অভিষেকরাই পাল্টা বিদ্ধ ‘বহিরাগত’ কাঁটায়, গোয়ায় তৃণমূল ছাড়ার হিড়িক ভোটের মুখে
অভিষেকরাই পাল্টা বিদ্ধ ‘বহিরাগত’ কাঁটায়, গোয়ায় তৃণমূল ছাড়ার হিড়িক ভোটের মুখে
বাংলার নির্বাচনে বিজেপিকে বারবার 'বহিরাগত' তোপে বিদ্ধ করেছে তৃণমূল। যে ট্রেন্ড তারা বাংলায় সেট করে দিয়েছে, এবার কা ভিনরাজ্যে তাদের পিছু ধাওয়া করেছে। গোয়া নির্বাচনে তেমনই 'বহিরাগত' আখ্যা জুটল তৃণমূলেরও। আর মমতা-অভিষেকদের বিরুদ্ধে সেই অস্ত্র প্রয়োগ করলেন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়কই।
তৃণমূলে যোগ দিয়ে নতুন ভোর আনার স্বপ্ন দেখেছিলেন যাঁরা
গোয়া নির্বাচনের আগে কলকাতায় এসে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেস-ত্যাগী বিধায়ক আলেক্সো রেজিনাল্ডো লরেঙ্কো। তিনি এরপর কংগ্রেসে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। এবার সেই তিনিই বলছেন, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া একটা ভুল ছিল। বহিরাগত তৃণমূলে যোগ দিয়ে নতুন ভোর আনার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে গোয়ায়।
আবেগের বশে তৃণমূলে যোগদান করা ভুল ছিল!
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার একদিন পরেই গোয়ার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা আলেক্সো রেজিনাল্ডো লরেঙ্কো বলেছিলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন দলে যোগদান করার সিদ্ধান্ত তাঁর মস্তবড় 'ভুল'। কেননা তৃণমূলে যোগদানের পর তিনি তাঁর সমর্থকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাননি। তাঁরা কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এরপর তিনি ভেবে দেখেন আবেগের বশে তৃণমূলে যোগদান করে তিনি ভুলই করেছেন।
গোয়ায় গিয়ে বহিরাগত খোঁচার মুখে পড়তে হচ্ছে তৃণমূলকেই
গোয়ায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর ভোট গণনা হবে ১০ মার্চ। তার আগে গোয়ার রাজনীতিতে ফের উলটপুরান ঘটতে চলেছে। যে তৃণমূল বাংলায় বিজেপিকে বহিরাগত খোঁচায় বিদ্ধ করেছিল, গোয়ায় গিয়ে এবার তাদেরকেই বহিরাগত খোঁচার মুখে পড়তে হচ্ছে। সোমবার পানাজিতে একটি সাংবাদিক বৈঠকে লরেঙ্কো কংগ্রেসে ফিরে আসার ইঙ্গিত দেন।
তৃণমূলের পদক্ষেপে বিজেপিরই সুবিধা হবে, বুঝেছেন দলত্যাগীরা
তিনি বলেন, আরব সাগর তীরবর্তী উপকূলীয় রাজ্য গোয়ায় একটি নতুন ভোর আনার জন্য তৃণমূল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং তৃণমূলের পদক্ষেপে বিজেপিরই সুবিধা হবে। তিনি তৃণমূলে গিয়ে ভুল করেছিলেন। লরেঙ্কো কুরটোরিমের বিধায়ক এবং গোয়া কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। ডিসেম্বরে তিনি পদত্যাগ করেন কংগ্রেস থেকে এবং তৃণমূলে যোগ দেন।
তৃণমূলের কার্যক্রম গোয়াতে বিজেপিকেই আমন্ত্রণ জানাবে
রবিবার তিনি কোনও কারণ না দেখিয়েই তৃণমূল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন যে তাঁর সমর্থকরা আশঙ্কা করছেন, একটি 'বহিরাগত' দল তৃণমূলে যোগদান করা ঠিক হয়নি। তৃণমূলের কার্যক্রম গোয়াতে বিজেপিকেই আমন্ত্রণ জানাবে এবং ভোট বিভক্ত করবে। সেই ভুল বুঝতে পেরে গোয়ায় বিজেপিকে আমন্ত্রণ জানাতে তৃণমূলে থাকতে পারি না।
মন-প্রাণ দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই
তিনি বলেন, "আমি অনেক বন্ধুদের, আমার পরিজন ও প্রিয় সমর্থকদের আহত করেছি তৃণমূলে যোগ দিয়ে। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের এবং যারা আমার সঙ্গে চিরকাল থেকেছে তাঁদেরও আঘাত করেছি।" তিনি আরও বলেন, "আমি জনগণের জন্য লড়াই করেছি। আমি তাদের সমস্যা বিধানসভায় উত্থাপন করেছি। আমি মন-প্রাণ দিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই আরও।
সমর্থকরা আমাকে আবার কংগ্রেসে ফিরে যেতে বলেছেন
তাহলে কোন পথে হাঁটবেন কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন বিধায়ক। ভবিষ্যত পদক্ষেপ সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে লরেঙ্কো বলেন, আমার সমর্থকরা আমাকে আবার কংগ্রেসে ফিরে যেতে বলেছেন। কংগ্রেস নেতা মাইকেল লোবোও আমাকে আবার কংগ্রেস পার্টিতে যোগ দিতে বলেছেন। আমার সমর্থখরা আমাকে যা বলবে আমি এবার থেকে তাই শুনব।
তৃণমূলে যোগদানের দুই মাস পরেই দলত্যাগ প্রাক্তন বিধায়কের
শুধু আলেক্সো রেজিনাল্ডো লরেঙ্কোই নয়, প্রাক্তন বিধায়ক লাভু মামলেদারও তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাৎপর্যপূর্ণ অভিযোগ করে দল ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, গোয়ানদের ধর্মীয় ভিত্তিতে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল পার্টি। তৃণমূলে যোগদানের দুই মাস পরে তিনি দল ছেড়ে দেন। তিনিও কংগ্রেসমুখী হয়েছেন ফের। ফলে ভোটের মুখে হাওয়া ঘুরতে চলেছে সৈকত-রাজ্যে।
গোয়ায় তৃণমূলকে এখনও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে চাইছে না বিজেপি
উল্লেখ্য, বাংলার নির্বাচনে তৃণমূল যে অস্ত্রে বিজেপিকে ঘায়েল করতে চেয়েছিল, এবার সেই অস্ত্রই তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হচ্ছে ভিনরাজ্য গোয়ায়। সেখানে তৃণমূলকে বলা হচ্ছে বহিরাগত। যদিও বিজেপি এখনও সেই অভিযোগ তোলেনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে। আসলে গোয়ায় তৃণমূলকে এখনও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে চাইছে না বিজেপি। তারা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছে কংগ্রেসকেই।
গোয়ার মানুষ কোনও তৃতীয় শক্তিকে আনবেন না
কংগ্রেসও বিধানসভা ভোটের মুখে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে লড়াই দেওযার চেষ্টা করছে। গোয়ার মানুষ বিজেপি শাসনের অবসান চায়, তারা কংগ্রেসের সঙ্গেই রয়েছেন বলে মনে করছেন কংগ্রেসের ভোট ম্যানেজাররা। তাই তারাই এবার বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসবে। গোয়ার মানুষ কোনও তৃতীয় শক্তিকে নিয়ে এসে বিজেপির সুবিধা করে দেবে না, এই বিশ্বাস রয়েছে কংগ্রেসের। আর তার প্রতিফলন শোনা যাচ্ছে কংগ্রেস ঘরওয়াপসি নেতাদের মুখেও।