ভারতে করোনা সংখ্যা পরিমিত, কিন্তু তা বিস্ফোরিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, জানিয়েছেন হু বিশেষজ্ঞ
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ভারতে বিস্ফোরিত নাও হতে পারত। কিন্তু হু–এর বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড–১৯ রুখতে মার্চ মাসে যে লকডাউন কার্যকর হয়েছিল তা আনলক হওয়া শুরু হতেই দেশে করোনা সংক্রমণ হু হু করে বাড়ার ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে।
তিন সপ্তাহে করোনা কেস দ্বিগুণ
শুক্রবার হু-এর স্বাস্থ্যের জরুরি প্রোগ্রামের নির্বাহি পরিচালক মাইকেল রায়ান জানিয়েছেন এই পর্যায়ে এসে তিন সপ্তাহে করোনা কেস দ্বিগুণ হচ্ছে। তাই এই মহামারির সফর অতটা তাৎপর্যপূর্ণ নয় তবে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি এর সঙ্গে এও জানিয়েছেন যে মহামারির প্রভাব দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন ধরনের এবং শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে মধ্যে তা পরিবর্তিত হয়।
লকডাউন উঠলে করোনা বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু ভারতই নয়, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সহ অন্য দেশগুলিতেও বড় মাপের জনসংখ্যা বাস করে। এই রোগটি বিস্ফোরিত নয় ঠিকই কিন্তু সেটা হওয়ার ঝুঁকি সবসময়ই রয়েছে বলে জানিয়েছেন রায়ান। বেশ কয়েকটি দেশে যেমনটি দেখা গিয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে রায়ান জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে এই রোগ সম্প্রদায়ের মধ্যে যেহেতু ছড়িয়ে পড়ে তাই যে কোনও সময় এটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতে। রায়ান জানান, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ভারতে দেশজুড়ে লকডাউনের কারণে সংক্রমণ ধীরগতিতে হয়েছে কিন্তু দেশ পুনরায় নিজের ছন্দে ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই সংক্রমণ বাড়তে দেরি হবে না। ভারতে লকডাউনের প্রভাবের ফলে সংক্রমণের হার কিছুটা কম হলেও অন্য বড় দেশগুলির মতো ভারতও লকডাউন তোলার পর মানুষ ফের চলাচল শুরু করবে এবং ফের সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি থেকে যাবে।
ইতালিকে অতিক্রম ভারতের
রায়ান জানিয়েছেন, ভারতে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সমস্যা রয়েছে, এছাড়াও শহরের ঘন জনসংখ্যা এবং বাস্তব এটাই যে অনেক শ্রমিকের কাছেই কাজে যাওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে এটা বড় সমস্যাই বটে। ভারত এখন ইতালিকে পেরিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে ষষ্ঠস্থানে উঠে এসেছে। শনিবার ভারতে একদিনের মধ্যে করোনা কেস ধরা পড়েছে ৯,৮৮৭ এবং ২৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ২,৩৬,৬৫৭ ও মৃত্যু বেড়ে ৬,৬৪২টি। ভারতে লকডাউন প্রথম শুরু হয় ২৫ মার্চ ২১ দিনের জন্য। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ের লকডাউন ১৫ এপ্রিল থেকে শুরু করে ১৯ দিনের জন্য চলে ও শেষ হয় ৩ মে। তৃতীয় পর্যায়ের লকডাউন ছিল ১৪ দিনের জন্য যা ১৭ মে শেষ হয়। চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউন ৩১ মে শেষ হয়েছে। ২৪ মার্চ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১২। কন্টেইনমেন্ট জোনে লকডাউন এখনও জারি রয়েছে যা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। যদিও ৮ জুন থেকে কিছু ক্ষেত্রে স্বস্তি দিয়েচে সরকার তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে কড়াভাবে।
ভারতে করোনা সংখ্যা এখনও পরিমিত
হু-এর প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্যা স্বামীনাথন জানিয়েছেন ভারতে এখন ২ লক্ষের বেশি করোনা কেস রয়েছে। দেশের জনসংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন, সংখ্যাটা শুনতে অনেক বেশি হলেও তা এখনও পরিমিত। তিনি জোর দিয়ে জানিয়েছেন যে ভারতের কাছে এখন গুরুত্বপূর্ণ হল করোনার বৃদ্ধির হার, দ্বিগুণ হওয়ার সময় ট্র্যাক করা এবং তা যেন কোনওভাবেই অবনতির দিকে না যায় সেদিকটা নিশ্চিত করা। তিনি জানিয়েছেন, ভারত একটি বিজাতীয় ও বিশাল দেশ, যেখানে বেশ কয়েকটি ঘনবসতিপূর্ণ শহর এবং কিছু গ্রামাঞ্চলে অনেক কম ঘনত্ব রয়েছে এবং বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং এটি কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের জন্য চ্যালেঞ্জ। স্বামীনাথন জানিয়েছেন যে লকডাউন ও নিষেধাজ্ঞা তোলার পর সব ধরনের সতর্কতা মেনে দেশবাসীকে চলতে হবে।