করোনা ভ্রূকুটির মাঝেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে লাক্ষা দ্বীপ, নেই একটিও সংক্রমণের খবর
করোনার আক্রমণে জেরবার গোটা বিশ্ব। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১,২৫,০০০। এরই মধ্যে শান্তভাবে করোনাকে এড়িয়ে গিয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ। অন্যদিকে সিকিম ও নাগাল্যান্ড এমন দুই রাজ্য, যেখানেও খোঁজ পাওয়া যায়নি কোনও করোনা আক্রান্ত রোগীর।
পূর্ব পরিকল্পনাই সাফল্যের কারণ
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির স্বাস্থ্য অধিকর্তাদের মতে, লাক্ষাদ্বীপের ৬৪,০০০ অধিবাসী স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়ে কেরলের উপর নির্ভরশীল। মধ্য-মার্চ পর্যন্ত কেরল ও লাক্ষাদ্বীপের মধ্যে লেনদেন ও লোক আনাগোনা থাকা সত্ত্বেও করোনাকে এতদূর রুখে দেওয়া নিয়ে অবাক রাজ্যগুলির চিকিৎসক মহল। লাক্ষাদ্বীপের স্বাস্থ্যকর্তা ডঃ এস. সুন্দরাভাদিভেলু জানিয়েছেন, "আমরা অনেক আগে থেকেই ব্যবস্থা নিয়েছি। বিদেশি ও আঞ্চলিক পর্যটকদের আটক করে পরীক্ষা চলেছে। লাক্ষাদ্বীপের যেসকল বাসিন্দা ফিরতে চেয়েছেন তাঁদের প্রত্যেককে কোচি ও ম্যাঙ্গালোরে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হয়েছে। সকলেই নেগেটিভ প্রমাণিত হওয়ায় সবাইকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।" লাক্ষাদ্বীপের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম থেকেই প্রাণপণে মানুষকে করোনা সম্বন্ধে সচেতন করে গেছেন, ফলে কাজ হয়েছে দ্রুত। হঠাৎ সংক্রমণের ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে স্বাস্থ্য দল।
আশা ও অঙ্গনওয়ারী কর্মীরাও সমান অবদান রেখেছেন
ডঃ এস. সুন্দরাভাদিভেলু আরও জানিয়েছেন, "আশা ও অঙ্গনওয়ারী কর্মীরা প্রত্যেক বাড়িতে খোঁজ চালিয়েছেন। কেউ অসুস্থ বোধ করলে তৎক্ষণাৎ তাঁর নমুনা পরীক্ষার জন্য কেরলে পাঠানো হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত একজন আক্রান্তও ধরা পড়েননি।" পাশাপাশি সুরক্ষার কারণে রাজ্যগুলি থেকে ফেরা করোনা নেগেটিভ ও তাঁদের পরিবারবর্গকে ১৪দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
১১ দ্বীপে আগে থেকে কোয়ারানটাইন সেন্টারের ব্যবস্থা
পাশাপাশি কেন্দ্রের নির্দেশিকা ছাড়াও দ্বীপ গুলিতে এপ্রিলের প্রথম থেকেই বাড়তি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। দেশে সংক্রমণের শুরুতেই কাভারত্তিতে ইন্দিরা গান্ধী হাসপাতাল সংলগ্ন বিল্ডিংকে করোনা হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়। লাক্ষাদ্বীপের ১১টি বসবাসযোগ্য দ্বীপে কোয়ারানটাইন সেন্টার তৈরি হয় আগেভাগেই। সংক্রমণের সাথে লড়াইয়ে কেরলের সাফল্য প্রভাবিত করেছে লাক্ষাদ্বীপকেও। কেরলে মৃত্যুর হার মাত্র ১.৪৪%। কেরলের উপর স্বাস্থ্য নির্ভরতার ফলে লাক্ষাদ্বীপেও সংক্রমণ ছড়ায়নি বলে মনে করছেন অনেকে। লাক্ষাদ্বীপে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন (এনএইচএম)-এর প্রধান ডঃ কে. শামসুধীন কেরলের করোনা লড়াইকে সাফল্যের সিলমোহর দিয়েছেন।
লকডাউন পরবর্তী অবস্থার জন্য তৈরি লাক্ষাদ্বীপ
সূত্রের খিবর, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উঠে যেতে পারে লকডাউন। আর মূল-ভূখণ্ডে লাক্ষাদ্বীপবাসীর আনাগোনা শুরুর পূর্বেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। ডঃ এস. সুন্দরাভাদিভেলু জানান, "মূল-ভূখণ্ডে যাওয়ার বিষয়ে নিয়মাবলী তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে, করোনা ছাড়া অন্যান্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে জাহাজে যাবেন রোগীরা। মারাত্মক জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে রোগীকে চপার মারফত উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে কেরলে। ছাত্রছাত্রী এবং শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ই-জাগ্রথা পোর্টাল মারফত আবেদন জানাতে হবে। যদি তারা কেরল থেকেও একই পাস পায়, তবেই মূল-ভূখণ্ডে যেতে পারবেন তাঁরা।" তিনি আরও জানান, "লাক্ষাদ্বীপে যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হতেই হবে।"