রাহুলের নেতৃত্ব সহজভাবে নিতে পারছে না তৃণমূল, ঘুম উড়েছে ঐক্য গড়ে ওঠার আগেই
রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে বিরোধীরা মিলে একটা দল হয়ে উঠেছে। একা কংগ্রেস বা একা তৃণমূল নয়, সমস্ত মিলে বিজেপি বিরোধিতায় সংসদ উত্তাল করে ছেড়েছে। এই অবস্থায় নজর কেড়েছে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাহুলের এই নেতৃত্বকে সহজভাবে নিতে পারছে না তৃণমূল কংগ্রেস। সেই কারণেই রাহুলকে অন্ধ অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে বলছে তৃণমূল।

নেতৃত্বে রাহুল গান্ধীর উত্থান চোখে পড়ার মতো
এবার সংসদে রাহুল গান্ধীর উত্থান চোখে পড়ার মতো। তিনি সবাইকে সম্মিলিত করে যেভাবে পেগাসাস থেকে শুরু করে কৃষি আইন, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি ইস্যুতে বিরোধী দলগুলিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাতে ঘুম উড়েছে মোদী-শাহেরও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও এবার রাহুল গান্ধীকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।

রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস-তৃণমূলসহ বিরোধী দল এককাট্টা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে দিল্লি সফর করার সময় রাহুল গান্ধীর ডাকা জোট-বৈঠকে গরহাজির ছিল তৃণমূল। তারপর মমতা-সোনিয়া বৈঠকের পর নিয়মিত তৃণমূল সাংসদরা রাহুলের নেতৃত্বে বৈঠকে যাচ্ছেন। এমনকী মঙ্গলবার প্রাতঃরাশ বৈঠকেও তৃণমূল অংশ নিয়েছিল। সেই বৈঠকে কংগ্রেস-তৃণমূলসহ বিরোধী দলকে এককাট্টাও লেগেছিল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি রাহুলকেই এগিয়ে দেন!
তারপরও অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের লোকসভার সাসংদরা কয়েকজন গেলেও রাজ্যসভার সাংসদরা কেউই যাননি। কেন তৃণমূলের এত ধারাবাহিকতার অভাব? তবে কি রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকে ঈর্ষা করছে তৃণমূল? রাহুল এভাবে নেতৃত্ব দিলে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি বিরোধী জোটে সে অর্থে গুরুত্ব পাবেন না। তবে কংগ্রেসকে বৃহত্তর শক্তি মনে করে যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাহুলকেই এগিয়ে দেন, তাহলে কোনও প্রশ্নই নেই নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্কের।

রাহুলকে নেতা মানতে একটু হলেও কুণ্ঠা আছে
আসলে কেন্দ্রের বিরোধিতায় তৃণমূল কংগ্রেস রাহুল গান্ধীর সঙ্গ দিলেও, সবসময় রাহুলের পিছু পিছু ঘুরতে চাইছে না। তৃণমূলের শীর্ষস্তরের প্রতিনিধিদের মধ্যে রাহুলকে নেতা মানতে একটু হলেও কুণ্ঠা আছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই ইস্যুগত সমর্থন দিলেও খুল্লামখুল্লা রাহুলের নেতৃত্বে তাঁরা চলতে নারাজ।

একমাত্র কংগ্রেসেরই সমস্ত রাজ্যে সংগঠন রয়েছে
পক্ষান্তরে এমন কথাও উঠছে যে, কংগ্রেস যদি নিজেদের শক্তি বিস্তারে করতে সক্ষম হয়, তবে কোনওভাবেই জোটের রাস্তায় হাঁটবে না। কারণ বিরোধী জোটের দলগুলির মধ্যে একমাত্র কংগ্রেসেরই সমস্ত রাজ্যে সংগঠন রয়েছে। এখনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিজেপি বনাম কংগ্রেসের লড়াই। আর সব দলই একটি একটি করে রাজ্য শক্তিশালী।

