তৃণমূল ২০২৪-এর লক্ষ্যে এগোচ্ছে পরিকল্পনামাফিক, ত্রিপুরার পর মমতা-অভিষেকের নজর যেসব রাজ্যে
তৃণমূল ২০২৪-এর লক্ষ্যে এগোচ্ছে পরিকল্পনামাফিক, ত্রিপুরার পর মমতা-অভিষেকের নজর যেসব রাজ্যে
একেবারে 'পরিকল্পনামাফিক' এগোচ্ছে তৃণমূল। বাংলা জয়ের পর প্রতিটা পা তাঁরা ফেলছেন মেপে মেপে। ২০২৪-এর লক্ষ্যে রাজ্য ধরে ধরে এগোচ্ছেন তৃণমূলে নেতারা। তৃণমূলের প্রাথমিক লক্ষ্য ছোট রাজ্যগুলিতে বিস্তার লাভ করা। বিজেপিশাসিত ছোট ছোট রাজ্যগুলি তাঁরা দখল করতে ঘূঁটি সাজাচ্ছেন। ত্রিপুরা-মণিপুর-অসমের পর তৃণমূল তাই নজর দিয়েছে গোয়ার দিকে।
ত্রয়ীর মধ্যে ত্রিপুরা-মণিপুর-অসমের পাশাপাশি গোয়া নিয়েই কি কথা
তৃণমূল সেই সমস্ত রাজ্যই টার্গেট করছে, যে সমস্ত রাজ্যে কংগ্রেস আন্তসমর্পণ করেছে বিজেপির কাছে। সেইসব রাজ্যগুলি দখল করেই বিজেপিকে পাল্টা দিতে চাইছে বিজেপি। প্রশান্ত কিশোরের ছকে দেওয়া পরিকল্পনা মতোই মমতা-অভিষেক ভিনরাজ্যে তাদের পদার্পণ শুরু করেছে। সম্প্রতি নবান্নে গিয়ে প্রশান্ত কিশোর বৈঠক করেন মমতা-অভিষেকের সঙ্গে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা ত্রয়ীর মধ্যে ত্রিপুরা-মণিপুর-অসমের পাশাপাশি গোয়া নিয়েই কথা হয়।
তৃণমূল সাংসদদের গোয়ায় উড়ে যাওয়ার পিছনে সুপরিকল্পনা স্পষ্ট
হঠাৎ করেই অভিষেকের নির্দেশের পরে গোয়ায় উড়ে গিয়েছেন দুই সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন ও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা তৃণমূলের সংগঠন বিস্তারেই বিজেপিশাসিত এই রাজ্য গিয়েছেন। প্রশান্ত কিশোরের টিম আই প্যাক সমীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার পর তৃণমূল সাংসদদের গোয়ায় উড়ে যাওয়ার পিছনে সুপরিকল্পনা রয়েছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
ত্রিপুরা ছিল বাংলার বাইরের রাজ্য হিসেবে তৃণমূলের প্রথম টার্গেট
একইভাবে তৃণমূল ত্রিপুরায় পা রেখেছিল। প্রথমে তাঁরা প্রশান্ত কিশোরের টিমকে পাঠিয়েছিলেন গোপন সমীক্ষার জন্য। তারপর তৃণমূল নেতারা পদার্পণ করেছিল বঙ্গভাষী এই রাজ্যে। ত্রিপুরা ছিল বাংলার বাইরের রাজ্য হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম টার্গেট। সেই টার্গেট ছুঁতে তাঁরা কোমর বেঁধে নেমেছেন। কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া সুস্মিতা দেবকে দায়িত্ব দিয়েছেন ত্রিপুরা দখলের। আর মাথার উপরে রয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিজেপিকে হারিয়ে নতুন সরকার গড়তে খেলা শুরু তৃণমূলের
২০২১-এ বাংলায় বিজেপিকে পর্যুদস্ত করার পর আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল গেরুয়া-রাজ্য ত্রিপুরায় পা রাখে। এ রাজ্যে মূলত কংগ্রেসটাই তৃণমূল হয়েছিল। তারপর তারাই বিজেপি হয়ে সিপিএম পরিচালিত ত্রিপুরা সরকারকে হটিয়ে রাজ করতে শুরু করে। পুরনো সংগঠনকে ফের জাগিয়ে তুলে তৃণমূল কংগ্রেস এবার বিজেপিকে হারিয়ে নতুন সরকার গড়তে চায়। সেই লক্ষ্যে তৃণমূল শক্তি বাড়ানোর খেলা শুরু করেছেন।
বিজেপিতে আড়াআড়ি ফাটলের সম্ভাবনা, তৃণমূলের অ্যাডভান্টেজ
২০২৩-এ ত্রিপুরায় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসতে বদ্ধপরিকর তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৩-এর নির্বাচন জিততে এখন থেকে ঘূঁটি সাজাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। ইতিমধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যে তৃণমূলের সংগঠন অনেকটাই বাড়াতে পেরেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। এ রাজ্যে বিজেপিতে আড়াআড়ি ফাটলের সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে ত্রিপুরায় তৃণমূল ক্রমেই অ্যাডভান্টেজ পজিশনে আসতে শুরু করেছে।
