সাধারণ মানুষের অর্থ নিয়ে নয়-ছয়! চিনে নিন পিএনবি জালিয়াতির নায়কদের
এই জালিয়াতিতে খলনায়ক হিসাবে উঠে এসেছে দুই নাম। একজন নীরব মোদী। অন্যজন মেহুল চোখসি। এই দু'জনেই হিরে-জহরত-এর ব্যবসায়ী। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে নীরব মোদীর ব্যবসা।
স্বাধীনতার পর এতবড় ব্যাঙ্ক দুর্নীতি দেখেনি ভারতবাসী। নোটবাতিল, জিএসটি-সহ নানা আর্থিক সংস্কারের মুখ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বারবার উচ্চস্বরে তাঁর এবং বিজেপি- সরকারের দাবি ছিল এতে কালো টাকার কারবারিদের থেকে শুরু করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাবু করা সহজ হবে। কিন্তু, নরেন্দ্র মোদী সরকারের দিকে একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিয়ে এখন দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ১১,৩০০ কোটি টাকার পিএনবি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি।
এই জালিয়াতিতে খলনায়ক হিসাবে উঠে এসেছে দুই নাম। একজন নীরব মোদী। অন্যজন মেহুল চোখসি। এই দু'জনেই হিরে-জহরত-এর ব্যবসায়ী। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে নীরব মোদীর ব্যবসা। মেহুল চোখসির গীতাঞ্জলি জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি দেশের হিরে-জহরত ব্যবসায় এক পরিচিত নাম। পিএনবিকাণ্ডে সিবিআই-এর জালে এখন একের পর এক রাঘববোয়াল। তাদের সামাজিক পরিচিতি থেকে আর্থিক অবস্থা সকলকেই অবাক করে দেবে। অবশ্যই এই জালিয়াতিকাণ্ডে জড়িয়েছে বেশকিছু ব্যাঙ্ক কর্মীর নাম। দেখে নেওয়া যাক এখন পর্যন্ত সিবিআই তদন্তে কারা অভিযুক্তদের তালিকায় এবং কাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হল।
নীরব মোদী
পিএনবি ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে মূল অভিযুক্ত। নীরব দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি নাকি এখন নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে জে ডবলু ম্যারিয়েট হোটেলের লাক্সারি স্যুইটে রয়েছেন। যার প্রাত্যহিক খরচ হল ৭৫ লক্ষ টাকা। তবে, মাঝে নীরব বেলজিয়ামে নিজের জন্মভিটেতে ঘুরে গিয়েছেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
মেহুল চোখসি
নীরব মোদীর মামা মেহুল গীতাঞ্জলি জেমস অ্যান্ড জুয়েলারির ম্যানেজিং ডিরেক্টর। মেহুলও সপরিবারের পলাতক। সন্দেহ করা হচ্ছে তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
গোকুনাথ শেট্টি, পিএনবি-র প্রাক্তন ডেপুটি ম্যানেজার
মুম্বইয়ে পিএনবি-র যে শাখা থেকে এই আর্থিক তচ্ছরূপের শিকড় ছড়িয়েছিল, সেই ব্র্যাডি হাউসে কাজ করতেন। ৭ বছর ধরে একই ব্রাঞ্চে ছিলেন তিনি। যা সাধারণত হয় না বলে দাবি পিএনবি-র পরিচালন পর্ষদের। অভিযোগ, গোকুলনাথের হাত ধরে মাত্র ৭ মাসে ৬৩টি জাল এলওইউ করিয়েছিলেন নীরব মোদী ও মেহুল চোখসি। পিএনবি-র নামের এই জাল এলওইউগুলি দিয়ে অন্য ব্য়াঙ্কগুলিকে ঋণের প্রতারণার জালে ফেলেছিলেন নীরব ও মেহুল। গোকুলনাথ ডেপুটি ম্যানেজার হিসাবে সম্প্রতি পিএনবি থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
রাজেশ জিন্দল, পিএনবি-র জেনারেল ম্যানেজার
পিএনবি-র এক উচ্চপদস্থ কর্তা। জেনারেল ম্য়ানেজার হিসাবে বর্তমানে দিল্লিতে পিএনবি-র হেড অফিসে পোস্টেড। ২০০৯ থেকে ১১ সাল পর্যন্ত মুম্বইয়ের ব্র্যাডি হাউসে পিএনবি ব্রাঞ্চের দায়িত্বে ছিলেন। অভিযোগ, তার আমলেই এলওইউ-গুলি হাতে পেয়েছিলেন নীরব ও মেহুল। আর জাল এলওইউ-গুলির পিছনে রাজেশেরও হাত ছিল বলে দাবি করেছে সিবিআই।
বেচু তিওয়ারি, যশবন্ত জোশী ও প্রফুল সওয়ান্ত, পিএনবি কর্মী
এই তিন জনেই মুম্বইয়ে পিএনবি তিন আলাদা আলাদা শাাখায় কাজ করেন। বেচু তিওয়ারি পিএনবি-র ফরেক্স ডিপার্টমেন্টের চিফ ম্যানেজার। যশবন্ত জোশী পিএনবি-র ফরেক্স ডিপার্টমেন্টের ফরেক্স বিভাগের স্কেল ২ ম্যানেজার এবং প্রফুল সওয়ান্ত পিএনবি-র এক্সপোর্ট ডিপার্টমেন্টের স্কেল-১ অফিসার।
বিপুল আম্বানি, নীরব মোদীর সংস্থার সিএফও
নীরব মোদীর সংস্থা ফায়ারস্টার-এ সিএফও বিপুল। সংস্থায় যাবতীয় আর্থিক লেনদেনে তাঁর অনুমোদন বাধ্যতামূলক। তাঁকে এড়িয়ে কোনও আর্থিক লেনদেন সম্ভব নয়। পিএনবি জালিয়াতিকাণ্ডে প্রথম থেকেই সন্দেহের তালিকায় ছিলেন বিপুল। শেষমেশ ২০ তারিখ রাতে সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হন মুকেশ আম্বানি, অনিল আম্বানিদের খুড়তুতো ভাই বিপুল।
কবিতা মানকিকর, নীরব মোদীর সংস্থা ফায়ারস্টার-এর উচ্চপদস্থ কর্মী
নীরব মোদীর সংস্থার এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং ফায়ারস্টার-এর তিন সংস্থার অথরাইজড সিগনেটারি। এই সংস্থাগুলি হল ডায়মন্ড আর ইউ এস, স্টেলার ডায়মন্ড, সোলার এক্সপোর্টস। কবিতাকেও ২০ তারিখ রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অর্জুন পাটিল, নীরব মোদীর সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্তা
ফায়াস্টার ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ। অর্জুন-কেও গ্রেফতার করেছে সিবিআই।
কপিল খাণ্ডেলওয়াল, মেহুল চোখসির সংস্থার কর্মী
মেহুল চোখসির গীতাঞ্জলি জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি ও নক্ষত্র ডায়মন্ড-এর চিফ সিএফও। ২০ তারিখ রাতে তাঁকেও গ্রেফতার করে সিবিআই।
নীতেন সাহায়, মেহুল চোখসির কাকা
গীতাঞ্জলি গ্রুপের ম্যানেজার মেহুলের হয়ে ব্যবসার দেখাশোনাও করতেন তিনি। ১৫ ফেব্রুয়ারি মেহুল এবং তাঁর তিন সংস্থার বিরুদ্ধে যে দ্বিতীয় অভিযোগ দায়ের হয়, তার ভিত্তিতেই নীতেন-কে গ্রেফতার করে সিবিআই।