হাইওয়ে-তে মহিলাদের ধর্ষণ আর খুন করাই ছিল তার নেশা, সেই 'সাইকো-কিলার' নিজেই আত্মঘাতী হল
হাইওয়ের উপরে জয়শঙ্কর ওরফে শঙ্কর অন্তত ২০জন মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করেছে। এটাই ছিল তার নেশা। পেশায় ট্রাক ড্রাইভার ছিল শঙ্কর। তামিলনাড়ুতে চলা ৩টি মামলায় তাঁর শাস্তি হয়েছিল।
এই কাহিনির সঙ্গে ২০০২ সালের 'রোড' ছবির বেশ মিল আছে। রামগোপাল ভার্মা পরিচালিত সেই ছবিতে এক দম্পতি সাইকোকিলারের পাল্লায় পড়ে প্রাণ হারাতে বসেছিল। অবশেষে অনেক কষ্টে তাঁরা বেঁচে ফেরে এবং সাইকোকিলার হিতচিকার বাবুর মৃত্যু হয়। অনেকটা 'রোড' সিনেমার সাইকো-কিলারের চরিত্রের সঙ্গে যেন মিলে যায় এম জয়শঙ্কর-এর চরিত্র।
হাইওয়ের উপরে জয়শঙ্কর ওরফে শঙ্কর অন্তত ২০জন মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করেছে। এটাই ছিল তার নেশা। পেশায় ট্রাক ড্রাইভার ছিল শঙ্কর। তামিলনাড়ুতে চলা ৩টি মামলায় তাঁর শাস্তি হয়েছিল। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে শুনানি চলছে আরও ১২টি মামলার। এরমধ্যে ন'টি মামলা তামিলনাড়ুতে। ৩টি মামলা কর্ণাটকে। সবকটি মামলা ধর্ষণ ও খুনের। কিন্তু, এহেন কুখ্যাত শঙ্কর নিজেই পারল না কারাগারের জীবনকে মেনে নিতে। হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৩৮ বছরের শঙ্করের। ২৭ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল প্রিজন-এ শেভিং ব্লেড দিয়ে নিজেই নিজের গলার নলি কেটে ফেলেছিল শঙ্কর।
মূলত তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকের হাইওয়েতে ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ত্রাস হয়ে উঠেছিল শঙ্কর। প্রথম দিকে শঙ্কর শুধুমাত্র হাইওয়ের উপরে ব্যবসা করা যৌন কর্মীদেরই নিশানা করত। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে যে কোনও মহিলাকেই সে নিশানা করতে শুরু করে।
তামিলনাড়ুর সালেম জেলার ইড়াপাড়ি-র কোনাসমুদ্রম গ্রামের ছেলে শঙ্কর। হাইওয়েতে ট্রাকের ড্রাইভারির করতে করতেই সে সাইকোকিলার হয়ে ওঠে। দিনের পর দিন সে বাড়িয়ে যেতে থাকে তার অপরাধের মাত্রা। ২০০৯ সালের অগাস্ট মাসে প্রথম সমক্ষে আসে শঙ্করের নাম। হাইওয়ের উপরে শঙ্কর ৩৯ বছরের এক মহিলা কনস্টেবলকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল। ২০০৯ সালের অক্টোবরে শঙ্কর ধরা পড়ে এবং তাকে কোয়েম্বাটোর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়। জেরার শঙ্কর জানায় তামিলনাড়ুর বুকে সে এমন আরও ১৩টি ধর্ষণ এবং খুন করেছে।
২০১১ সালে শঙ্কর কোয়াম্বাটোর বাস স্ট্যান্ড থেকে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় শঙ্করের পাহারায় থাকা এক কনস্টেবল পরে আত্মগ্লানিতে আত্মঘাতী হন।
তামিলনাড়ু থেকে শঙ্কর তার অপরাধের সাম্রাজ্য এবার কর্ণাটকে সরিয়ে নেয়। সেখানে হাইওয়েতে সে এবার মহিলাদের ধর্ষণ এবং খুন করতে শুরু করে। ২০১১ সালের ৫ মে শঙ্কর কর্ণাকের চিত্রদূর্গা এলাকার এলাগি গ্রামে ধরা পড়ে। সেখানে হাইওয়ের পাশে থাকা ক্ষেতে কর্মরত এক মহিলাকে শঙ্কর ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু, মহিলার চিৎকার শুনে স্বামী ছুটে আসেন। এরপর আরও বহু লোক জন ধাওয়া করে শঙ্করকে ধরে ফেলে। কর্ণাটক পুলিশের জেরায় বেরিয়ে আসে শঙ্করের কুকীর্তি। তামিলনাড়ুর পুলিশকেও শঙ্করের ধরা পড়ার বিষয়টি জানানো হয়।
এরপর ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে শঙ্কর বেঙ্গালুরুর সেন্ট্রাল প্রিজনেই বন্দি ছিল। কিন্তু, ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেল থেকে পালিয়ে যায় শঙ্কর। ৩০ ফুট পাঁচিল বেয়ে সে পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, যে দড়ি দিয়ে জেলের পাঁচিল টপকাচ্ছিল তা ছিঁড়ে যাওয়ায় সে জোরে মাটিতে গিয়ে পড়ে এবং শিরদাঁড়ায় গুরুতর আঘাত পায়। এই ঘটনায় পুলিশ পাসা নামে এক ব্যক্তিকে ধরে। এই পাসার সঙ্গে জেলের মধ্যেই হৃদতা হয়েছিল শঙ্করের। কিন্তু, শঙ্কর জেল থেকে পালানোর দিন কয়েক আগে পাসা ছাড়া পেয়েছিল। পুলিশ পাসাকে জেরা করে জানতে পারে শঙ্কর জেলের কাছেই রাস্তার ধারে একটি ঝুপড়িতে লুকিয়ে ছিল। পাসার কাছে সে একটি মোটরসাইকেলও চেয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পারে। জেল ভেঙে পালানোর দিন পাঁচেকের মাথায় পুলিশের হাতে ফের ধরা পড়ে যায় শঙ্কর।
পুলিশের দাবি ছিল শঙ্কর একবার হাইওয়েতে পৌঁছে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যেত। ফের ধরা পড়ে শঙ্কর নাকি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। শিরদাঁড়া ভেঙে আরও দুঃখী হয়েগিয়েছিল সে। এই মানসিক চাপ না সহ্য করতে পেরেই শঙ্কর নিজের নিজের গলার নলি কেটেছে বলে দাবি করছে পুলিশ।