জয়ললিতার চার বছরের জেল, ১০০ কোটি টাকা জরিমানা, ছাড়তে হবে পদও
১৯৯১ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন জয়ললিতা। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ভোটে হেরে যান। ক্ষমতায় আসে ডিএমকে। মুখ্যমন্ত্রী হন এম করুণানিধি। ওই বছর জনতা পার্টির সুব্রহ্মণ্যম স্বামী (এখন ইনি বিজেপিতে) জয়ললিতার দুর্নীতি নিয়ে সরব হন। তিনি মামলা করেন। সেই ভিত্তিতে জয়ললিতার বাড়িতে হানা দিয়েছিল আয়কর দফতর। অভিযোগ ওঠে, ৬৬ কোটি টাকার সম্পত্তির কোনও হিসাব তিনি দিতে পারেননি। তল্লাশির সময় নগদ টাকা ছাড়াও ২৮ কিলো সোনা, ৮৮০ কিলো রুপো, দশ হাজার শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতো, ৯১টি বিদেশি ঘড়ি এবং প্রচুর প্রসাধনী দ্রব্য আটক করা হয়েছিল। জয়ললিতার পাশাপাশি তাঁর বান্ধবী শশীকলারও নাম জড়ায় এই মামলায়।
প্রথমে চেন্নাইয়ে মামলাটির শুনানি শুরু হলেও অভিযোগ ওঠে, জয়ললিতা রাজনীতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন। তাই ২০০৩ সালে মামলাটি নিয়ে আসা হয় ব্যাঙ্গালোরে। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জয়ললিতাই। ডিএমকে-র আর্জিতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে মামলাটি উঠে আসে কর্নাটকে। সেই মামলায় এ দিন বিচারক জন মাইকেল ডি কুনহা তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। চার বছর কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি একই অপরাধে চার বছরের কারাবাস হয়েছে তাঁর বান্ধবী শশীকলা, পালিত পুত্র সুধাকরণ ও ঘনিষ্ঠ ছায়াসঙ্গী ইল্লরাশির। সাজা ঘোষণা হওয়ার পরই অসুস্থ বোধ করেন জয়ললিতা। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রশ্ন হল, এখন কী হবে?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও সাংসদ বা বিধায়ক ফৌজদারি মামলায় যদি দু'বছর বা তার বেশি কারাবাসের সাজা পান, তা হলে তাঁকে সংশ্লিষ্ট পদ থেকে সরতে হবে। মন্ত্রীদের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হবে না। তদনুযায়ী, জয়ললিতাকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে। ছাড়তে হবে বিধায়ক পদও। এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি কর্নাটক হাই কোর্টে নিশ্চিতভাবেই যাবেন। সেক্ষেত্রে যদি অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ পান, তা হলে কিছুটা রেহাই মিলতে পারে। আর যদি কর্নাটক হাই কোর্ট সাজা বহাল রাখে, তা হলে পরবর্তী দশ বছর তিনি ভোটে লড়তে পারবেন না।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারেন পন্নিরসেলবম অথবা শীলা বালকৃষ্ণণ
আইনি লড়াইয়ের বাইরে যে প্রশ্নটা বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তা হল রাজ্য রাজনীতির সমীকরণ। লোকসভা ভোটে তাঁর দল এআইএডিএমকে বিপুল ভোটে জিতেছে। রাজ্যের ৩৯টি আসনের ৩৭টিই পেয়েছে এআইএডিএমকে। শূন্য ছিল ডিএমকে-র ঝুলি। ফলে বিরোধী দল ডিএমকে কোণঠাসা। সুতরাং নতুন করে অক্সিজেন পাওয়ার চেষ্টা করবে তারা। যদিও অধিকাংশ পর্যবেক্ষক মনে করছেন, এতে বরং জয়ললিতা ভবিষ্যতে লাভবান হবেন! ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে যদি এআইএডিএমকে 'সহানুভূতির ঢেউ'-কে কাজে লাগাতে পারে, তা হলে বড় চমক অপেক্ষা করবে বৈকি! শুরু থেকেই এআইএডিএমকে অভিযোগ করে আসছিল, প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে মামলা সাজিয়েছে ডিএমকে। উত্তুঙ্গ জনপ্রিয়তায় ভর করে সেটা জয়ললিতা সহজেই বোঝাতে পারবেন সাধারণ মানুষকে। তবে জয়ললিতার পর আপাতত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পদে বসতে পারেন পন্নিরসেলবম অথবা শীলা বালকৃষ্ণণ।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, জয়ললিতার জেলযাত্রার ফলে রাজ্য রাজনীতিতে যে সাময়িক টালমাটাল অবস্থার সৃষ্টি হবে, সেই সুযোগে ফায়দা কিছুটা হলেও তুলতে পারে বিজেপি। এ দিন জয়ললিতার সাজা ঘোষণার পর বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও একই সুরে কথা বলেছেন।
অন্যদিকে, তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোলের খবর পাওয়া গিয়েছে। চেন্নাই, মাদুরাই, কোয়েম্বাটোর, রামনাথপুরম, তাঞ্জাবুর ইত্যাদি শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করেন এআইএডিএমকে কর্মীরা। বিচারকের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। সরকারি বাসে ঢিল মারা হয়। কাঞ্চীপুরমে একটি বাসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পথ অবরোধ হয়। তিরুপ্পুর জেলায় এক এআইএডিএমকে কর্মী গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকে নিবৃত্ত করে পুলিশ। চেন্নাইতে করুণানিধির বাসভবনে ঢিল ছোড়া হয়। পুলিশ জানায়, চেন্নাইয়ের লয়েড রোডে ডিএমকে ও এআইএডিএমকে সমর্থকরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় এআইএডিএমকে কর্মীদেরও। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে লাঠিচার্জ করা হয়। ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস। কর্নাটক-তামিলনাড়ু সীমান্তে বিপুল সংখ্যায় জড়ো হয় এআইএডিএমকে সমর্থকরা। পুলিশ অবশ্য গোলমালের আশঙ্কায় তাদের কর্নাটকে ঢুকতে দেয়নি।