পাঁচ দশক ধরে প্রজ্জ্বলিত 'অমর জওয়ান জ্যোতি', জেনে নিন এই স্মারক সম্পর্কে
দেশের ঐতিহ্য 'অমর জওয়ান জ্যোতি'
'যো শহীদ হুয়ে হ্যায় উনকি জরা ইয়াদ করো কুরবানি' নছক গানের একটি লাইন মাত্র নয়। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারতের প্রকৃত ভাগ্য বিধাতা যদি ধরা হয় তাহলে তাঁরাই। কারণ একশ ত্রিশ কোটি ভারতবাসীকে সব রকম বিপদ থেকে রক্ষা করে থাকেন তাঁরা। যে কোনও বিপত্তি বা দুর্যোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশবাসীকে নতুন জীবন উপহার দেন। তাঁরা হলেন দেশের বীর সন্তান অর্থাৎ সেনা জওয়ানরা। শুধুমাত্র দেশের টানেই শত্রুদের ছোঁরা প্রতিটা বুলেট বুক পেতে নিজের শরীরে নিয়ে থাকেন তাঁরা। দেশকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন যেকোনও বিপদের মধ্যে। আর সেই সব সেনা এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে শহীদ হওয়া বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজধানী দিল্লিতে বিগত ৫০ বছর ধরে জ্বলছে 'অমর জওয়ান জ্যোতি'।
নিভে যাচ্ছে 'অমর জওয়ান জ্যোতি'
রাজধানীর বিখ্যাত ইন্ডিয়া গেটে গত ৫০ বছর ধরে জ্বলতে থাকা 'অমর জওয়ান জ্যোতি' নিভে যাচ্ছে ২১ জানুয়ারি, শুক্রবার, অর্থাৎ আজ। পাঁচ দশক ধরে জ্বলতে থাকা ভারতের ঐতিহ্য অবশেষে নিভিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একটি বিশেষ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ইন্ডিয়া গেট থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে জ্বলন্ত শিখার সঙ্গে এটিকে একীভূত করা হতে চলেছে।
'অমর জওয়ান জ্যোতি'র ইতিহাস
অমর জওয়ান জ্যোতি দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে নির্মিত একটি স্মৃতি সৌধ। যেখানে একটি মার্বেল পৃষ্ঠের উপর উল্টো দিক করে রাখা রাইফেলের উপর একটি সেনা হেলমেট ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা রয়েছে। আর ঠিক তার নীচে রয়েছে প্রজ্বলিত আগুনের শিখা। এর ইতিহাস ৫০ বছরের পুরনো। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এটি নির্মিত হয়েছিল। ১৯৭২ সালে প্রজাতন্ত্র দিবসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এটি উদ্বোধন করেছিলেন। আর সেই থেকে দেশের শৌর্য ও সেনাদের আত্মত্যাগের অন্যতম ধারক হিসেবে এটি প্রজ্বলিত রয়েছে। প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে এই 'অমর জওয়ান জ্যোতি'র সামনেই প্রথম শ্রদ্ধা জানানো হয় দেশের প্রতি।
১৯৭২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত অক্ষয় জ্যোতি
১৯৭২ সালে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী 'অমর জওয়ান জ্যোতি'র উদ্বোধন করার পর প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ করার আগে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিমান বাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, সেনাপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অমর জওয়ান জ্যোতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে দেশের জন্য শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন। প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি এলপিজি গ্যাস দ্বারা জ্বালানো হত। এরপর এটিকে জ্বালিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক গ্যাস।
২০২০ ও পরবর্তী সময়
কিন্তু এই প্রথা ভেঙ্গে ২০২০ সাল থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে ইন্ডিয়া গেটের পরিবর্তে জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে নতুন 'অমর জওয়ান জ্যোতি' নির্মাণ করা হয়েছে। এরই সঙ্গে এখন থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা স্টাফ প্রধান, সেনাপ্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমান বাহিনী প্রধানের সাথে যারা তাদের নিজ নিজ সেবা দিবসে এই স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবেন।
কেন নিভে যাচ্ছে এই অমর জ্যোতি
ইন্ডিয়া গেটের কাছে ৪০ একর জায়গার উপর তৈরি করা হয়েছে দিল্লির ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল। এখানে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে বিভিন্ন যুদ্ধ ও ঘটনায় শহীদ হওয়া ২৬ হাজার সেনার নাম লেখা হয়েছে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এটি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এতদিন পর্যন্ত শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য দেশে আলাদা কোনও জায়গা ছিল না, তাই অগত্যা ইন্ডিয়া গেটে রাখা হয়েছিল 'অমর জওয়ান জ্যোতি'। কিন্তু এখন 'ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল' তৈরি করার পড়ে এখানেই স্থান পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে 'অমর জওয়ান জ্যোতি'।
বীরদের নামের সঙ্গে অমর জ্যোতি
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে যে কেন খামকা রাজধানীর ঐতিহ্য আর এতদিনের প্রথা ভেঙে দিল্লি গেট থেকে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে নিয়ে জায়া হচ্ছে এই 'অমর জওয়ান জ্যোতি'। আসলে ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়ালে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধে বা অন্যান্য মিশনে শহীদ হওয়া সৈনিকদের নাম লেখা রয়েছে। যার ফলে এতদিন শুধু অজানা সৈনিকদের উদ্দেশ্য করে সম্মান জানানো হত 'অমর জওয়ান জ্যোতি'তে। কিন্তু এবার থেকে দেশের শহীদ অ বীর সেনাদের নাম ও পরিচয় সম্পর্কেও অবগত হতে পারবেন সবাই। ফলে এর গুরুত্ব আরও বেশি বৃদ্ধি পেল বলেই মনে করছেন অয়াকিবহালমহলের একাংশ।
ইন্ডিয়া গেটের অমর জওয়ান জ্যোতি আদৌও নিভছে? কি বলছে সরকার জানুন