সর্বত্র অনুসরণ করছেন তাঁরা, পাঞ্জাব পুরভোটের মুখে কৃষকদের ক্ষোভের মুখে রাজ্যের বিজেপি নেতারা
পাঞ্জাব পুরভোটের মুখে কৃষকদের ক্ষোভের মুখে রাজ্যের বিজেপি নেতারা
দিল্লি সীমান্তে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদের মধ্যেই পাঞ্জাবে এক সপ্তাহের মধ্যে পুর নির্বাচনের সূচনা হতে চলেছে। পাঞ্জাব পুর নির্বাচনের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি এবং জলন্ধরের বিজেপি শীর্ষ নেতা রমেশ শর্মা ইতিমধ্যেই সঙ্কটের মধ্যে। বিজেপি নেতারা বলেছেন, 'আমাদের সর্বত্র অনুসরণ করছেন প্রতিবাদী কৃষকরা।’
পাঞ্জাবে চলছে প্রতিবাদ–ধর্না
২০১৫ সালে শিরোমণি অকালি দল ও বিজেপি জোট পাঞ্জাবে পুর নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু এবার বিজেপির সঙ্গ ছেড়েছে তার শীর্ষ অংশীদাররা। এ বছরের নির্বাচনে বিজেপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনের জন্য প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না, পাঞ্জাবের বাকি অংশে এখনও হয়নি ভোটের প্রচার। দিল্লি সীমান্তে আন্দোলনকারী কৃ্ষকরা যখন কেন্দ্রের ওপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে চলেছে, পাঞ্জাবের বিজেপি নেতারা তখন ঘাবড়ে গিয়ে দেখেছেন কৃষকদের 'পাকাপাকি ধর্না' কাকে বলে। পাঞ্জাব সীমান্তে বাড়ির বাইরে ৩০ জনের বেশি কৃষক রয়েছেন, চারমাসের বেশি সময় অনিয়মে, দিনরাত এক করে একই দাবিতে অনড়, কৃষক সংগঠনের তৈরি করা তাঁবুতে ২০০ জনের বেশি কৃষক রাত কাটাচ্ছেন। প্রতিবাদ স্থানে রাখা ব্যানারগুলিতে লেখা, 'কালো' কৃষি আইন সংস্কার করা হোক, কেন কৃষকদের সন্ত্রাসবাদী বলা হচ্ছে এবং বলা হয়েছে, 'চলো সবাই দিল্লি যাই।' আশপাশে প্রতিবাদী কৃষকদের প্রতিবাদ স্থান থাকায় বিজেপির প্রচার সারতে সমস্যা হচ্ছে।
দল ছেড়েছেন বহু বিজেপি নেতা
এক শীর্ষ বিজেপি নেতা জানান, অনেক বিজেপি নেতা দল ত্যাগ করেছেন, যার মধ্যে জানুয়ারি মাসেই ২০ জন। এর মধ্যে রয়েছেন রাজ্যে দলের কোর কমিটির একমাত্র শিখ মুখ মলবিন্দর সিং কাঙ্গ। দলীয় কর্মীরা নিজেদের গাড়ি থেকে বিজেপির পতাকা সরিয়ে নিয়েছেন এবং বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে কৃষকদের আন্দোলনের পরিকল্পনা কী রয়েছে তা জেনে নিচ্ছেন। এক কথায় বলা চলে বেশ আতঙ্কে রয়েছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা।
২৬ জানুয়ারি দিল্লিতে কৃষকদের হিংসাত্মক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারা পাঞ্জাব জুড়ে তিরঙ্গা যাত্রার পরিকল্পনা করা হয়, সরকারের আশা ছিল এই যাত্রা কৃষকদের কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে নিয়ে আসবে এবং প্রতিবাদকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করবে। কিন্তু চিত্রটা পুরোপুরি উল্টে গিয়েছে। জলন্ধরের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি রমেশ শর্মা বলেন, 'আমাদের যেখানেই দেখছে প্রতিবাদকারীরা ঘেরাও করে ফেলছে।' সাঙ্গুর জেলার সুনাম এলাকার নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা শর্মা এর জন্য অবশ্য কংগ্রেসকে দায়ি করেছে। সুনামে বিজেপি গ্রামীণ সভাপতি ঋষিপাল খেরা ও দলের এক্সিকিউটিভ সদস্য বিনোদ গুপ্তার বাড়ির সামনে কৃষকদের জোরদার ধর্না চলছে।
পাঞ্জাব পুর নির্বাচন
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আটটি পৌর কর্পোরেশন এবং ১০৯ টি পৌরসভা পরিষদে ২,৩০৯টি আসনে আগামী ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। কৃষি আইন নিয়ে কৃষক আন্দোলনের আবহেই এই পুর নির্বাচন হওয়ার কথা। দীর্ঘকালের জোট অকালি দল এই কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে বিজেপির হাত ছেড়েছে অনেক আগেই। এই আইন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখলেও অকালি দলও এখন উত্তপ্ত অনুভব করছে। কৃষকদের প্রতিবাদ আবহে নির্বাচন হওয়ায় সাধারণ মানুষও রাজ্যের শাসক কংগ্রেসের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে। এ বিষয়কে আর একটু উস্কে দিয়েছে পাঞ্জাবের বিরোধী দল আম আদমি পার্টি।
কৃষকদের ক্ষোভের মুখে বিজেপির শীর্ষ নেতারা
বিজেপি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে রাজ্যের দলীয় সভাপতি অশ্বিনী শর্মা অক্টোবর থেকে প্রতিবাদের সম্মুখীন হয়ে চলেছেন। কাঙ্গ দল ছাড়ার পর পাঞ্জাব বিজেপির সবচেয়ে বড়ো মুখ হয়ে উঠেছিলেন হরজিৎ সিং গ্রেওয়াল, যিনি দলের প্যানেলের মধ্যে ছিলেন যাঁরা কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন, তিনিও কৃষকদের 'শহুরে নকশাল' বলার কারণে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে সামাজিকভাবে বয়কটের মুখোমুখি। ধনৌলা গ্রামের বাসিন্দা মহিন্দর সিং বলেন, 'গ্রেওয়ালের গ্রামের জমি কৃষিকাজের জন্য চুক্তিতে নেবেন না কেউ। আমরা তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেছি পুর নির্বাচনে লড়ব।' গত ১৮ জানুয়ারী, দিল্লি সীমান্তে কৃষকদের বিক্ষোভের নেতৃত্বে থাকা সংযুক্ত কৃষক মোর্চার আহ্বানে, ধনৌলা গ্রামে ও কাথেরা গ্রামে বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়, এর পাশাপাশি আটজন সদস্যের বিজেপি প্যানেলের চেয়ারম্যান সুরজিৎ কুমার জয়নির কৃষকদের সঙ্গে আলোচনাও করেন। প্রসঙ্গত, গ্রেওয়াল ও জয়নি ২৮ নভেম্বর থেকে তাঁদের বেশিরভাগ সময়টাই দিল্লিতে কাটিয়েছেন, কারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ তাঁদের কৃষক সংগঠনদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করার জন্য তলব করেছিলেন। ৫ জানুয়ারি এই দুই বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন এবং কৃষকদের আন্দোলনকে 'নেতৃত্ববিহীন' অ্যাখা দেন।
অভিষেকের 'বাপকে গিয়ে বল' এর জবাব কৈলাস দিলেন 'রাবণ' প্রসঙ্গ তুলে! তুঙ্গে রাজনৈতিক পারদ