী রাজ্যে বাইক থেকে পড়ে মৃত্যু হল আমেরিকায় বৃত্তি পাওয়া কৃতী ছাত্রীর
উত্তরপ্রদেশে পথ দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হল প্রতিভাবান এক ছাত্রীর। জানা গিয়েছে, শ্লীলতাহানি এড়াতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় সোমবার প্রাণ হারান ২০ বছরের পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের এক কৃতী পড়ুয়া। জানা গিয়েছে, বহু প্রতিকূলতাকে জয় করে ওই ছাত্রী ২০১৮ সালে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেন এবং এরপর সম্পূর্ণরূপে স্কলারশিপ পেয়ে মার্কিন মুলুকের এক সম্মানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। সোমবার বুলন্দশহরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
শ্লীলতাহানি এড়াতে দুর্ঘটনা
মৃত সুদীক্ষা ভাটির পরিবারের অভিযোগ, সুদীক্ষা ও তাঁর কাকা স্কুটিতে করে যাচ্ছিলেন। সেই সময় বাইকে সওয়ার হওয়া দুই আরোহী সুদীক্ষাকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। বাইক আরোহীরা বারবার তাঁকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিল। এরপরেই বাইকে সওয়ারি ছেলেটি সুদিক্ষাকে ওভারটেক করে আচমকাই ব্রেক কষে। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রেককষার চেষ্টা করে সুদিক্ষা, আর তাতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি ও তাঁর কাকা হাইওয়েতে পড়ে যান এবং মৃত্যু হয় তরুণীর। যদিও জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন যে পুলিশ এই ঘটনায় কোনও হেনস্থার প্রমাণ পায়নি।
জুন মাসে আমেরিকা থেকে ফেরেন ওই ছাত্রী
জানা গিয়েছে, করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে জুন মাসে আমেরিকা থেকে ওই পড়ুয়া বুলন্দশহরে ফেরেন এবং অগাস্টেই তাঁর ফেরার কথা ছিল। দু'বছর আগে আমেরিকার ববসন কলেজে ভারত সরকারের খরচে পড়াশোনা করছিলেন সুদীক্ষা। এইচসিএল কর্তৃক তাঁকে ৩.৮০ কোটি টাকার বৃত্তি প্রদান করা হয়। গতবছর ইন্টারমমিডিয়েট পরীক্ষায় বুলন্দশহর থেকে টপ করেন সুদীক্ষা। ২০১৮ সালে দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় সিবিএসইতে মানব বিজ্ঞান বিভাগে জেলার মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেন সুদীক্ষা।
সেকেন্দ্রাবাদে যাওয়ার সময় এই দুর্ঘটনা
ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে যে, সোমবার সুদীক্ষা ও তাঁর কাকা স্কুটিতে করে তাঁদের গ্রাম গৌতম বুদ্ধ নগর থেকে সেকেন্দ্রাবাদে স্কুল থেকে কিছু নথি নিয়ে আসতে গিয়েছিল। সেই সময়ই এই ঘটনাটি ঘটে। পরিবারের সদস্য ওমকার ভাটি বলেন, ‘অন্য বাইকে দু'জন সওয়ারি ছিল। তারা সুদীক্ষাকে আজেবাজে মন্তব্য করছিল এবং বেপড়োয়াভাবে বাইক চালাচ্ছিল।' দুর্ঘটনার পর ছাত্রীর কাকা সত্যেন্দর ভাটি ঘটনা সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা যখন বুলন্দশহর টাউন পেরিয়ে গ্রামে ঢুকি। একটা বাইকা আমাদের বারবার ওভারটেক করছিল। বাইক চালক বেপরোয়াভাবে বাইক চালাচ্ছিল। এরপর সে স্টান্ট দেখাতে শুরু করে দেয়। আমি আমার বাইকের গতি ধীরে করে দিই কিন্তু অন্য বাইকটি আমাদের ধাক্কা মারে। আমরা দু'জনেই পড়ে যাই কিন্তু আমার ভাইঝির মাথায় চোট লাগে। আমি বাইক চালককে ঠিক মতো দেখতে পারিনি, আমাদের দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে তারা পালিয়ে যায়।'
শ্লীলতাহানির অভিযোগ খারিজ পুলিশ–প্রশাসনের
মৃতা ছাত্রীর পরিবারের দাবিকে খারিজ করে জেলা শাসক রবীন্দ্র কুমার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাইকটি ছাত্রীর ভাই চালাচ্ছিল, যে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং সুদীক্ষার কাকা নয়। এখনও পর্যন্ত শ্লীলতাহানির কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।' বুলন্দশহর পুলিশ জানিয়েছে তারা এই দুর্ঘটনার তদন্ত করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তারা জানিয়েছে, রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট সামনে দিয়ে আসে এবং সুদীক্ষাদের বাইকের সামনে এসে থেমে যায় কারণ যানজট ছিল, তার জন্যই দুর্ঘটনা হয়। ছাত্রীর দেহ ময়তাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় কোনও ধরনের হেনস্থা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী বা আত্মীয়রাও জানায়নি।' দুর্ঘটনার সময় সুদীক্ষার কাকার ছেলে তাঁর সঙ্গে ছিল বলে পুলিশ জোর দিয়েছিল। পুলিশের আপলোড করা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ওই ছেলেটি দুর্ঘটনার সময় ঘটা ঘটনাগুলি বলছিল, যদিও সে কোনও হেনস্থার ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলেনি।
খুব অল্প দিনেই শেষ হল সুদীক্ষার সফর
সুদীক্ষার সফর শুরু হয় উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রাম থেকে আমেরিকার সম্মানীয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত, যা তাঁর সংকল্প ও মনের জোরে সম্ভব হয়েছিল। তিনি তাঁর গ্রামের কিছু সংখ্যক মেয়েদের মধ্যে একজন যে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। শিব নাদার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তৈরি বিদ্যা জ্ঞান স্কুলের ছাত্রী ছিলেন সুদীক্ষা। তিনি দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় ইতিহাস ও অর্থনীতিতে ১০০ নম্বর আনেন এবং ভূগোলে ৯৯ নম্বর পান।
ক্ষুব্ধ বিরোধী পক্ষ
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বসপা প্রধান মায়াবতী টুইটে বলেন, ‘বুলন্দশহরের এক প্রতিভাবান কৃতী ছাত্রীর বাইকে করে যাওয়ার সময় অন্য বাইক চালকদের হেনস্থার কারণে পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। এটি অত্যন্ত করুণ, লজ্জাজনক এবং নিন্দনীয়। কন্যারা কীভাবে অগ্রগতি করবে?' বসপার দাবি, রাজ্য সরকারের উচিত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
করোনা মোকাবিলায় মোদীর কাছে বাড়তি অর্থের দাবি রাজ্যগুলির! উঠল খরচের উর্ধ্বসীমা তোলার প্রসঙ্গও