আদিবাসীদের একজোট করে বৃহত্তর শক্তি হয়ে উঠছে টিপ্রা, ত্রিপুরার কিং-মেকার কি প্রদ্যোৎ
আদিবাসীদের একজোট করে বৃহত্তর শক্তি হয়ে উঠছে টিপ্রা, ত্রিপুরার কিং-মেকার কি প্রদ্যোৎ
বছর ঘুরলেই ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ত্রিপুরার আঞ্চলিক দল টিপ্রা মোথা সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। মূলত আদিবাসীভিত্তিক দল টিপ্রা। প্রাক্তন রাজবংশীয় প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেববর্মন রয়েছেন এই দলের নেতৃত্ব। তারা সম্প্রতি আগরতলায় বিশাল শক্তি প্রদর্শন করেছে। তাদের ক্যারিশ্মায় ক্রমেই ম্লান হচ্ছে বিজেপির শরিক আইপিএফটি।
২০২৩-এর নির্বাচনের আগে প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেববর্মন যে বিশাল শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন, সেখানে হামরো সিকিম পার্টির প্রধান ভারতীয় ফুটবল তারকা ভাইচুং ভুটিয়াও উপস্থিত ছিলেন। এই মঞ্চ থেকে প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেববর্মন আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য জাতীয় দলগুলিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার হয়ে গেলেও, শিক্ষক নেই, ডাক্তার নেই, হাসপাতাল নেই তাহলে কী হল এতদিনে?
তিনি বলেন, যে রাজ্যে হাজার হাজার বছর ধরে আদিবাসী রাজারা রাজত্ব করেছে, সেখানে আদিবাসীদের ভিক্ষা করতে হচ্ছে। তাঁরা আজ গরিব, হতদরিদ্র অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে। নিজেদের ভূমেই তাঁরা আজ ভিখারি। আদিবাসীদের মধ্যে ঐক্য নেই বলেই তাঁরা আজ বঞ্চিতের দলে। তাঁদের ঐক্যবদ্ধ করে অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহল মনে করছে, প্রাক্তন রাজবংশীয় এই নেতার আহ্বানে লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ সাড়া দিতে চলেছে। তিনি এবং তাঁর দল যে এবার ত্রিপুরার রাজনীতিতে কিং-মেকারের ভূমিকা নিতে চলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এবার ত্রিপুরায় প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেববর্মনের নেতৃত্বে জেগে উঠেছেন আদিবাসীরা। তাই আদিবাসীরা আজ এক মঞ্চে এসে চলো পাল্টাই স্লোগান তুলছেন।
প্রদ্যোৎ দেববর্মন এদিন টিপ্রাল্যান্ডের দাবিতেও সরব হয়েছিলেন। তিনি বলেন, আপনাদের টিপ্রাল্যান্ড চাই। আপনাদের দাবির সমর্থনে কেউ থাকুক বা না থাকুক জানবেন, আপনাদের সঙ্গে আছে এই রাজ পরিবার। আমরা সমস্ত জনগণকে ভালোবাসি। ইতিহাস তার সাক্ষী। আমরা সস্তার রাজনীতি পছন্দ করি না, আমরা লড়াই করি মানুষের জন্য, বঞ্চিতের দলে যাঁরা তাঁদের অধিকারের জন্য।
গত বছর ট্রিপা ত্রিপুরা উপজাতীয় অঞ্চল স্বায়ত্বশাসিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে জিতেছে। এই কাউন্সিলের অধীনে রয়েছে ত্রিপুরার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা। আর এই এলাকার ৯০ শতাংশ আদিবাসী। কাউন্সিল এলাকায় রয়েছে ২০টি বিধানসভা কেন্দ্র। টিপ্রা এবার এই ২০টি আসন-সহ ৬০টির মধ্যে ৪৫টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করেছে। মোথা আদিবাসী উপজাতি একটি পৃথক রাজ্যের পক্ষে।
২০২৩-এর ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের প্রাক্তনমন্ত্রী মেভারকুমার জামাতিয়া বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করেন। এর ফলে বিজেপির শরিক আদিবাসী পিপলস ফ্রন্ট অফ ত্রিপুরা বা আইপিএফটি থেকে বিধায়কদের দলত্যাগ অব্যাহত রয়েছে। আর আইপিএফটির বিধায়করা বা নেতা-নেত্রীরা এখন যোগ দিচ্ছেন টিপ্রা মোথায়। এর আগে জামাতিয়ার স্ত্রী গীতা দেববর্মাও টিপ্রাতে যোগ দেন।
গত বছর থেকে তৃতীয় আইপিএফটি বিধায়ক হিসেবে পদত্যাগ করলেন জামতিয়া। তাঁকে নিয়ে বিজেপি-আইপিএফটি শাসক জোটের মোট সাতজন বিধায়ক পদত্যাগ করলেন। আইপিএফটির একাংশ টিপ্রার দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। স্বল্প দিনেই দল বহরে বাড়ছে। এবার নির্বাচনে টিপ্রা অন্যতম বড় শক্তি হয়ে উঠছে। সম্প্রতি বুরবা মোহন ত্রিপুরা বিধানসভা থেকে পদত্যাগ করে টিপ্রায় যোগ দেন।
বিজেপি ও আইপিএফটি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন একাধিক বিধায়ক। সুদীপ রায় বর্মন থেকে শুরু করে আশিস সাহা, আশিস দাস বিজেপি থেকে পদত্যাগ করেন। সুদীপ রায় বর্মন ও আশিস সাহা যোগ দেন কংগ্রেস, আর আশিস দাস তৃণমূলে। তারপর তৃণমূল কংগ্রেসও ছেড়ে দেন আশিস দাস। বিজেপির সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণেই তাঁরা পদত্যাগ করেন। এরপর সুদীপ রায় বর্মন উপনির্বাচনে জিতে কংগ্রেসের বিধায়ক নির্বাচিত হন। আশিস সাহা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান উপনির্বাচনে।
২০১৮ সালে ত্রিপুরায় আইপিএফটির সঙ্গে জোট করে ত্রিপুরায় সরকার গড়েছিল বিজেপি। বিজেপি সরকার গড়ার পর থেকেই একাংশ বেঁকে বসেছিল। সুদীপ রায় বর্মনের নেতৃত্বে বিদ্রোহও করে বসেন অনেকে। অনেক বিদ্রোহী এখনও রয়েছে বিজেপির মন্ত্রিসভায়। গত নির্বাচনে ৬০ সদস্যের ত্রিপুরায় বিজেপি ৩৬টি আসনে জয়ী হয়, শরিক আইপিএফটি পায় আটটি আসন আর ১৬টি আসনে বিজয়ী হয় সিপিএম।
ভোটের মুখে উধাও আপ প্রার্থী, ফিরে এসেই মনোনয়ন প্রত্যাহার, কী বললেন কেজরিওয়াল