বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে কর্নাটক আদালতের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ সুপ্রিম কোর্টের
বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে ভারতে বিতর্ক চিরকাল। একাধিক মামলাতেই বৈবাহিক ধর্ষণ সঠিক সুবিচার পায়নি। চলতি বছরের ২৩ মার্চ কর্নাটক হাইকোর্টে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণ অভিযোগ তুলে নেওয়ার আবেদন খারিজ করে দেয়, যেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও তার স্ত্রীকে যৌনদাসী করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল। মঙ্গলবার হাইকোর্টের সেই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
তদন্তের ওপর স্থগিতাদেশ
শুধু তাই নয়, দেশের প্রধান বিচারপতি এনভি রমানা ও বিচারপতি কৃষ্ণ মুরারি ও হিমা কোহলি অতিরিক্ত নগর ও দায়রা আদালতে মুলতুবি থাকা এফআইআরের তদন্তের ওপরও স্থগিতাদেশ জারি করেছে। এক সপ্তাহ পরে ফের এই মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
কর্নাটক হাইকোর্টের রায়
সুপ্রিম কোর্ট একক বিচারপতি এম নাগাপ্রসন্নের দেওয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে স্বামীর দায়ের করা আবেদনের শুনানি করছিল। প্রসঙ্গত, এ বছরের মার্চ মাসে বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কে গুরত্বপূর্ণ রায় দেয় কর্নাটক আদালত। এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জানায় বিয়ে মানেই, কেউ নৃশংস জন্তুর মতো আচরণ করবেন, এমনটা হতে পারে না। কর্নাটক হাইকোর্টের কাছে এক ব্যক্তি পিটিশন দাখিল করে তার ওপর আনা বৈবাহিক ধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে তার স্ত্রী ভারতীয় দণ্ড বিধির ৩৭৬ ধারায় ধর্ষণের মামলা দায়ের করেছিল। বুধবার ওই ব্যক্তির দায়ের করা পিটিশন খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এই রায় দেন বিচারপতি এম নাগাপ্রসন্ন। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমান মামলায় উল্লেখ রয়েছে যে কয়েক বছর একসঙ্গে থাকার পর দম্পতির সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়।
ধর্ষণের অভিযোগ
স্ত্রী ও সন্তানের ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের পর স্ত্রী অবশেষে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য অপরাধের ধারা ৫০৬ (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন), ৪৯৮এ (স্ত্রীয়ের ওপর নির্যাতন), ৩২৩ (ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করা), ৩৭৭ (অপ্রাকৃতিক অপরাধ) এবং পকসো আইনের ১০ ধারায় মামলা দায়ের করেছিলেন। বিশেষ আদালত স্বামীর বিরুদ্ধে ৩৭৬ ধারা, যা ধর্ষণের ধারা হিসাবে পরিচিত সেটাও লাঘু করে। অভিযুক্ত স্বামী হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় এবং তার ওপর থেকে ধর্ষণের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করে। হাইকোর্টের একক বিচারপতি স্বামীর আবেদন খারিজের সঙ্গে কিছু বিষয় পর্যবেক্ষণ করেন। কর্নাটক আদালতের মতে, বিয়ে কোনওভাবেই স্বামীকে স্ত্রীর ওপর শাসন করা বা তাঁকে জোর করার ক্ষমতা প্রদান করে না, করতে পারে না। বিয়ের অর্থ স্বামী তাঁর স্ত্রীয়ের শরীর, মন ও আত্মার ওপর অধিকার পেয়ে গেল এই ধরনের পুরনো চিন্তাভাবনার অবসান করা খুব জরুরি হয়ে গিয়েছে।
স্ত্রীর অমতে যৌন মিলন ধর্ষণের সমতুল্য
কর্নাটক হাইকোর্ট সেই সময় ব্যক্তির আবেদন খারিজ করে বলেছিল, 'স্বামী কখনই তাঁর স্ত্রীর অমতে তাঁকে যৌন হেনস্থার মত ঘৃণ্য কাজ করলে, তা অবশ্যই ধর্ষণের সমতুল। স্বামীর ওই আচরণের ফলে স্ত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল। মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি এই কাজ তাঁর শারীরিক স্বাস্থ্যতেও আঘাত করবে। এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ স্ত্রীর মনে গুরুতর ক্ষতের সৃষ্টি করবে। তাই আইন প্রণেতাদের নীরবতার কন্ঠস্বর অবশ্যই শোনা উচিৎ।'
আরও অভিযোগ রয়েছে স্ত্রীয়ের
জানা গিয়েছে, পুলিশ তদন্তের ভিত্তিতে যে চার্জশিট গঠন করেছে তাতে স্বামীর শয়তানি লালসার কথা উল্লেখ করেছে, যেখানে সে স্ত্রীকে মারধর বা নির্যাতন করে অথবা তাঁর মেয়েক মারধরের হুমকি দিয়ে অপ্রাকৃত যৌনতা ও যৌন মিলন করতে বাধ্য করত। দায়রা আদালতে এই মামলা যাওয়ার আগে স্ত্রী এও অভিযোগ করেছিল যে তাঁর ৯ বছরের কন্যার সামনেই অভিযুক্ত স্বামী তাঁর সঙ্গে যৌন মিলন করত। শুধু তাই নয় অভিযুক্ত স্বামী নিজের মেয়ের গোপনাঙ্গ স্পর্শ করত এবং মেয়ের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে যৌন কর্ম করত। তাই হাইকোর্ট এই মামলায় কারোর হস্তক্ষেপের পরোয়ানা না দিয়ে এটাকে বিচারযোগ্য বলে জানিয়েছিল। এই রায় এখন শীর্ষ আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।