বিজেপিকে হারাতে গেলে কংগ্রেসের উপর নির্ভর করতে হবে
তৃণমূলের পক্ষে কেন্দ্রে এককভাবে বিজেপিকে হারানো সম্ভব নয়। কারণ তৃণমূল একমাত্র রয়েছে বাংলায়। আর ত্রিপুরায় তাঁরা সংগঠন বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই বিজেপিকে হারাতে গেলে কংগ্রেসের উপর নির্ভর করতেই হবে। অন্তত ২০০ আসনে সরাসরি বিজেপি-কংগ্রেসের লড়াই। আর এখন পর্যন্ত তৃণমূল বনাম বিজেপির লড়াই মাত্র ৪২ আসনে। ত্রিপুরায় যদি সঙ্ঘবদ্ধ হয় তৃণমূল তবে আরও দুটি আসন বাড়বে তৃণমূলের পক্ষে।

বিরোধী ঐক্যের মুখ কে, মমতা না রাহুল! প্রশ্ন উত্থানে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একক দক্ষতায় বিজেপিকে হারিয়েছেন বাংলায়। তারপর জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্ব পুনরুদ্ধার করেছেন। তারপরই বিরোধী ঐক্য গঠনে জোর দিয়েছেন। তিনি বিরোধী ঐক্যের মুখ হয়ে উঠতে চেয়েছেন মমতার একমাত্র বাধা তিনি একটি মাত্র রাজ্য সংগঠিত। আর মমতার এই উত্থানের পর বিরোধী ঐক্য গড়তে কংগ্রেস হাত বাড়িয়ে দেওয়ার পরই রাহুল গান্ধীর উত্থান নজর কেড়েছে।

মমতা নেতৃত্বে আসবেন, যদি কংগ্রেস তাঁকে এগিয়ে দেয়
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিজেপির বিরুদ্ধে স্বাভাবিক নিয়মে নেতৃত্বে এগিয়ে থাকবেন রাহুল গান্ধী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই বিরোধী ঐক্যের নেতৃত্বে আসবেন, যদি কংগ্রেস তাঁকে নেতৃত্বে আহ্বান জানায়। তেমন কোনও সমীকরণ তৈরির সম্ভাবনা এখনও তৈরি হয়নি। তাই রাহুলের নেতৃত্বে উত্থান তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নে আঘাত করবেই!

সংসদে রাহুল গান্ধীকে সমর্থন তৃণমূলের, নেতত্বে নয়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী ঐক্য গড়তে সক্রিয় ভূমিকা নেবেন আর রাহুল গান্ধী এসে সমস্ত আকর্ষণ কেড়ে নেবেন, তা তৃণমূলের পক্ষে মেনে নেওয়া কষ্টকর। তৃণমূল সাংসদরা বোঝাতে চাইছেন কেন্দ্রে বিরোধী ঐক্য গড়ে উঠলে তার নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেবেন। এই সমীকরণে জোর দিয়েই রাহুল গান্ধীকে সমর্থন করছেন কিন্তু তাঁর পিছু পিছু ঘুরে নেতৃত্বে স্বীকার করছেন না।

বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা হোক সর্বাগ্রে, আকচাআকচি শুরু
তৃণমূল সাংসদরা স্থির করেছেম, তাঁরা রাহুলের সঙ্গে থেকে কেন্দ্রের বিরোধিতা করবেন। কিন্তু তাঁকে অন্ধ অনুসরণ করবেন না। নেতৃত্ববলে তাঁর সমস্ত আদেশ তাঁরা অনুসরণ করবেন না। আবার এমন কথাও উঠেছে, যদি বিজেপি বিরোধিতা করতে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার দরকার হয়, তবে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলা হোক সর্বাগ্রে। প্রয়োজনে বিরোধী দলগুলিকে এক করে বৈঠক হোক। অর্থাৎ এখন থেকেই নেতৃত্ব নিয়ে আকচাআকচি শুরু হয়ে গেল বিরোধী দলগুলির মধ্যে।