নিজেদেব দাবিতে অনড়, হিজাব খুলতে অস্বীকার কর্নাটকের মুসলিম পড়ুয়াদের
নিজেদেব দাবিতে অনড়, হিজাব খুলতে অস্বীকার কর্নাটকের মুসলিম পড়ুয়াদের
হিজাব বিতর্ক নিয়ে তেতে রয়েছে গোটা কর্নাটক রাজ্য। কর্নাটক হাইকোর্টের অন্তর্বতী আদেশে বলা হয়েছে যে রাজ্যে পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি খুলে দেওয়া হলেও সেখানে কোনও ধরনের ধর্মীয় পোশাক পরে আসতে পারবে না পড়ুয়ারা। সোমবার থেকে রাজ্যে স্কুল–কলেজ খুলে যাওয়ার পরই নতুন করে এই হিজাব বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। হিজাব খুলে তবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতর প্রবেশ করতে হবে এই নির্দেশ পাওয়ার পরই পড়ুয়াদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বুধবার দক্ষিণ কন্নড় জেলার কলেজগুলি পুনরায় খোলার পর ৫০ জনের বেশি পড়ুয়া হিজাব (স্কার্ফ) খুলতে অস্বীকার করায় তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ক্লাস বয়কট ৫০ জন পড়ুয়ার
শহরের বাইরে থাকা পম্পেই ডিগ্রি কলেজের ২০ জন পড়ুয়া, ১৫ জন ছাত্রী মুলকির ফার্স্ট-গ্রেড সরকারি ডিগ্রি কলেজের, বিটলার ফার্স্ট-গ্রেড সরকারি কলেজের ১১ জন পড়ুয়া, সুল্লিয়ার নেহেরু মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজের ৯ জন পড়ুয়া, কাবুর ও কার স্ট্রীটের সরকারি কলেজের ২ জন পড়ুয়াদের কলেজের অধ্যক্ষ তাঁদের হিজাব খুলতে বলার জন্য তাঁরা ক্লাস বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়।
পড়ুয়াদের ক্ষোভ
মুসলিম ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন যে হাইকোর্টের অন্তর্বতী আদেশের আগে তাঁরা হেডস্কার্ফ পরেই ক্লাসে যেতেন। অন্যদিকে, মুডিপু কলেজের ২২ জন ছাত্রী, মন্টেপাদাভু কলেজ, মহাবীর ও ইন্দিরানগর কলেজের ১১ জন পড়ুয়াকে তাঁদের অধ্যক্ষরা অনুরোধ করেন যে তাঁরা যেন লেডিস রুমে গিয়ে হেডস্কার্ফ খুলে ক্লাসে প্রবেশ করেন। প্রি ইউনিভার্সিটি এডুকেশনের জেলার ডেপুটি ডিরেক্টর (ডিডিপিইউই) জয়ন্ন জানান যে তাঁর কাছে পড়ুয়াদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার কোনও রিপোর্ট নেই।
হাইকোর্টের আদেশকে ভুল ব্যাখা করা হয়েছে
যদিও এসডিপিআই রাজ্য সভাপতি আবদুল মাজিদ মাইসুরু হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী আদেশের ভুল ব্যাখ্যা করার জন্য শিক্ষা ও স্বরাষ্ট্র দফতরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ তুলে বলেছেন, 'হাইকোর্টের অন্তর্বতী আদেশে বলা হয়েছে যে প্রি-ইউনির্ভাসিটি কলেজে হিজাবের অনুমতি নেই যেখানে উন্নয়ন কমিটিগুলি একটি পোষাক কোড প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু ডেপুটি কমিশনার, ডিডিপিআই ও পুলিশ, এই আদেশটিকে না বুঝেই, স্কুল ও ডিগ্রি কলেজগুলির পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হিজাব খুলে ক্লাসে ঢোকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। এসডিপিআই-এর সম্পাদক ভাস্কর প্রসাদকে, শিক্ষার চেয়ে ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে হিজাবকে সংঘ পরিবারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ হিসাবে সমতুল্য করা হচ্ছে। প্রসাদ এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'আজকে পড়ুয়ারা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে শিক্ষার অর্থ তাদের ক্ষমতায়ন করা, তারা হিজাব পরিধানকে ঘিরে বিধি-নিষেধের বিরোধিতা না করে বরং শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিক।'
হিজাব বিতর্কের আগুনে কারা ঘি দিয়েছে
হিজাব বিতর্ক যে এসডিপিআই ও বিজেপির মস্তিষ্কপ্রসূত এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাজিদ ও প্রসাদ দু'জনেই। এসডিপিআই পড়ুয়াদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে এতটা নীচু হওয়ায় তারা বিশ্বাসী নয়। তাঁরা সবসময় তর্ক-বিতর্কে যেতে প্রস্তুত এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রসাদ বিজেপির দিকে আঙুল তুলে যদিও বলেছেন যে ক্লাসরুমে ধর্মকে এনে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করার পেছনে গেরুয়া শিবিরের হাত রয়েছে।
নিন্দায় সরব জাতীয় মহিলা ফ্রন্ট
জাতীয় মহিলা ফ্রন্ট জেলা প্রেসিডেন্ট জুলাইকা বাজপি আদালতের অন্তর্বতী আদেশকে ব্যবহার করে মুসলিম সম্প্রদায়ের পড়ুয়া ও শিক্ষিকাদের হেনস্থা করার জন্য স্কুল ও পরিচালন কমিটির তীব্র নিন্দা করেন। অন্যদিকে, এই ইস্যু নিয়ে কারাভালি মহিলা হাক্কুগালা বেদিকের সদস্যরা বলেছেন যে তারা সরকারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবেন।
উডুপি জেলায় পড়ুয়াদের ক্ষোভ
বুধবার উডুপি জেলার কুন্দাপুর এলাকার সব কলেজে প্রায় ২৩ জন পড়ুয়া ক্লাসে প্রবেশ করেননি। একটি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে, সিআরপিসির ১৪৪ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ ২০০ মিটার ব্যাসার্ধ পর্যন্ত কলেজের চারপাশ আটকে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, উডুপির এমজিএম কলেজের ম্যানেজমেন্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে, যাতে কলেজগুলি পুনরায় খোলার ফলে আরও একবার সংঘর্ষ না হয়। অনলাইনে কলেজের সব ক্লাস হবে।
প্রতীকী ছবি