গত সাত পুরুষ ধরে অসমে শিবলিঙ্গের পুজো করে চলেছে এই মুসলিম পরিবার
গত সাত পুরুষ ধরে অসমে শিবলিঙ্গের পুজো করে চলেছে এই মুসলিম পরিবার
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়েও সম্প্রীতির নজির দেখা গেল অসমে। এখানকার কামরূপ জেলায় রয়েছে বহু পুরনো এক কলাগাছ। যেখানে ধার্মিক মুসলিম রহমান পাঁচবার আজান পড়েন। কিন্তু বিস্ময়ের বিষয় হল মতি কাই বা হাজি মতিবার রহমান এর পাশাপাশি নিত্যদিন শিবলিঙ্গেরও পুজো দেন। হিন্দু ধর্মে ভগবান শিবের প্রতীক এই শিবলিঙ্গ। এখানে ফুল নিবেদন করে নিত্য পুজো করেন মতিবর। হিন্দু–মুসলিম ঘৃণার মধ্যেই অসমের রাজধানী দিশপুর সংলগ্ন রংমহল গ্রামে দেখা গেল সম্প্রীতির এক আশ্চর্য মিলন।
দিশপুর থেকে ৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত উত্তর গুয়াহাটির এই ভগবান শিবের মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব গত সাত পুরুষ ধরে সামলাচ্ছেন রহমান ও তাঁর পরিবার। প্রতিদিন ভোর পাঁচটার যখন তাণর পরিবারের সকলে ঘুমায় তখন রহমান উঠে নমাজ পড়ে। ৭৩ বছরের রহমান এরপর ঐতিহ্যময় 'বুড়ো গোসাইয়ের থান’ পরিস্কার করেন। এখানেই ভগবান শিবের পুজো হয়। গত পাঁচ দশক ধরে এই মন্দিরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁর পরিবার। রহমান তাঁর পূর্বপুরুষদের মতোই 'থান’ পরিস্কার করেন এবং সেখানে মোমবাতি জ্বালান। স্থানীয় গ্রামবাসীদের বিশ্বাস ভগবান শিব ওই থানে থাকেন। রহমান বলেন, 'বহু প্রজন্ম ধরে আমাদের পরিবার এই থানের দায়িত্বে রয়েছে। আমার বাবা তায়াব আলি ১৯৭৭ সালে আমাকে এই দায়িত্ব সঁপে দিয়ে যান। আমি তা গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করি এবং আমি এই সেবা করার মধ্য দিয়ে ভগবানের আর্শীবাদও পাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, মন্দিরের দায়িত্বের সপ্তম প্রজন্ম হলেন তিনি। রহমানের বিশ্বাস তাঁর পর তাঁর ছেলে এই দায়িত্ব পালন করবেন।
শিবের মন্দিরের দায়িত্বে মুসলিম পরিবার কেন? এ প্রসঙ্গে রহমান জানান, মন্দিরের দায়িত্ব নিয়ে লোকমুখে তাঁর পূর্বপুরুষদের কিছু কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। রহমানের পূর্বপুরুষ বারান শাহ শিবের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। এই জায়গার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাঁকেই দেওয়া হয়েছিল। রহমান বলেন, 'এই মন্দিরের দায়িত্ব আমাদের পরিবার থেকে প্রথম বরহানশাকে দেওয়া হয়েছিল। ভগবান শিব বরহানশায়ের কাছে এসে এই জায়গায় থাকতে চেয়েছিলেন। ভগবান শিব বলেছিলেন যে এখন থেকে এই জায়গার দায়িত্ব আমাদের পরিবারের। একমাত্র এই পরিবার ছাড়া অন্য কেউ শিবের সেবা করতে পারবে না। তখন থেকে আমাদের পরিবার এই থানের দায়িত্বে রয়েছে।’ রহমান আরও বলেন, 'আমরা ইসলামকে অনুসরণ করি এবং দিনে পাঁচবার নমাজ পড়ি। সেরকমই আমি রোজ এই থানে আসি এবং এটা পরিস্কার করে সেখানে মোমবাতি ও ধূপ জ্বালাই। এখানে কোনও মন্দির নেই। তবে মানুষ আসে এবং ভাঙ্গুরি নানার (ভগবান শিব) কাছে প্রার্থনা করেন, পুজো দেন। তিনি সবার প্রার্থনা শোনেন এবং তা পূরণও করেন।’ শ্রাবণ মাসে হিন্দু পুরোহিত এসে পুজো করেন এই থানে। জুন–জুলাই মাসে পুর্ণ্যার্থীদের ভিড় জমে এখানে। প্রত্যেক সোমবারও বাবার মাথায় জল ঢালতে আসেন সকলে। হিন্দুদের পাশাপাশি বহু মুসলিমরাও এখানে এসে ফল পেয়েছেন।
মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য ভক্তদের শরীরের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয় গরু, আজব রীতি মধ্যপ্রদেশে