৩৭০ ধারা বিলোপের দু'বছর পূর্তি, জম্মু ও কাশ্মীরে ৫ বড় পরিবর্তন
৩৭০ ধারা বিলোপের দু'বছর পূর্তি, জম্মু ও কাশ্মীরে ৫ বড় পরিবর্তন
অগাস্টের ৫ (august 5) তারিখ। ঠিক এই দিনেই দুবছর আগে ২০১৯-এ জম্মু ও কাশ্মীরকে (jammu and kashmir) দুভাগে ভাগ করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ তৈরি করা হয়েছিল। বাতিল করা হয়েছিল সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের সেই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের দিনে নজর করলে দেখা যাবে এলাকায় প্রভাব পড়েছে বেশ ভালই। বড় পরিবর্তনও হয়েছে।
বাইরের রাজ্যের লোকেরা জমি কিনতে পারবে
গতবছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় সরকার আইন পরিবর্তন করে কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের বাইরের লোকেদের সেখানে জমি কেনার প্রস্তাব রাখে। গেজেট নোটিফিকেশনে কেন্দ্রের তরফ থেকে জম্মও অ্যান্ড কাশ্মীর ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টের ১৭ নম্বর সেকশন থেকে রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কথাটি সরিয়ে দেয়। সেই সেকশনেই সেখানকার জমি নিয়ে বলা আছে। যদিও এই সংশোধনে কৃষি জমিকে অকৃষি কাজে যুক্ত ব্যক্তির হাতে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
আবাসিকের মর্যাদা
এই বছরের জুলাইয়ে সেখানকার অপর একটি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এতদিন পর্যন্ত স্থানীয় মহিলাদের বিয়ে করলেন তাঁদের স্বামীরা আবাসিকের মর্যাদা পেতেন না। কিন্তু আইন সংশোধনের ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের বাইরের কোনও পুরুষ সেখানকার মহিলাদের বিয়ে করলে, চাইলে তারা জম্মু ও কাশ্মীরের আবাসিকের মর্যাদা পাবেন। এছাড়াও তাঁরা জমি কিনতে পারবেন, সরকারি চাকরির জন্য আবেদনও করতে পারবেন। যেসব মানুষ গত ১৫ বছর সেখানে বাস করছেন, সেখানকার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাত বছর সেখানে পড়াশোনা করেছেন এবং দশম কিংবা দ্বাদশ শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়েছেন, তাঁরা এবং তাঁদের সন্তানরা সেখানে আবাসিকের মর্যাদা পাবেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের আলাদা পতাকা বাতিল
সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে শ্রীনগরে থাকা সচিবালয় থেকে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে রাজ্যের আলাদা যে পতাকা ছিল তা বাতিল করা হয়। গত ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে আলাদা পতাকা উত্তোলন করা হত।
যারা পাথর ছোঁড়ে, তাদের পাসপোর্টে সিকিউরিটি ছাড়পত্র নয়
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেখানে যারা পাথর ছোঁড়ার মতো ঘটনা কিংবা অন্য কোনও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তাদেরকে যেন পাসপোর্ট কিংবা অন্য সরকারি সুবিধার জন্য নিরাপত্তার ছাড়পত্র না দেওয়া হয়। এই আদেশ কার্যকর হয়েছে ৩১ জুলাই থেকে। বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা, পাথর ছোঁড়ার মতো ঘটনা, এবং অন্য কোনও বিদ্বেষমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, যা রাজ্যের নিরাপত্তার পক্ষে চ্যালেঞ্জের, তাদের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব নিতে বলা হয়েছে।
গুপকার অ্যালায়েন্স গঠন
দুবছর আগে ৫ অগাস্ট ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে কাশ্মীরের শয়ে শয়ে রাজনৈতিক নেতা এবং কর্মী, তাঁদের মধ্যে তিন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লা, এবংর তাঁর বাবা ফারুক আবদুল্লাকে আটক করা হয়েছিল। আবদুল্লাদের মুক্ত করা হয় ২০২০-র মার্চে। মেহবুবাকে মুক্তি দেওয়া হয় গত বছরের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। তারপর থেকেই এইসব নেতারা কাছাকাছি এসেছেন। পাশাপাশি কাশ্মীরের আরও চারটি রাজনৈতিক দলও কাছাকাছি এসেছে। তারা একসঙ্গে হয়ে এলাকার বিশেষ মর্যাদা ফেরানোর ব্যাপারে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।
নয়া কাশ্মীর গঠনে আশাবাদী অনেকেই
সরকারের দাবি ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে কাশ্মীরের উন্নয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। সেই উন্নয়নের ফল বাসিন্দারা পেতে শুরু করবেন। পাল্টা বিরোধীরা বলছে, কোনই উন্নয়ন হয়নি। তবে প্রশাসনের একটা মহল বলছে, করোনা মহামারী অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাওয়ার কাজে বাধা দিয়েছে। তবে সরকার জানিয়ে দিয়েছে উন্নয়নমূলক কাজ স্থগিত রাখা যাবে না। এর সঙ্গে যাঁরা ৩৭০ ধারা বাতিলের সমর্থক তাঁরা বলছেন উন্নয়নের জন্য ২ বছর সময় যথেষ্ট নয়। তাঁরা রোমের উদাহরণ টেনে বলেছেন, রোম একদিনে গড়ে ওঠেনি। গুপকার অ্যালায়েন্সের বিরোধীরা বলছেন, সেখানকার নির্দিষ্ট দুটি পরিবার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত। সেই কারণেই তাঁরা কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ফিরিয়ে আনার দাবি করছেন।
তবে যে পর্যটন শিল্পের ওপরে দাঁড়িয়েছিল কাশ্মীর প্রথমে ৩৭০ ধারা বিলোপের কারণে অস্থিরতা এবং তারপরে করোনা মহামারীর কারণে, তা ধাক্কা খেয়েছে। এ মধ্যেই সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ নতুন কিছু হওয়ার ব্যাপারে এখনও আশাবাদী।