পুলিশ খুনে অভিযুক্ত জম্মু-কাশ্মীরে আটক, যোগীর মন্তব্যে বিতর্ক
বুলন্দশহর-এর পুলিশ খুনের পর কেটে গিয়েছে ৭২ ঘণ্টা। কিন্তু এখনও অধরা এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তরা। এই পরিস্থিতি জল্পনা বাড়াল জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসা একটি তথ্য।
বুলন্দশহর-এর পুলিশ খুনের পর কেটে গিয়েছে ১০০ ঘণ্টার বেশি সময়। কিন্তু এখনও অধরা এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তরা। এই পরিস্থিতি জল্পনা বাড়াল জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসা একটি তথ্য। এতে দাবি করা হচ্ছে পুলিশ অফিসার সুবোধ সিং-এর হত্যার অন্যতম অভিযুক্ত সেনাকর্মী জিতু মালিক-কে আটক করা হয়েছে। তাঁকে শনিবারই উত্তর প্রদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে বলে এই সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
২২ বছরের সেনা জওয়ান জিতু মালিক-কে সোপরে ২২ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস আর্মি ক্যাম্প থেকে আটক করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, বুলন্দশহরের হিংসার ঘটনার সময় সেখানে বাড়িতে ছুটি কাটাচ্ছিলেন জিতু। ঘটনার পর তিনি সেনা ক্যাম্পে ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু একটি ভিডিও-তে দাবি করা হয় যে বুলন্দশহরের হিংসার ঘটনায় জিতু-ই গুলি চালিয়ে খুন করেছিল। পুলিশ ইনস্পেক্টর সুবোধ সিং এবং স্নাতক স্তরের পড়ুয়া সুমিত কুমার বুন্দেলশহরের এই হিংসায় একদল উত্তেজিত জনতার হাতে খুন হন। হত্যাকারীদের সঙ্গে বিশ্বহিন্দু পরিষদ ও আরএসএস যোগ রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বুন্দেলশহরে একটি মাঠের মধ্যে ছোট জঙ্গলে গরুর পচা-গলা দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। আর তার জেরেই দু-দুটি খুনের ঘটনা ঘটে যায়। পুলিশ তদন্তে জানিয়েছে, সুবোধ সিং ও সুমিত কুমার-এর খুনে একই রিভলবার ব্যবহার করা হয়েছিল। দু'জনকেই .৩২ বোরের গুলিতে খুন করা হয় বলে জানায় সিট। মনে করা হচ্ছে এই পিস্তলটি জিতু-র। যে আবার এলাকায় জিতু ফৌজি নামেও পরিচিত। পুলিশ এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করে এবং তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই নাকি জানা গিয়েছে জিতু-ই গুলি করে সুবোধ ও সুমিতকে খুন করে।
ময়না কদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, সুবোধ সিং-এর মাথার খুলি ফুঁড়ে গুলি ঢোকে এবং ভিতরে আটকে যায়। সুবোধের মাথার খুলিতে বুলেটের যে ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে তার মাপ ১.৫ সেন্টিমিটার বাই ১ সেন্টিমিটার। এমনকী এক্স-রে-তেও দেখা গিয়েছে সুবোধের মাথার ভিতরে গুলি আটকে আছে। এমনকী, সুবোধ সিং-এর শরীরে চারটি গভীর ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। এগুলি পাথর-এর আঘাত বলেই প্রাথমিক ময়না-তদন্তের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।
এদিকে, বুলন্দশহরের ঘটনা নিয়ে যখন উত্তাল দেশ ঠিক সে সময় শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বিতর্কিত মন্তব্য করে গোল বাধালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বুলন্দশহর-এর ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন। এমনকী, তাঁর রাজ্যে কোনও গণপিটুনির ঘটনাও ঘটে না বলে মন্তব্য করে বিতর্ক তৈরি করেছেন যোগী। বুলন্দশহরে যে ঘটনা ঘটেছে তা দুর্ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে দাবি তাঁর। এই ঘটনায় আইন আইনের কাজ করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড়া হবে না গোছরের মন্তব্য করলেও তাতে যে বিতর্ক থামবে না তা ভালোমতই বোঝা যাচ্ছে। কারণ, ইতিমধ্যেই যোগীর মন্তব্যকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বহু মানুষ।
এর আগে যোগী আদিত্যনাথ বুলন্দশহরের ঘটনাকে এক বড় চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে বৃহস্পতিবার খুন হওয়া পুলিশ অফিসার সুবোধ সিং-এর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকার পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি।
সুবোধ সিং গো-হিংসায় খুন হওয়া মহম্মদ আখলাক-এর ঘটনায় তদন্তকারী অফিসার ছিলেন। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট তিনি তৈরি করেছিলেন এবং এতে স্পষ্ট করেই জানিয়েছিলেন কীভাবে নৃশংসতার সঙ্গে মহম্মদ আখলাকের পরিবারের উপরে আক্রমণ শানিয়েছিল গো-রক্ষার উন্মাদরা। এরপর থেকেই নানা সময়ে নানা হুমকি-র সামনে পড়তে হয়েছিল ইনস্পেক্টর সুবোধ সিং।