১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময় ডলার আর টাকার দাম ছিল সমান, সেই ইতিহাস জানেন কি!
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় ডলার আর টাকার দাম ছিল সমান, সেই ইতিহাস জানেন কি!
ভারতে সুরি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা শের শাহ সুরি রুপিয়া শব্দটির প্রচলন করেছিলেন৷ সেই থেকে শব্দটি দেশের মুদ্রা ব্যবস্থায় জড়িয়ে পড়ে। সেই ভারতীয় মুদ্রার দাম স্বাধীনতার সময় ছিল ডলারের সমান! ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট যদি আপনি এক ডলার কিনতে চাইতেন, তাহলে আপনাকে দিতে হত তখনকার মূল্যের ১ টাকা। সেই দাম এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৭০-এর ওপর। মাঝে মাঝে ৭০-এর গণ্ডি অতিক্রম করে আরও দাম পড়ে টাকার।
ভারতীয় ইতিহাসে মুদ্রার দাম হ্রাস পায় কতবার?
ভারতীয় ইতিহাসে মুদ্রার দাম হ্রাস পায় বা ডিভ্যালু করা হয় মূলত তিনবার। মূলত দেশের ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট ঠিক করতেই এই ডিভ্যালুয়েশন করা হয়। যদি কোনও দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা হয়, তখন সেদেশ নিজেদের মুদ্রার দাম কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। সেভাবেই নির্ধারিত হয় এক্সচেঞ্জ রেট।
মুদ্রাবিনিময় হার কী
এক্সচেঞ্জ রেট কী? যে হারে এক দেশের মুদ্রা ব্যবহার করে কেউ অন্য দেশের মুদ্রা কিনতে পারে, সেই হারকেই এক্সচেঞ্জ রেট বলা হয়। যে বাজারে এই মুদ্রা বিনিময়, লেনদেন বা কেনাবেচা হয়, তাকে বলা হয় ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট বা বৈদেশিক মুদ্রাবিনিময় বাজার। মূলত তিন ধরনের মুদ্রাবিনিময় হার রয়েছে। সেগুলি হল, ফ্লোটিং, ফিক্সড এবং ম্যানেজড।
১৯৫০ ও ৬০-এর দশক
১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে স্থিতিশীল রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তবে নতুন দেশ হিসাবে ভারতের পক্ষে এই কাজটা এত সহজ ছিল না। দেশকে স্থিতিশীলতা দিতে বিদেশ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হন নেহরু। তাঁর সরকারের এহেন পদক্ষেপের জেরে ভারতীয় মুদ্রাকে ডিভ্যালু করতে হয়।
১৯৬৬
প্রথমবারের জন্য ভারতীয় মুদ্রাকে ডিভ্যালু করা হয় ১৯৬২ সালে চিনের সঙ্গে ও পরে পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৯৬৫ সালের যুদ্ধের পর, ১৯৬৬ সালে দেশে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি দেখা দেয়। ভারত সরকারের হাতে তখন টাকার আকাল দেখা দেয়। অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়াতে সেই সময় বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ নিচ্ছিল। সেই সময় টাকার দাম ডিভ্যালু করা হলে ১ ডলারের দাম হয়ে দাঁড়ায় ৭ টাকা।
১৯৭০-৮০-র দশক
১৯৭৩ সালে ওপেক গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি তেল উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়। যাতে বিপাকে পড়ে ভারত। তেল আমদানির ক্ষেত্রে বিল বাড়তে থাকে। সেই বিল চুকোতে টাকার দাম হ্রাস করতে বাধ্য হয় সরকার। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর বিদেশি বিনিয়োগ আসা বন্ধ হয়ে যায় দেশে। অর্থনীতিতে ধস নামা উপক্রম দেখা দেয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ফের টাকার দাম কমানো হয়। ১৯৯০ সালে গিয়ে তখন ১ ডলার কিনতে দরকার পড়ে ১৭.৫০ টাকা।
১৯৯১
১৯৯১ সালে দেশের অর্থনীতি তলানিতে এসে ঠেকে। দেশের রাজস্ব ঘাটতি গিয়ে দাঁড়ায় ৭.৮ শতাংশে। দেশের জিডিপির ৩৯ শতাংশ আমরা তখর ঋণ পরিষোধের কাজেই লাগাচ্ছিলাম। তখন ফের প্রয়োজন হয়ে পড়ে টাকার দাম কমানোর। তখন ১ ডলারের দাম হয় ২৪.৫৮ টাকা। এরপরে বিভিন্ন সময়ে টাকার দাম পড়তেই থাকে। আর আজকের দিনে ১ ডলারের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে।
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ব্রিটিশ মুক্ত ভারত! কিন্তু ১৯৪৭ সালে ১৫ই অগাস্ট গান্ধীজি কেন কলকাতায় ছিলেন