তৃণমূলের সফট টার্গেট, জল্পনার তালিকায় যুক্ত হল গোয়া
ত্রিপুরার পাশাপাশি তৃণমূল অসম, মণিপুরের মতো উত্তর-পূর্বের ছোট রাজ্যগুলিকেও টার্গেট করেছে। এমনকী মেঘালয়ও তাঁদের নজরে রয়েছে। মেঘালয়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা মুকুল সাংমা সম্প্রতি কলকাতায় এসে বৈঠক করে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেই থেকেই মেঘালয় নিয়ে জল্পনা চলছে। আর সেই জল্পনার তালিকায় যুক্ত হয়ে গেল আরও একটি নাম- গোয়া।
যেসব রাজ্যে বিজেপির কাছে আন্তসমর্পণ করেছে কংগ্রেস
ত্রিপুরা থেকে শুরু করে গোয়া- প্রতিটি রাজ্যেই বিজেপির কাছে আন্তসমর্পণ করেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের সেই ব্যর্থতা ঢাকার উদ্দেশ্য নিয়ে আর এক কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল এবার পাড়ি দিচ্ছে বিজেপিশাসিত দেশের ছোট ছোট রাজ্যগুলিতে। ত্রিপুরায় পুরো কংগ্রেস টিম ভেঙে বিজেপি হয়ে গিয়েছিল। তাই তারা ক্ষমতায়। এখন সেই কংগ্রেসিরাই ব্রাত্য।
বিজেপির বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই দিতে পারেনি কংগ্রেস, তাই...
আর মণিপুর বা গোয়ারও তেমনই অবস্থা। এই দুটি রাজ্যে একক বৃহত্তম দল হয়েও কংগ্রেস সরকার গড়তে পারেনি। বিজেপি প্রায় পূর্ণ মেয়াদ এখানে ক্ষমতায় থাকল অন্য দল ভাঙিয়ে। কংগ্রেস বড় দল হয়েও কিছু করতে পারল না। বরং তাঁরাই ভেঙে ভেঙে গিয়ে বিজেপির শক্তি বাড়িয়ে গেল। তাই কংগ্রেসের এই দুর্বলতাকে কাটিয়ে তাঁরা এবার নেতৃত্ব দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ লড়াই করতে চায়।
ভোট আসন্ন, তৃণমূলকে সংগঠন বিস্তার করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে
বিজেপিশাসিত ছোট রাজ্যগুলিকে টার্গেট করেই এখন তৃণমূল এগোতে চাইছে। ২০২২ থেকে শুরু করে ২০২৩-এর মধ্যে সমস্ত রাজ্যে নির্বাচন হবে। গোয়ায় নির্বাচন ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে। অর্থার আর পাঁচ মাসের মধ্যে নির্বাচন। আর ত্রিপুরায় নির্বাচন ১ বছর ৫ মাসের মধ্যে। মণিপুরেও নির্বাচন ২০২২-এ। ফলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই তৃণমূলকে সংগঠন বিস্তার করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নতুন করে সংগঠন বিস্তারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ কম কঠিন নয়।
পূর্ব-অভিজ্ঞতা সুখকর ছিল না, তৃণমূলের সাবধানী পদক্ষেপ
তৃণমূল বাংলায় ক্ষমতায় আসার পরই গোয়া অভিযানে নেমেছিল। ২০১২ সালের নির্বাচনে তাঁরা প্রার্থীও দিয়েছিল। তবে সেবার তাদের শূন্য হাতে ফিরতে হয়। আর ত্রিপুরাতেও তৃণমূল সংগঠন বিস্তার শুরু করেছিল ২০১৬-র পর। সেখানে বিরোধী দলের তকমা আদায় করে নিলেও ২০১৮-য় তারা মুখ থুবড়ে পড়ে। বরং মনিপুরে তারা নির্বাচনে লড়ে একজন বিধায়ক পেয়েছিল। অসমেও তৃণমূল সংগঠন বিস্তারের টার্গেট নেয় আগে। টার্গেট ছিল পঞ্জাবেও। কিন্তু সে অর্থে কোথাও হালে পানি পায়নি তৃণমূল। এখন পর্যন্ত তারা বাংলাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। তবে এবার ভিন রাজ্যে সংগঠন বিস্তারে একেবারে কোমর বেঁধে নেমেছে তৃণমূল।